ঢ্যাঁড়শ (Okra farming) নানা ভাবে খাওয়া হয়৷ ভর্তা, ভাজি, তরকারিতে মূলত সবজি হিসেবেই এটি ব্যবহৃত হয়৷ ঢ্যাঁড়শের মধ্যে থাকা বিভিন্ন উপাদান আমাদের শরীরে হাড়ের গঠন মজবুত করে এবং তা ক্ষয় হওয়া থেকে রক্ষা করে। ঢ্যাঁড়শের ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এবং রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস করে। দেহে লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে৷ এছাড়া, দেহের খারাপ কোলেস্টরল কমাতেও এর অবদান উল্লেখযোগ্য৷ আজ আমরা জানব আধুনিক পদ্ধতিতে এর চাষ কীভাবে করা যায়।
মাটি (Soil Preparation) :
দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ ঢেঁড়শ চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। জল নিষ্কাশনের সুবিধা থাকলে এটেল মাটিতেও চাষ করা যায়।
জাত:
শাউনি, পারবনি কানি-, বারী ঢেঁড়শ, পুশা সাওয়ানী, পেন্টা গ্রীন, কাবুলী ডোয়ার্ফ, জাপানী প্যাসিফিক গ্রীন এসব ঢেঁড়শের চাষ উপযোগী জাত। শেষের দুটো জাত সারা বৎসর ব্যাপী চাষ করা চলে।
সময়:
সারা বছরই চাষ করা যায়। তবে সাধারণতঃ গ্রীষ্মকালে এর চাষ করা হয়। ফাল্গুন চৈত্র ও আশ্বিন-কার্তিক মাস বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।
বীজের পরিমাণ: প্রতি শতকে ২০ গ্রাম, হেক্টর প্রতি ৪- ৫ কেজি বীজ লাগে।
কৌশল হিসেবে বীজ আগে জলে ভিজিয়ে নিতে হবে। অনেক চাষি ভাইয়েরা বীজ বোনার সময় এ বিষয়টি খেয়াল রাখেন না। বীজ ভেজালে অঙ্কুরোদগমে সহজ হয় তাই ভিজিয়ে নেওয়া জরুরি।
বীজ বপন:
বীজ বোনার আগে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে নিতে হয়। গভীরভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে চাষের জমি তৈরি করতে হয়। মাটি থেকে সারির দুরত্ব হবে ৭৫ সেমি.। বীজ সারিতে ৪৫ সেমি. দূরে দূরে ২-৩ টি করে বীজ বুনতে হয়।
জাত অনুযায়ী চারা থেকে চারা এবং সারি থেকে সারির দুরত্ব ১৫ সেমি. কমানো বা বাড়ানো যেতে পারে। শীতকালে গাছ ছোট হয় বলে দূরত্ব কমানো যেতে পারে। চারা গজানোর পর প্রতি গর্তে একটি করে সুস্থ সবল চারা রেখে বাকী চারা গর্ত থেকে উঠিয়ে ফেলতে হবে।
সারের পরিমাণ না জানার কারণে অনেক চাষিদের ঢেঁড়স বাঁকা, কুঁকড়ে যাওয়া, খসখসে দাগ পড়ে। মাটির পুষ্টিগুণ ঠিক রাখা খুবই জরুরি।
সার প্রয়োগের নিয়ম:
জমি তৈরি করার সময় ইউরিয়া সার বাদে বাকি সব সার মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সার মেশানের ১০-১৫ দিন পর জমিতে ঢেঁড়শ বীজ বপন করতে হয়।
ইউরিয়া সার সমান দু‘কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। প্রথম কিস্তিতে চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর এবং ২ য় কিস্তিতে দিতে হবে চারা গজানোর ৪০-৫০ দিন পর।
পরিচর্যা:
নিড়ানী দিয়ে মাটির উপরিভাগ মাঝে মাঝে আলগা করে দিতে হবে। জমি সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। মাটির প্রকার ভেদ অনুযায়ী ১০/১২ দিন পর পর সেচ দেয়া প্রয়োজন। প্রতি কিস্তিতে সার প্রয়োগের পর জমিতে সেচ দিতে হবে।
পোকামাকড় :
ঢেঁড়শের ফল ছিদ্রকারী পোকাই সবচে বেশি ক্ষতি করে। এ ছাড়া জাব পোকা, সাদা মাছি, ছাতরা পোকা, লাল গান্ধি ইত্যাদিও ক্ষতি করে।
রোগ : হলদে শিরা স্বচ্ছতা ঢেঁড়শের প্রধান ক্ষতিকর রোগ। এ ছাড়া মোজেইক ও পাতায় দাগ রোগও দেখা যায়।
ফসল সংগ্রহ:
বীজ বোনার ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে এবং ফুল ফোটার ৩-৫ দিনের মধ্যে ফল আসা শুরু হয়। জাত ভেদে ফল ৮-১০ সেমি. লম্বা হলেই সংগ্রহ করতে হয়।
আরও পড়ুন - Tuberose Disease Management - রজনীগন্ধা ফুলের বিভিন্ন রোগবালাই দমনের পদ্ধতি ও চাষের কৌশল
Share your comments