আমাদের দেশে এখন প্রায় বিলুপ্তপ্রায় মাছের মধ্যে শোল মাছও রয়েছে। রাক্ষুসে প্রজাতির মাছ বলে অনেকেই এই মাছের চাষ করতে বিশেষ আগ্রহ দেখান না। অথচ শোলের দাম বাজারে বেশ ভালোই আর এই মাছ চাষে খরচও খুবই কম। সাথে শোল মাছ প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন খরা, অতিবৃষ্টির মতও প্রতিকূল পরিস্থিতিও সহ্য করতে পারে।
শোল মাছের পুষ্টিগুণ -
প্রতি ১০০ গ্রাম মাছে প্রোটিন ১১.২ গ্রাম, ফ্যাট ২.৩ গ্রাম, আয়রন ০.৫৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ০.১৪ গ্রাম, ফসফরাস ০.২ গ্রাম আছে।
শোল মাছের শারীরিক বৈশিষ্ট্য -
-
এই মাছের পুরো শরীরে কালো কালো ছোপ আছে।
-
পিছনের পাখনা কাস্তের মত দেখায়।
-
চোয়ালে দাঁত আছে।
-
পেছন কালো রঙের এবং নিচের দিক বাদামী রঙের হয়।
-
বুকের দিকের পাখনা লম্বা হয় এবং এতে কাঁটা আছে।
-
পায়ুর দিকের পাখনা দীর্ঘ হয় এবং এতে কোনো কাঁটা থাকে না।
-
পুচ্ছ অবিভক্ত হয়।
-
পার্শ্বিক লাইন বাঁকা হয়।
-
শোল মাছের একটি অতিরিক্ত ফুসফুস আছে।
প্রজনন -
শোল মাছের প্রজনন সময় হল বৃষ্টির সময়। কিন্তু তারা সারা বছর ধরে প্রজনন প্রক্রিয়া করতে পারে। প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে শোল মাছের পোনা উৎপাদন করা খুবই সহজ।
চাষের জন্য হাওড়-বাওড়, পুকুর থেকে সপ্তাহখানেক বয়সের বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে। যদি পোনা না পাওয়া যায় তাহলে বড় শোল মাছ সংগ্রহ করে পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা –
শোল মাছ প্রধানত আমিষাশী, কিন্তু সর্বভুক মাছ। বাচ্চা অবস্থায় এই মাছ জু-প্ল্যাংটন খায় কিন্তু যখন তারা বড় হয়ে যায় তখন তারা গেঁড়ি, কীটপতঙ্গ এবং ছোট আকারের মাছ খায়। তবে ছোট মাছই এর প্রধান খাদ্য। পোনা মাছের জন্য খাবার হিসেবে চিংড়ি শুঁটকির গুঁড়ো ভালোভাবে পিষে দিতে হবে। ১৫ দিন পর থেকে খাদ্য হিসেবে কার্পজাতীয় মাছের ধানীপোনা দেওয়া যেতে পারে। আর বড় মাছের জন্য ছোট ছোট মাছ, চালের গুড়ো ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে।
মিশ্র চাষ -
আমাদের দেশে শোল মাছের একক চাষ খুব কমই হয়। কারণ এই মাছের চাষে অনেক বেশি ছোট মাছ, শুঁটকি ইত্যাদি প্রয়োজন হয়, যা যোগান দেওয়া সম্ভব নয়। তাই মিশ্র মাছের সঙ্গে শোল মাছের চাষ করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন - Profitable Cattle Farming - গো পালন করে কীভাবে বেশি অর্থ আয় করবেন, জেনে নিন সহজ কিছু টিপস
চাষে লাভ –
এই মাছের চাষে ৬ মাসের মধ্যেই মাছের ওজন প্রায় ৭০০ গ্রাম হয়ে যায়। মাছ বড় হয়ে গেলে ওজন দেখে বাজারে বিক্রি করতে হবে। কেজি প্রতি প্রায় ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয় এই মাছ।
রোগ -
প্রধানত শীতকালে শোল মাছে ক্ষত রোগ দেখা দেয়। এই রোগ দেখা দিলে ১০ লিটার জলে ১০০ গ্রাম লবণ মিশিয়ে সেই দ্রবণে রোগাক্রান্ত মাছ একবার ডুবিয়ে নিয়ে তারপর পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে মৎস্য আধিকারিকের পরামর্শ নিতে হবে।
আরও পড়ুন - Pangas Fish Farming - জেনে নিন সহজ পদ্ধতিতে পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষের কৌশল
Share your comments