দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং এই বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যাকে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করতে বেড়ে চলেছে দুধ, ডিম, মাংস বা প্রাণীজাত বিভিন্ন দ্রব্যের চাহিদা। এই কারনেই প্রাণীপালন (Cow Rearing) সুরক্ষিত ভবিষ্যত এবং স্বনির্ভর জীবিকা উপার্জনের জন্য উপযুক্ত।
উত্তরবঙ্গের গ্রামীণ মানুষেরা প্রাণীপালন বলতে মুখ্যভাবে গবাদি পশু (যেমন- গরু, ছাগল/ভেড়া), শূকর, হাঁস ও মুরগী পালনেই নিয়োজিত রয়েছেন। এখানে গরু পালনের বিভিন্ন দিকগুলি এবং এর মাধ্যমে আয় বাড়ানোর প্রসঙ্গগুলি নিয়ে আলোচনা করা হল।
আয়বৃদ্ধির জন্য গো-পালন (Cow rearing for income generation) -
গরু পালনের ক্ষেত্রে আমাদের মূল উদ্দেশ্য হল দুধ, দুধ ছাড়াও জ্বালানীর জন্য ব্যবহৃত হয় গোবর। এছাড়াও বলদের সাহায্যে মাঠে লাঙলও দেওয়া হয়। উত্তরবঙ্গের যে সকল চাষীভাই কৃষিকাজের সাথে যুক্ত আছেন, তারা সকলেরই গোপালনের সাথে যুক্ত। উত্তরবঙ্গে চাষীরা সাধারণতঃ দুই ধরনের গরু পালন করে থাকেন।
১। লোকাল/ দেশী গরুঃ এরা আকারে ও আয়তনে ছোট, কম দুধ উৎপাদনশীল হয়। দিনে ১-৩ কেজি।
২। ক্রসব্রিড/ সংকর গরু – এই পদ্ধতিতে দেশী গরুকে শাহিওয়াল ষাঁড়ের বীর্য দিয়ে কৃত্রিম ভাবে প্রজনিত করা হয়। এই জাতের গরুর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা বেশী। দিনে ৮-১০ কেজি।
আয় বৃদ্ধির জন্য সেক্ষেত্রে সংকর গাই পালন করাই চাষীদের ক্ষেত্রে লাভজনক, এতে নিজের পরিবারের দুধ পানের পরও উদ্বৃত্ত দুধ সে বাজারে বিক্রি করতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গে কোন নির্দিষ্ট জাতের গরু পাওয়া যায় না এবং সেই জন্য গ্রেডিং আপ বা উন্নতিকরণের মাধ্যমে দেশীয় গরুগুলিকে সংকর গরু হিসাবে পালন করতে হবে।
ভারতীয় গরুর প্রজাতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে খ্যাত রাঠি প্রজাতি। এই প্রজাতির পালন অনেকেই করে থাকেন। রাজস্থানের শুষ্ক অঞ্চল থেকে শুরু করে পাঞ্জাবের সীমান্ত, অনেক জায়গাতেই এই গরুর পালকে দেখা যায়। রাঠি প্রজাতির গরুকে রাজস্থানের কামধেনুও বলা হয়। এই প্রজাতির প্রতিপালন পশুপালকের জন্য যথেষ্ট লাভজনক।
রাঠি গরু থেকে দুধ উৎপাদন (Milk Production From Rathi Cow) –
রাঠি জাতটি দেশী গরুর একটি খুব সুন্দর জাত। এর সাহিওয়াল প্রজাতের গরুর সাথে অনেক মিল রয়েছে। এই প্রজাতের গরু প্রতিদিন ২২ লিটার দুধ দিতে পারে। সুতরাং, স্পষ্টতই লক্ষণীয় যে, গবাদি পশুপালকরা এই জাতের গরু থেকে ভাল পরিমাণে দুধ পেতে পারেন। কারণ এই জাতের গরুর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা আবহাওয়া এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভরশীল (Cattle Farm Management)। এই প্রজাতির গরুর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এরা খাবার কম খায়, কিন্তু পরিবর্তে বেশি দুধ দিতে পারে। পশুপালকদের মতে, অত্যন্ত পরিশ্রমীও হয় এই জাতটি।
রাঠি গরুর বৈশিষ্ট্য (About Rathi Breed) -
-
রাঠি গরুর চামড়া খুব মসৃণ ও চকচকে হয়।
-
এরা মাঝারি আকারের হয়, শুভ্র বর্ণের গায়ে বাদামী বা কালো দাগ এদের বৈশিষ্ট্য ।
-
শিং মাঝারি আকারের এবং অভ্যন্তরে বাঁকা হয়।
-
চেহারা বেশ কিছুটা প্রশস্ত।
-
এদের লেজ দীর্ঘ হয়।
-
প্রাপ্তবয়স্ক রাঠি গরুগুলির ওজন প্রায় ২৮০ থেকে ৩০০ কেজি হয়।
-
এই প্রজাতির ষাঁড়ের ওজন ৩৫০ কেজি পর্যন্ত হয়।
-
রাঠি জাতের ষাঁড়গুলিও খুব পরিশ্রমী, এরা গরম আবহাওয়াতেও সহজেই থাকতে পারে।
আরও পড়ুন - Fish Preservation - চাষে অতিরিক্ত লাভের জন্য মাছ দীর্ঘক্ষণ কি করে ভালো রাখবেন, জেনে নিন সহজ উপায়
সব থেকে বড় সুবিধা হল এই গরু যে কোনও অঞ্চলে থাকতে পারে। তাই যে কোন আবহাওয়াতেই কৃষক এর পালন করতে পারবেন। আর এই প্রজাতি প্রতিদিন ২২-২৫ লিটার পর্যন্ত দুধ উৎপাদনে সক্ষম হওয়ায় এর থেকে পালক ভালো আয়ও করতে পারেন।
Share your comments