কৃষিজাগরন ডেস্কঃ করোনা ভাইরাসের পর অন্য যে কোনও ভাইরাসের নাম শুনলেই মনে আশঙ্কার কালো মেঘ জমাট বাঁধতে শুরু করে। সম্প্রতি ভারতে একটি নতুন ভাইরাস কৃষকদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।লাম্পি ভাইরাস নামক এই ভাইরাসের কবলে এখন গোটা দেশ।হাজার হাজার গবাদি পশু লাম্পি ভাইরাসের কারনে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে।পশ্চিমবঙ্গে ২টি গবাদি পশু লাম্পি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ।একটি হাওড়া ও অন্যটি মুর্শিদাবাদে।
লাম্পি ভাইরাসের কারণে আতঙ্কে রয়েছে গবাদি পশুর মালিকরা। সঞ্চয় যাচ্ছে গরুর চিকিৎসায়। পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও রাজস্থানের গ্রামীণ এলাকায় দুধের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আয়ের জন্য গরুর ওপর নির্ভরশীল মানুষ জীবিকার সংকটে পড়েছে। বর্তমানে টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শীঘ্রই এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনার আশা করছেন পশু চিকিৎসকরা। আসুন জেনে নিই লম্পি ভাইরাস সম্পর্কিত ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়...
আরও পড়ুনঃ এবার রাজ্যেও লাম্পি ভাইরাসের হাতছানি, আক্রান্ত ২
লাম্পি ভাইরাসে আক্রান্ত গরুর দুধ কতটা ছোঁয়াচে, এই প্রশ্ন কোথাও না কোথাও কারো মনে। চিফ ভেটেরিনারি অফিসার এবং লক্ষ্ণৌ বিভাগের বিশেষজ্ঞ অরবিন্দ কুমার ভার্মা বলেছেন যে এই ভাইরাসের প্রভাব অবশ্যই দুধে দৃশ্যমান। যাইহোক, এটি সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা যেতে পারে।
অরবিন্দ কুমার ভার্মার মতে, লুম্পি ভাইরাসে আক্রান্ত গরুর দুধ ব্যবহারের আগে অবশ্যই ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে। এতে করে ভাইরাস সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। মানুষের জন্য এতে কোনো ক্ষতিকর উপাদান অবশিষ্ট থাকে না এবং কোনো ক্ষতি হয় না।
তবে গরুর বাচ্চাদের দূরে রাখতে হবে। আক্রান্ত গাভীর দুধ খেলে বাছুর বা গাভীও এই রোগের শিকার হতে পারে। বেশিরভাগ পশুচিকিত্সক গবাদি পশুর মালিকদের সংক্রামিত গরু এবং তাদের বাচ্চাদের আলাদা করার পরামর্শ দিয়েছেন। এতে করে দুজনের জীবন বাঁচানো যায়।
আরও পড়ুনঃ ছাগল পালন করবেন ? পড়ুন বিস্তারিত
এখনও অবধি, লাম্পি চর্মরোগ থেকে মানুষের মধ্যে এই রোগ সংক্রমণের কোনও ঘটনা জানা যায়নি। হ্যাঁ, আক্রান্ত গাভীর দুধ খাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এই ভাইরাস নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণা চালাচ্ছে।
লাম্পি চর্মরোগে গরুর শরীরে পিণ্ড হতে থাকে। এটি তাদের মাথা, ঘাড় এবং যৌনাঙ্গের চারপাশে বেশি দেখা যায়। এই গিঁটগুলি পরে ক্ষত হয়ে যায়। লাম্পি ভাইরাস সহজেই মশা এবং মাছি দ্বারা ছড়ায়। এটি দূষিত জল, লালা এবং পশুখাদ্যের মাধ্যমেও ছড়ায়। যেখানে পশুপাখি রাখা হয় সেসব জায়গা রাখুন। তাদের পশুখাদ্য ও জলের ব্যবস্থা অন্যান্য গবাদি পশু থেকে আলাদা রাখুন। এটি লাম্পি বিস্তার রোধ করতে পারে।
লাম্পি ভাইরাস সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে দুধের ব্যবসায়। রাজস্থানে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লাখ লিটার দুধ সংগ্রহের পরিমাণ কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশেও একই পরিস্থিতির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
২০১৯ সালেও ভারতে লাম্পি ভাইরাসের তাণ্ডব দেখা গেছে। এ বছর গুজরাট থেকে ফের ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে। এখন পর্যন্ত বহু রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে লম্পি ভাইরাস। গবাদি পশু ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে দুধ উৎপাদনে এর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ছে। কারণ ভাইরাসে আক্রান্ত গবাদি পশুর দুধ খাওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। যদি কোনো গরু বা মহিষে ভাইরাসের লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে তা অবিলম্বে আলাদা করে রাখতে হবে, যাতে অন্য গবাদি পশুতে সংক্রমণ না ছড়ায়।
Share your comments