
দ্বৈত চাষে ধানের সাথী হিসাবে নাইট্রোজেন সরবরাহকারী উদ্ভিদ
বিশ্বের গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং অনেক শীত প্রধান অঞ্চলেই ধান প্রধান খাদ্য। এই বিশাল চাহিদা পূরণের জন্য এখন কৃষকরা সম্পূর্ণরূপে রাসায়নিক সারের উপর নির্ভর করে। এর মধ্যে নাইট্রোজেন সরবরাহকারী সারের প্রয়োগ সবথেকে বেশী , যা মাটিত তথা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার ব্যবহারে সাধারনত গাছের কোষপ্রাচীর পাতলা হওয়ায় কাঠামোগত শক্তি কমে যায়। গাছের কান্ড স্বাভাবিকের চেয়ে লম্বা ও নরম হয় এবং কান্ডের চেয়ে পাতা বেশি ভারি হয়। ফলে গাছ সহযেই হেলে পড়ে। এ অবস্থায় গাছের প্রতিরোধশক্তি কমে যাওয়ায় রোগ ও পোকামাকড় সহজেই আক্রমণ করতে পারে। পাতার রং কালচে সবুজ হয়ে যায়। পাটের আঁশের মান কমে যায়। তাই জৈব উৎসের ব্যবহার করে রাসায়নিক সারের পরিমান কমানো যেতে পারে।
সাধারণত ধান চাষের আগে নাইট্রোজেন সরবরাহকারী উদ্ভিদের চাষ করে তাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে অথবা অন্যত্র চাষ করে সেখান থেকে তুলে এনে ধানের জমিতে মিশিয়ে দেওয়ার প্রথা চালু আছে (সবুজ সার)।
কিন্তু ধানের জমিতেই ধানের সাথী হিসেবে নাইট্রোজেন সরবরাহকারীর চাষ করে এবং নির্দিষ্ট সময় পর তাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে নাইট্রোজেন ঘাটতি মেটানোর যে নূতন পদ্ধতি সেটা নিয়েই এখানে আলোচনা করব। এক্ষেত্রে সিম্বগোত্রিয় উদ্ভিদ, অ্যাজোলা বা নীলাভ সবুজ শৈবাল কে নাইট্রোজেন সরবরাহকারী হিসাবে ধানের সাথেই চাষ করা হয়।

বাদামী সার:
এই পদ্ধতিতে সিম্বগোত্রিয় উদ্ভিদ (ধৈঞ্চা) কে ধানের সাথে চাষ করে নির্দিষ্ট সময়ে মাটির সথে মিশিয়ে নাইট্রোজেন ও অন্যান্য জৈব পদার্থ সরবরাহকারী করা হয়।
পদ্ধতি –
সারিতে বোনা আমন ধানের সাথে ধৈঞ্চা চাষ করা হয়। এর জন্য আলাদা করে জমি তৈরি বা আন্তঃকালিন কার্যের প্রয়োজন হয় না। সেই জন্য ধান রোয়ার দুই থেকে তিন দিন পর ধৈঞ্চার বীজ ছড়ানো হয় ২-৩ কেজি বিঘা প্রতি হারে। মোটামুটি ছয় সপ্তাহ পর যখন ধৈঞ্চা গাছগুলি ২-৩ ফুট লম্বা ও গাড় সবুজ বর্নের হয় তখন তাদের ২,৪-D সোডিয়াম লবন নামক আগাছানাশক স্প্রে করা হয়। ফলে সমগ্র গাছটি আস্তে আস্তে বাদামি রং ধারন করে এবং মাটিতে পড়তে থাকে। তাই একে বাদামি সার বলা হয়।
অ্যাজোলা :
অ্যাজোলা এক প্রকার জলজ ফার্ন। এদের পাতার বিন্যাসের মধ্যে এনাবিনা নামক এক প্রকার নীলাভ সবুজ শৈবাল পারস্পরিক উপকারী সিম্বিয়োটিক সম্পর্ক করে বসবাস করে। এই নীলাভ সবুজ শৈবালের নাইট্রোজেন বন্ধনকারী ক্ষমতা আছে, যা বিনিময় করে অ্যাজোলার সাথে।
পদ্ধতি দুটির কিছু উপযোগিতা:
- এরা নাইট্রোজেনের সাথে সাথে মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমান বৃদ্ধি করে। ফলে মাটির গঠন উন্নত হয় এবং জলধারন ক্ষমতা বাড়ে।
- উপস্থিত উদ্ভিদ খাদ্যগুলি ধীরে ধীরে মুক্ত হয় বলে ধান দীর্ঘ সময় ধরে পরিমানগত খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে।
- খরচ অত্যন্ত কম।
- আগাছার উপদ্রব অনেক কম হয়।
- ধানের ফলন শতকরা ৩৬-৩৮ ভাগ বৃদ্ধি হতে পারে।
অগ্নিভ হালদার,
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,
নদীয়া।
Share your comments