
ভেটিভার, বিন্না বা খসখস নামে পরিচিত এই ঘাসটি মাটির ভাঙন রোধের ক্ষমতা খুব বেশি। অস্ট্রেলিয়া, কম্বোডিয়া, চীন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, জিম্বাবুয়ে, পৃথিবীর নানা দেশে ব্যবহৃত জনপ্রিয় এই ঘাসের গুণের শেষ নেই। নদীর পার, পাহাড়ি ঢাল, গ্রামের রাস্তা ও মহাসড়ক এবং সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় ভেটিভার ঘাসের আবাদ ও ব্যবহারে ভাঙন রোধ হয়। এটি আবার সুগন্ধিও। তাই প্রসাধনীসহ অনেক জিনিসের কাঁচামাল হিসেবে এই ঘাস ব্যবহৃত হয়।
ভেটিভার ঘাসের মূল মাটির গভীরে চলে গিয়ে মাটিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। এর লম্বা শিকড় অল্প দিনেই মাটির নিচে জালের মতো ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় এ শিকড় চলে যায় ১০ থেকে ১৪ ফুট গভীরে। চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে মাটিতে বোনা ঘাস ঢাল রক্ষার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। প্রচন্ড ঠাণ্ডা কিংবা গরম সব পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে এ ঘাসের। মাইনাস ১৫ থেকে ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও বেঁচে থাকতে পারে। আবার অনাবৃষ্টিতে নেতিয়ে পড়ে না, জলে ডুবে থাকলেও পচে যায় না। আগুন, পোকামাকড় ও রোগের প্রকোপ থেকে রেহাই পাওয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন। আর লবণাক্ততায় টিকে থাকতে পারে বলে সমুদ্রতীরের এলাকায় বাঁধ রক্ষায় ভেটিভার সহজেই ব্যবহার করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, এ ঘাসের একটা শিকড়ের সহনশক্তি ইস্পাতের ছয় ভাগের এক ভাগ! অর্থাৎ ছয়টা শিকড় একসঙ্গে করলে এটি ইস্পাতের মতোই শক্তিশালী।
আরও পড়ুন নতুন তিন প্রকার উচ্চফলনশীল ধান যা কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করবে
কোন কোন দেশে মাইলের পর মাইল ভেটিভার ঘাসের চাষ হয় বাণিজ্যিকভাবে। সুঘ্রাণ ধরে রাখতে পারে এটি। তাই পশ্চিমা বিশ্বের নব্বই ভাগ সুগন্ধীতে ব্যবহৃত হয় ভেটিভারের নির্যাস। গায়ে মাখার ক্রিম, শেভিং ফোম, সাবান ও রূপচর্চার ফেসপ্যাক তৈরিতেও কাজে আসে ভেটিভার। প্রাচীন তামিল পুঁথিতে লিপিবদ্ধ ঘাসটির ঔষধি গুণের কথা। আজও এশিয়া ও আফ্রিকার কিছু এলাকায় ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় খসখস ঘাস।
যখন এয়ার কন্ডিসনার বা কুলারের প্রচলন হয়নি তখন ভারতে ব্যবহৃত হত ঘর ঠাণ্ডা রাখার উদ্দেশ্যে। ভেটিভার বা খসখসের শিকড় দিয়ে মাদুর বানিয়ে গ্রীষ্মকালে ঝুলিয়ে দেওয়া হত জানালা ও দরজায়। নিয়মিত বিরতিতে জল ছিটিয়ে সেগুলি ভেজা রাখা হত। বাতাস বইলে ঘর তো ঠাণ্ডা হতই, সেই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ত সুঘ্রাণ। ঠিক যেন প্রাকৃতিক এয়ার কন্ডিশনার কাম ফ্রেসনার। জল ঠাণ্ডা করতে পাতলা কাপড়ে ভেটিভার মুড়ে জলে রেখে দিলে জল ঠান্ডা হয়। এ ছাড়া কাগজ ও পার্টিক্যাল বোর্ড তৈরির কাঁচামালও হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। দড়ি, টুপি ও ঝুড়ি বানাতে কাজে লাগে এর শক্ত শিকড়। ব্যবহৃত হয় মাশরুম চাষে। এ ঘাসে জৈবসারও তৈরি হয়।
শহরের সৌন্দর্য বাড়াতে কৃত্রিম পদ্ধতি ব্যবহার না করে ভেটিভার ঘাস লাগানো যায়। যেমন, লেকের ধারে কংক্রিট না দিয়ে ভেটিভারের আবাদ করা যায়। রাস্তার ধারে বা ডিভাইডারে লাগানো যেতে পারে সবুজ ভেটিভার ঘাস। এতে একচিলতে সবুজে যেমন চোখ জুড়াবে, তেমনি শহরের বিষাক্ত বাতাস দূর করে ভেটিভারের সবুজ ঘাস ছড়িয়ে দেবে অক্সিজেন।
- রুনা নাথ (runa@krishijagran.com)
Share your comments