কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে ‘সুধা’ অর্থাৎ সুনিশ্চিত ধানচাষ পদ্ধতিতে আমন ধান চাষ করলে ধানের ফলন ১০-১৫% বাড়বে। তাঁদের বক্তব্য, বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা যেভাবে বাড়ছে, তাতে এই পদ্ধতিতে আমন ধান চাষ করলে চাষিরা অনেকটাই নিশ্চিন্ত হতে পারবেন। সুধা পদ্ধতিতে চাষের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। যেমন –
(১) বীজের পরিমাণ অনেক কম লাগে,
(২) বীজতলায় চারা অনেক দিন পর্যন্ত রেখে দেওয়া যায়।
(৩)চারা অনেক বেশি প্রতিকূল পরিস্থিতি সহনশীল হয়। রোগপোকা কম লাগে।
(৪) সাধারণ পদ্ধতির তুলনায় অন্তত ১ সপ্তাহ আগে ধান পাকে।
যেসব কৃষক ‘সুধা’ পদ্ধতিতে আমন ধান চাষ করতে পারছেন না, তাঁরা অন্তত ড্রাম সিডার পদ্ধতিতে বীজ রোপণ করতে পারেন বলে জানিয়েছেন কৃষি আধিকারিকরা। এতে বীজের পরিমাণ অনেকটাই কম লাগবে। শ্রমিকও লাগবে কম। ফলে চাষের খরচ অনেকটাই কমে যাবে। তবে সমতল জমি না হলে ড্রাম সিডার পদ্ধতিতে বীজ রোপণের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আমনে সুধা পদ্ধতিতে প্রতীক্ষা, শতাব্দী, লালস্বর্ণ, এমটিইউ-৭০২৯ প্রভৃতি জাতগুলি চাষ করা যেতে পারে। ১ লিটার জলে ১৭০ গ্রাম খাওয়ার লবণ দিয়ে বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ভেসে ওঠা বা আংশিক ভেসে ওঠা বীজ ফেলে দিতে হবে। যে বীজ ডুবে থাকবে, সেগুলিকে পরিষ্কার জলে ধুয়ে নিতে হবে। এর পর ২ শতাংশ জিঙ্ক সালফেট অর্থাৎ ১ লিটার জলে ২০ গ্রাম দ্রবণে ৩০ ঘণ্টা বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরে আবার পরিষ্কার জলে ধুয়ে নিতে হবে। কাদানো বীজতলার জন্য ওই বীজের কল বের করতে জাগ দিতে হবে। শুকনো বীজতলার জন্য ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে বীজ।
দীর্ঘ মেয়াদি জাতের ক্ষেত্রে মে মাসের শেষ থেকে জুনের শেষ পর্যন্ত চারা রোয়া করা যাবে। ৫ শতক বীজতলার জন্য তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি বীজ লাগবে। প্রতি বর্গ মিটারে ৭০০-র বেশি চারা যেন না থাকে। মধ্য ও স্বল্প মেয়াদি জাতের ক্ষেত্রে জুনের শেষ থেকে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত রোয়া করা যাবে। ৫ শতক বীজতলার জন্য সাড়ে তিন কেজি থেকে চার কেজি বীজ লাগবে। প্রতি বর্গমিটারে ৭০০-৮০০ চারা থাকবে। সুধা পদ্ধতিতে রোয়া করা ধান দেশীয় পদ্ধতির তুলনায় ৭-১০ দিন আগে পাকে। ফলে পরবর্তী ফসল আলু বা সর্ষে ঠিক সময়ে জমিতে বসানো যায়। বীজতলায় ছিপছিপে জল রাখতে হবে। বীজতলা থেকে চারা তোলার অন্তত সাতদিন আগে অন্তর্বাহী কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। বীজতলা থেকে চারা তোলার ৬ ঘণ্টার মধ্যে মূলজমিতে রোয়া করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি ধানের ক্ষেত্রে ৬০দিন, স্বল্প ও মধ্য মেয়াদি ধানের ক্ষেত্রে বীজতলায় ৩৫-৪০ দিন পর্যন্ত চারা রাখা যেতে পারে। বীজতলায় জৈবসারের সঙ্গে ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি, অ্যাজোটোব্যাক্টর ও পিএসবি যোগ করতে হবে। বিঘায় বীজ লাগে ১ কেজি। বীজতলা চারিয়ে দিতে হবে অর্থাৎ ফাঁকা ফাঁকা করে ফেলতে হবে। বীজতলায় অবশ্যই ফসফরাস ও জিঙ্ক, বোরণ দিতে হবে।
সুধা পদ্ধতিতে ধানের চারার শিকড়ের সংখ্যা বেশি হয়। চারা সুস্থ ও সবল হয়। মূল জমিতে চারা ৫ দিনের মধ্যে ধরে যায়। রোগপোকা কম হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার কৃষি দপ্তরের ব্লক টেকনোলজি ম্যানেজার অরুণাভ সামন্ত জানিয়েছেন, আমরা সুধা পদ্ধতিতে আমন চাষের সুপারিশ করছি। অন্যথায় ড্রাম সিডার পদ্ধতিতে মুড়ি অঙ্কুর বীজ বোনার জন্য বলছি কৃষকদের। সাধারণ পদ্ধতিতে এক একর জমিতে চাষের জন্য প্রায় ১৫ কেজির মতো বীজ লাগে। কিন্তু ড্রাম সিডারের সাহায্যে বুনলে ৪-৫ কেজি বীজে হয়ে যায়। ড্রাম সিডার প্লাস্টিকের চার মুখ বিশিষ্ট একটি যন্ত্র। এই যন্ত্রের সাহায্যে একজন কৃষক একদিনে সাড়ে সাত বিঘা জমিতে ধানের বীজ বুনতে পারবেন। প্রচলিত পদ্ধতিতে ধানের বীজ বা চারা বুনতে গেলে এক বিঘায় প্রায় ২২০০-২৪০০ টাকা খরচ হয়। সেখানে ড্রাম সিডার যন্ত্রটি ২০০ টাকায় ভাড়া পাওয়া যেতে পারে। তবে বীজ বোনার সময় বৃষ্টি হলে জমিতে ধান এলোমেলো হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ড্রাম সিডারে ধানের বীজ বুনতে সমতল জমি হলে সবসময় ভালো। তবে জমিতে ভালোভাবে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
তথ্যসূত্র: বর্তমান পত্রিকা
রুনা নাথ(runa@krishijagran.com)
Share your comments