তরমুজ একটি সুস্বাদু ও তৃষ্ণা নিবারক ফল | এটি দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও অসাধারণ | এই ফলের চাহিদা বাজারে বেশ ভালো রকমই থাকে | তরমুজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ লবন রয়েছে। তাই, কৃষকরা তরমুজ চাষ থেকে উপার্জনও করতে পারেন ভালো রকম | গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে তরমুজ বছরব্যাপী জন্মাতে পারে এবং এটি একটি উষ্ণ মৌসুমের ফসল এই নিবন্ধে আমরা গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ পদ্ধতি নিয়ে আলাচনা করেছি।
জাত
তরমুজ চাষের জন্য উন্নত জাত হল সুগার বেবি, অর্ক মানিক, আধারী। হাইব্রিড জাতের মধ্যে অমৃত, আমরুত, সুচিত্রা, সুগার বেলে, মধু, মিলন ও মোহিনী উল্লেখযোগ্য।
মাটি ও জলবায়ু
তরমুজ খুব গরম আবহাওয়া সহ্য করতে পারে না । ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় তরমুজের বীজগুলি ভালভাবে অঙ্কুরিত হয়।তরমুজের জন্য প্রচুর রোদ এবং শুকনো আবহাওয়া প্রয়োজন। মেঘাচ্ছন্ন বা অবিচ্ছিন্ন বৃষ্টিপাতের ফলে ফুল ও ফলের বৃদ্ধি হ্রাস পায়। যদি তরমুজগুলি বর্ষাকালে পাকে তবে মিষ্টির পরিমাণ পরিমাণ হ্রাস পায়। উর্বর দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী ।
বীজ বপন পদ্ধতি
আমাদের দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী সাধারণত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময় তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী। এছাড়াও আগাম কিছু জাত আছে যেগুলো নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত বপন করা যায়। তবে বীজ বোনার জন্য জানুয়ারির শেষ থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম পক্ষ সবচেয়ে ভালো । আগাম ফসল পাওয়ার ক্ষেত্রে জানুয়ারির শুরুতে বীজ বুনলে শীতের হাত থেকে কচি চারা রক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে।
জমি তৈরী
প্রয়োজন অনুযায়ী চাষ ও মই দিয়ে তরমুজ চাষের জমি তৈরি করতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী চাষ ও মই দিয়ে তরমুজ চাষের জমি তৈরি করতে হবে। জমি তৈরির পর মাদা তৈরি করে নিতে হবে। মাদাতে সার প্রয়োগের পরে চারা লাগাতে হবে।
আরও পড়ুনঃ Watermelon Farming: জেনে নিন তরমুজ চাষ পদ্ধতি ও সঠিক উপায়ে পরিচর্যা
পরিচর্যা
শুকনো মৌসুমে সেচ দেওয়া খুব প্রয়োজন । গাছের গোড়ায় জল জমতে দেওয়া যাবে না । প্রতিটি গাছে ৩ থেকে ৪ টির বেশি ফল রাখা যাবে না । সাধারণত ৪ টি শাখায় ৪ টি ফল রাখলেই যথেষ্ট। মূলত ৩০টি পাতার জন্য একটি মাত্র ফল রাখা উত্তম।
সার প্রয়োগ
এই চাষে জমি তৈরির সময় একর প্রতি চার টন জৈব সার ও ছ’কেজি অ্যাজোটোব্যাক্টর প্রয়োগ করা প্রয়োজন। উন্নত জাতের ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার হিসাবে একর প্রতি মূল সারে প্রায় ১৮ কেজি নাইট্রোজেন, ২৪ কেজি ফসফেট ও ১২ কেজি পটাসিয়াম দিতে হবে। হাইব্রিড জাতের ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার হিসাবে একর প্রতি মূলসারে ৩০ কেজি নাইট্রোজেন, ৪০ কেজি ফসফেট, ২০ কেজি পটাসিয়াম দেওয়া প্রয়োজন। বীজ রোপনের সাড়ে তিন মাস পর থেকেই উন্নত ও হাইব্রিড জাতে ফলন হতে শুরু করে। উন্নত জাতে একর প্রতি প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ কুইন্ট্যাল ও হাইব্রিডের ক্ষেত্রে একর প্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ কুইন্ট্যাল তরমুজ হবে।
আরও পড়ুনঃ ব্ল্যাক ডায়মন্ড আপেলঃ একটি বিরল এবং রহস্যময় ফল, দাম জানলে মাথায় পড়বে হাত
ফসল সংগ্রহ
তরমুজ সাধারণত জাত ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে পাকে। জাতভেদে বীজ বোপনের পর থেকে ৮০-১০০ দিন সময় লাগে। সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করলে ভালো জাতের তরমুজ থেকে প্রতি একরে ৪০-৪৫ টন ফলন পাওয়া যাবে।
Share your comments