পুকুর ডোবা খাল-বিলে অবহেলা, অনাদরে আর অযত্নে পড়ে থাকা দেশীয় ছোট ছোট শামুক এখন আর ফেলনা নয়, দেশি জাতের শামুক চাষও খুলে দিতে পারে বাণিজ্যিক সম্ভাবনার দুয়ার। শামুকের মাংস থেকে তৈরী হয় মাছের খাদ্য আর শামুক খোসা থেকে চুন আবার মাছ চাষেই ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া শামুকের মাংসে নানা পুষ্টিগুণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকায় শামুকের মাংস মানুষের খাবার হিসেবেও দারুন জনপ্রিয় হচ্ছে বিদেশে। আমাদের এখানেও এর প্রসার সম্ভব, এর চাষ করে উন্নমিত হতে পারেন চাষী সহজেই।
গ্রামে গঞ্জে অজস্র ছোট-বড় পরিত্যক্ত পুকুর ডোবায় দেখা মেলে শামুকের। শামুক চাষের মধ্য দিয়েও সৃষ্টি হতে পারে বহু কর্মসংস্থান, আসতে পারে জল-কৃষিতে সাফল্য। জলাশয়গুলিতে মাছ ও চিংড়ি ছাড়াও আরো অনেক বৈচিত্র্যপূর্ণ জলজ সম্পদ রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো শামুক। অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় অপ্রচলিত এসব জলজ প্রাণীর বাণিজ্যিক চাষের উদ্যোগ নিলে লাভবান হওয়া সম্ভব। গ্রীসে আপেল শামুকের চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন ওখানকার অনেক বেকার যুবক যুবতী। গ্রীসের মারিয়া ভ্লাচু মহিলা শামুক চাষী, ক্রিসটোস মাউসকোস পুরুষ চাষী, শামুকের চাষ করেন। উৎপাদনের ৭০% রপ্তানী করেন। তাই সঠিক পদ্ধতিতে শামুক উৎপাদনে জীবন-জীবিকার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।
শামুকের খোলস থেকে চুন তৈরি এবং এর মাংসল অংশ মাছ ও হাঁস-মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর শামুক খোসা বা খোলস থেকে তৈরি চুন আবার মাছ চাষেই ব্যবহার করা হয়। আবার শামুকের মাংস মানুষের খাদ্য হিসেবেও বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে। যেমন হলদিয়ার মাখন বাবুর বাজারে শামুক নিয়মিত বিক্রি হয়। এছাড়া অন্যন্য বাজারেও শামুকের মাংস বিক্রি হতে দেখা যায়।
আমরা খাদ্য হিসেবে শামুক গ্রহণে অভ্যস্ত না থাকলেও, অপ্রচলিত এ জলজ প্রাণীটি কিছু কিছু মানুষের কাছে খুব সুস্বাদু খাবার হিসেবেই বিবেচিত। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শামুকের মাংস খাদ্য হিসেবে প্রচলিত। আজকাল শামুকের মাংস অনেক বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষের পাতে এক উপাদেয় খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এমন কি কিছু বড় রেস্টুরেন্টেও শামুকের পদ পাওয়া যায়। তাছাড়া শামুকের মাংসে রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাই মধ্যবিত্ত শিক্ষিত মানুষেরও শামুক মাংস খাওয়ার প্রবনতা বাড়ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শামুকের মাংস খাদ্য হিসেবে প্রচলিত। তাই শামুকের রপ্তানীর গুরুত্ব বর্ধিত হওয়ার ব্যাপক সম্ভবনা রয়েছে।
শামুক চাষ সম্প্রসারণ ও সঠিক বাজারজাতকরণের মধ্য দিয়ে মাছ চাষে বিভিন্ন ইতিবাচক পরিবর্তন ও মাছ সম্পদের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। শামুক থেকে উৎপাদিত খাদ্য মাছ বেশি খায়, কারণ এ খাবার অনেকটাই প্রাকৃতিক। শামুকের তৈরি খাদ্য পাঙ্গাস, চিংড়ি, সিঙ্গি, মাগুর, কই ও তেলাপিয়া মাছের ভীষণ প্রিয়। আর অন্যন্য মাছ ও চিংড়ির চাষে মাছের খাদ্য উপাদানের অন্যতম উপকরন প্রোটিন, এই শামুকের মাংস থেকে পাওয়া যায়। শামুকের মাংসে ৩২% প্রোটিন থাকে। সুতরাং, একজন মাছ চাষী শামুক থেকে মাছের অন্যতম উপকরণ প্রোটিন উৎপাদন করতে পারেন। শামুকে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে না। যা মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। আবার শামুক থেকে খাদ্য তৈরি করলে মাছের খাবার বাবদ ব্যয় প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। এই প্রাকৃতিক খাদ্য গ্রহণে মাছ তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধিও পায় বেশি। এ ছাড়া শামুকের তৈরি খাবার খাওয়া মাছ স্বাদেও অনেকটা ভালো হয়। এ ছাড়া হাঁস কে নিয়মিত শামুক খাওয়ালে হাঁসের মাংস ও ডিমের উৎপাদন বাড়ে। এ কারণে মাছ ও হাঁস চাষ হয় অনেক লাভজনক।
শামুকের শরীরে রয়েছে প্রাকৃতিক জলশোধন ব্যবস্থা (ফিল্টার)। এরা ময়লাযুক্ত জল পান করে। ময়লাগুলো খাদ্য হিসেবে রেখে যে জলটা বাইরে ছাড়ে তা বিশুদ্ধ। মাছ চাষে শামুকের ব্যাপক ব্যবহার সাশ্রয়ী তেমনি পরিবেশবান্ধব। অনেকক্ষেত্রেই মাছ চাষের পাশাপাশি শামুক চাষে আলাদা খাবার দেয়ার দরকার হয় না। শামুক পুকুরে বায়োফিল্টার হিসেবে কাজ করে বলে জলের গুণাগুণ ভালো থাকে।
Image source - Google
Related ink - (Tharparkar cows) পশুপালকরা অতিরিক্ত আয়ের জন্য পালন করুন থারপারকার প্রজাতির গরু
Share your comments