কৃষিজাগরন ডেস্কঃ আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে বসতবাড়ির আনাচে-কানাচে ছায়াযুক্ত স্যাঁতসেঁতে জায়গায় কিংবা স্তূপীকৃত গোবর রাখার স্থানে ছাতার আকৃতির সাদা রংয়ের এক ধরনের ছত্রাক জন্মাতে দেখা যায়। একে আমরা ব্যাঙের ছাতা বলে অভিহিত করে থাকি। আগাছার মতো যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা এসব ছত্রাক খাবার উপযোগী নয়। অনুরূপ দেখতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষের মাধ্যমে যে ব্যাঙের ছাতা উৎপাদিত হয়, তা অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং বিশ্বে সবজি হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই ব্যাঙের ছাতাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘মাশরুম’।
১। মাশরুম চাষ অত্যন্ত লাভজনক। মাত্র ১০-১৫ দিনেই খাবার উপযোগী হয়। এটা চাষের জন্য আবাদী জমির প্রয়োজন হয় না। চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণও সহজলভ্য। গ্রীষ্মকালে যে কোনো চালা ঘরের নিচে এবং বারান্দায় চাষ করা যায়। বর্ষাকালে জল প্রবেশ করে না অথচ বাতাস চলাচলের সুবিধা আছে এমন ঘরে এর চাষ করা যায়। শীতকালে ভেজা স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার ঘরে সূর্যালোক ছাড়াই এর চাষ হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ স্মার্ট সিটি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ন পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রীর
২। বেকার যুবক-যুবতী এবং মহিলারা ঘরে বসেই এর চাষ করতে পারে। অন্যান্য সবজির তুলনায় বাজারে এর দাম অনেক বেশি, এজন্য এটা চাষ করা অত্যন্ত লাভজনক। সুতরাং অনেক বেকার ছেলে-মেয়েরা এই চাষ করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।
৩। ভারতবর্ষ তথা পশ্চিমবঙ্গে একটি বড়ো সংখ্যক মানুষ নিরামিশাষী। ডিম, মাছ, মাংস এবং দুধ খায় না, তাই বিকল্প সবজি হিসাবে এই মাশরুম ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪। মাশরুমের চাহিদা যেমন ভারতবর্ষে রয়েছে তেমনি এর বড়ো বাজার বিদেশে রয়েছে। যদি ভালো গুণমানের মাশরুম তৈরি করে বিদেশে পাঠানো যায় সেখান থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়।
আরও পড়ুনঃ মাটি পরীক্ষা কেন জরুরি ? জানুন মাটি পরীক্ষার উদ্দেশ্য
৫। কৃষিজাত বর্জ্য পদার্থের সম্পূর্ণ স্বাদ ব্যবহার করার জন্য মাশরুমের চাষ করা দরকার। কৃষিকাজে ব্যবহৃত বর্জ্য পদার্থ যেমন – খড়, গাছের শুকনো পাতা, ধানের কুঁড়ো, তুষ প্রভৃতি মাশরুম চাষের জন্য ব্যবহার করা হয়, যা গ্রামীন এলাকায় প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়। হিসাব করে দেখা গেছে যে, আমাদের দেশে ৪২০ মিলিয়ন টন কৃষিজ বর্জ্য পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। যা ব্যবহার করে ২১০ মিলিয়ন টন মাশরুম চাষ করা যেতে পারে এবং যা থেকে ১০ মিলিয়ন টন প্রোটিন আমরা পেতে পারি যা ভারতবর্ষের মতো দেশে অপুষ্টির অভাব পূরনে সাহায্য করতে পারে।
৬। মাশরুম চাষ পরিবেশ বান্ধব যা পর্যায়ক্রমে জৈবসার উৎপাদনে সাহায্য করে এবং পরিবেশ দূষণ রোধে সাহায্য করে। এই চাষের ফলে পরিবেশ দূষণ-এর পরিমাণ অনেক কমে যায়।
৭। গ্রামীন মহিলাদের আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে স্বনির্ভর গোষ্ঠির মাধ্যমে মাশরুম চাষ একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।
৮। এ ছাড়াও মাশরুম চাষের মাধ্যমে মাশরুমের আচার, চাটনি, বিস্কুট, শুকনো মাশরুম তৈরী করে প্যাকেটজাত পদ্ধতির মাধ্যমে অধিক লাভবান হতে পারে।
৯। মাশরুম-এর মাধ্যমে পুষ্টিজনিত সমস্যা অনেকটা দূর করা যেতে পারে।
Share your comments