দেশের ছাগল খামারি একটা সাধারণ ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে যে, খামারে তিন চার ফুট উচ্চতার, বিশাল কানওয়ালা ছাগল থাকবেই। একেকটা ছাগল লাখ টাকার ওপরে বিক্রি হওয়ার কথা শোনা যায়।
এসব ছাগল কিন্তু বছরে একবার বাচ্চা দেয়। আবার একবারে সাধারণত একটার বেশি বাচ্চা দেয় না। অথচ ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বছরে দুইবার, একবারে কমপক্ষে দুটি করে বাচ্চা দেয়। এরপরও আকারে ছোট হওয়ার কারণে খামারিরা এই দেশীয় জাতের ছাগল পালন করতে চান না। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা এফএও এবং আন্তর্জাতিক আণবিক গবেষণা কেন্দ্রের (আইএইএ) মূল্যায়ন মোতাবেক, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বিশ্বের অন্যতম সেরা জাত। তারা ১০ বছর ধরে গবেষণা করে এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে এই মুহূর্তে আড়াই কোটির বেশি বিভিন্ন জাতের ছাগল আছে। এর ৯৫ শতাংশই ব্ল্যাক বেঙ্গল। দেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ ছাগল পালন করেন। গৃহপালিত একক কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে এটা রেকর্ড। বিশ্বের হাতে গোনা যে চার থেকে পাঁচটি ছাগলের জাতের এখনো সংকরায়ণ হয়নি, স্বতন্ত্র জাত হিসেবে টিকে আছে, ব্ল্যাক বেঙ্গল তার মধ্য়ে অন্যতম । নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে এই জাতটি টিকিয়ে রেখেছেন মূলত গ্রামের সাধারণ মানুষ।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বছরে চারটা করে বাচ্চা দেয়। এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে এদের ছয় থেকে আট হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। এরা বাড়ির আশপাশের গাছের পাতা, সবজির বর্জ্য খেয়েই বড় হয়। মাসে ৫০ থেকে ১০০ টাকার ঘাস কিনতে হয়। তাই এদের পালতে বাড়তি কোনো চাপও পড়ে না। ২০০৭ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংস্থা দুটি বিশ্বের ১০০টি জাতের ছাগলের ওপরে গবেষণা করে ব্ল্যাক বেঙ্গলকে অন্যতম সেরা জাত হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ দুগ্ধজাত দ্রব্যে উচ্চ দুধ উৎপাদনের জন্য এটি করুন
এই ছাগলের নবজাতকের মৃত্যুহার কম। আর এরা বছরে দুবারে কমপক্ষে চারটি বাচ্চা দেয়। তাই অন্য জাতগুলোর তুলনায় এই জাতের ছাগলের সংখ্যা সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে। এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, এটি পালন করতে বড় চারণভূমি লাগে না। বাড়ির উঠান বা রান্নাঘরের পাশের ছোট্ট স্থানেও এরা দিব্যি বেড়ে ওঠে।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের দুর্বল দিক এর দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-ওজন এবং দুধের পরিমাণ অন্যান্য ছাগলের চেয়ে কম। আফ্রিকার মাসাই ছাগল, ও যমুনাপাড়ি ছাগল এবং চীনা জাতের ছাগলের মাংস ও দুধের পরিমাণ ব্ল্যাক বেঙ্গলের চেয়ে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ বেশি।
কিন্তু ওইসব 'উন্নত জাতের' ছাগলের ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ বাচ্চা জন্মের পরই মারা যায়। কিন্তু ব্ল্যাক বেঙ্গলের বাচ্চার মৃত্যুর হার ৫ থেকে ১০ শতাংশ। এ কারণে ব্ল্যাক বেঙ্গলের জীবনচক্রে মোট বংশবৃদ্ধির হার অনেক বেশি।
আরও পড়ুনঃ হাঁস পালন: লাভের এই দৌড়ে এই হাঁস পালন মুরগিকে পেছনে ফেলেছে
Share your comments