কৃষকবন্ধুরা পাট বিক্রি করে অধিক উপার্জন করতে চাইলে নজর রাখুন এই ছয়টি বিষয়ে

পাট ভারতের এক প্রাকৃতিক তন্তু ফসল। প্রধানত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা প্রায় ৮ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেন। ঘরোয়া প্রয়োজন মেটানো ব্যতীত কেবলমাত্র অর্থ উপার্জনের জন্য পাট চাষ হয় – তাই পাট অর্থকরী ফসল।

KJ Staff
KJ Staff
Jute

পাট ভারতের এক প্রাকৃতিক তন্তু ফসল। প্রধানত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা প্রায় ৮ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেন। ঘরোয়া প্রয়োজন মেটানো ব্যতীত কেবলমাত্র অর্থ উপার্জনের জন্য পাট চাষ হয় – তাই পাট অর্থকরী ফসল।

পশ্চিমবঙ্গে হুগলী, নদীয়া, হাওড়া, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণা, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, সহ উত্তরের মালদা, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে পাট চাষ হয়। মে-জুন-জুলাই মাসে পাট পচানো গন্ধ পাট চাষের জানান দেয়। আজও ভারতের অধিকাংশ চাষী গতানুগতিক পদ্ধতিতেই পাট চাষ করেন। আর তাই জাতীয় স্তরে এর উৎপাদনশীলতা বিঘা প্রতি মাত্র ৩-৩.৫ ক্যুইন্টাল (৮-১০ মণ)।

পাট চাষে পাট কাটা ও পাট পচানো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেই সমন্ধে বিস্তারিত জানা যাক -

পাট কাটা ও পচানো – সাধারণভাবে পাট কাটা হয় প্রায় ১১০-১২০ দিন পর। কাটার পর জমিতে ৩-৪ দিন ফেলে রাখলে সব পাতা ঝরে যায়। ধীরে বয়ে যাওয়া পরিষ্কার মিঠা জলে পাটের পচন খুব ভালো হয়। আয়রনযুক্ত বা কাদা জলে পাট পচানো উচিত নয়। পাট গাছ বান্ডিলে বেঁধে ইঁট, পাথর বা কাঠ ইত্যাদির ভার দিয়ে এক হাত জলের তলায় ডুবিয়ে রাখা দরকার। সম্পূর্ণ হলে গাছ বা কাঠি থেকে তন্তু ছাড়িয়ে নিয়ে বাঁশের কাঠামোতে রোদে রেখে শুকানো হয়। শুকনো তন্তু প্রয়োজন মত বান্ডিল বেঁধে বাজারে বিক্রি হয়। সাধারণভাবে পাটের তন্তু একটি পক্রিয়ার মাধ্যমে গাছ থেকে বার করা হয়। যথাযথ তাপমাত্রায় জলের জীবাণুর সাহায্যে পাটের টিস্যু (কলা) গুলি ক্রমাগত নরম করার পর তন্তুগুলি বের করফে নেওয়া হয়। ভালো পাট বের করার ক্ষেত্রে সময় গুরুত্বপূর্ণ। যদি পাট কম পচানো হয়, তাহলে ছাল ছাড়ানো সহজ হবে না। আর বেশী হলেও খারাপ, সেক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া শুধু গাছের কলা কে ভাঙাবে না, সাথে সাথে তন্তুর উপর আক্রমণ করেও তন্তু কে দুর্বল করে দেবে। 

Jute

এই পাট পচানো বা প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি দুটি পর্যায়ে ঘটে, ভৌত পর্যায় ও জৈব রসায়ন পর্যায়। ভৌত পর্যায় হল, যখঙ পাট কেটে জলে ভেজানো হয় এবং টিস্যুগুলি জল টেনে নিয়ে জলে দ্রবীভূত উপাদান তৈরী করে। আবার জৈব রাসায়নিক পর্যায়ে যে বস্তুগুলির (বাইকার্বোহাইড্রেটস, নাইট্রোজেনঘটিত যৌগ এবং বিভিন্ন প্রকার লবণ) নিষ্কমণ হয়, তা প্রক্রিয়ারত হলে মাইক্রোবস বা জীবাণুর সংখ্যা বহুগুণে বেড়ে যায়। প্রক্রিয়াকরণ শেষ হলে বান্ডিলগুলি জল থেকে বের করে এনে শারীরিক ক্ষমতা বলে একে একে তন্তুগুলি বার করা হয়। এছাড়াও পেটানো, ভাঙা ও ঝাঁকুনি দেওয়া পদ্ধতিতেও তন্তু নিষ্কাশন করা হয়। পাট চাষ ও পরবর্তী পর্যায়ে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে উৎপন্ন তন্তুর গুনগত মান নির্ভর করে যে বিষয়ের উপরে, সেগুলিকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া উচিত, কারণ এর উপরেই পাটের দাম নির্ভর করে। যেমন -

ক) গাছের বয়স – ১১০ দিনের বেশী হলে লিগনিন বেড়ে যায়, ফলে পচানো কঠিন হয়ে পড়ে।

খ) জলের মান – দূষণমুক্ত অল্প প্রবহমান জল ভালো পাট পচানোর জন্য আদর্শ। এ বিষয়ে বিশেষ অনীহা বা সমস্যা দেখা যায়।

গ) অম্লত্ব/ক্ষারত্ব – জলের পি.এইচ-এর মাত্রা ৬-৮ থাকা বাঞ্ছনীয়।

ঘ) তাপমাত্রা – সর্বাধিক তাপমাত্রা ৩৪-৩৬ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড, এই তাপমাত্রায় জীবাণুর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

ঙ) জলের গভীরতা – জীবাণুর কাজ ১৫ সেমি. গভীরে সর্বাধিক সম্পন্ন হয়। এই গভীরতায় প্রক্রিয়াকরণও ভালো হয় এবং ত্বরান্বিত হয়, ৩৫ সেমি. গভীরতা পর্যন্ত কাজ করে, কিন্তু তার নীচে জীবাণুর কর্মক্ষমতা কমে যায়। তাই পাটের বান্ডিল বেশী গভীরে ডোবানো উচিত নয়।

চ) অন্য গাছের উপস্থিতি – ধইঞ্চা বা সানহেম্প জাতীয় লেগুমিনাস সম্প্রদায়ভুক্ত গাছে নাইট্রোজেন বেশী থাকায় জীবাণুর কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

এছারা খরায় বা পচানোর জন্য জলের অভাব হলে কেন্দ্রীয় পাট ও সহজাত তন্তু গবেষণা সংস্থা, ব্যারাকপুর থেকে উদ্ভাবিত নতুন পদ্ধতিতে কম জলে পাট পচানো যায়। সেক্ষেত্রে বাইরে থেকে আলাদা করে ক্রাইজাফসোনা নামক জীবাণু ব্যবহার করলেও ভালোভাবে পাট পচানো যায়, আবার সময়ও কম লাগে।

পাট চাষে লাভের পরিমাণ বাড়াতে গেলে শুধু উৎপাদন বেশী করলেই হবে না, তাকে ভালোভাবে পচাতে হবে, যাতে পাটের গুনগত মান ভালো থাকে। কোন কোন বিষয়গুলির উপর পাটের উৎকর্ষতা নির্ধারণ করা হয়, অর্থাৎ পাট কতটা ভালো ঠিক করা হয়, সেই বিষয়গুলিও কৃষকবন্ধুদের জানতে হবে। তবেই তো তারা দাম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে পারবেন। টিডি-১ থেকে শুরু করে টিডি-৮ পর্যন্ত মোট ছয়টি গুনের উপর ভিত্তি করে পাটের শ্রেণীবিন্যাস করা হয়, যার উপর পাটের দাম নির্ভর করে। সেই ছয়টি গুন হল আঁশের শক্তি বা দৃঢ়তা, গোড়ছাল, ত্রুটি বা দোষ, আঁশের রঙ বা বর্ণ, আঁশের সূক্ষ্মতা ও আঁশের ঘনত্ব। এই গুনাগুন সম্পর্কে কৃষকবন্ধুদের ওয়াকিবহাল থাকতে হবে, তবেই পাট বিক্রির সময় উপযুক্ত দাম নির্ধারণে সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারবেন।

নিবন্ধ - ড. কিরনময় বাড়ৈ (বরিষ্ঠ বিজ্ঞানী ও প্রধান, হাওড়া কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র)

ফসলের রোগ দমনে এবং মান বৃদ্ধিতে ঠিক কীভাবে প্রয়োগ করতে হবে ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি, দেখে নিন বিস্তারিত

(Mid-August to mid-September profitable vegetable farming details) মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর- কোন সবজী চাষে কৃষক হবেন লাভবান? রইল সবজীর তালিকা

Published On: 03 September 2020, 02:14 PM English Summary: Want to earn more by selling jute? Keep these six things in mind

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters