খেতেও যেমন ভালো তেমনই একোরিয়ামে পোষার পক্ষেও আদর্শ। পাঙ্গাস মাছ। অত্যন্ত সুস্বাদু এই মাছ ঝালেঝোলে খেতে বেশ ভালোই লাগে। বর্তমানে পাঙ্গাস মাছ রপ্তানী যোগ্য মাছ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। অনেকের কাছে এই মাছ বেশ পছন্দের— কারণ এই মাছের কাঁটা অনেক কম। এ ছাড়া ছোট–বড় রেস্তোরাঁয় বা একটু বেশি তেল–মশলা সহকারে রন্ধনের জন্য এর চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বোপরি এই মাছের গড় ফলন বা বৃদ্ধি অনেক বেশি। বহু চাষি বর্তমানে পাঙ্গাস মাছ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। জলাশয়ে পরিকল্পনামাফিক বহু চাষিই পাঙ্গাশ মাছ চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন।
পাঙ্গাস মাছ স্বল্প নোনা জল এবং মিঠা জল দুইখানেই বাঁচতে পারে। পাঙ্গাস মাছের দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে, ফলে রুইজাতীয় মাছ চাষের চেয়ে পাঙ্গাস মাছের চাষ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। অন্যান্য মাছের সাথেও এই মাছের চাষ করা যেতে পারে।
পাঙ্গাস মাছের খাবার প্রয়োগ (Food)
পুকুরে মাছের চারা ছাড়ার ২ / ১ দিন পর থেকে পরিপূরক খাবার দিতে হয়। প্রথম ৭ / ১০ দিন পর্যন্ত মাছের মোট ওজনের শতকরা ৩ ভাগ খাবার সকাল ৬ টা থেকে ৮ টার মধ্যে দিতে হয়। সারা দিনে এই সময় খাবার দেওয়া হয় এক বারই।
এর পর ৭ / ১০ দিন বাদ থেকে খাবারের পরিমাণ বাড়ানো হয় -- ওজনের শতকরা ৫ – ৮ ভাগ পর্যন্ত খাবার প্রয়োগ করা হয়। এই খাবার আস্তে আস্তে ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হয়। এদের ৯০ – ৯৫ দিন বয়স পর্যন্ত এই হারেই খাবার দেওয়া হয়। এর পর মাছের গায়ে চর্বি আসা অবধি এই বৃদ্ধি চলে।
মেঘলা হলে বা মাছ ঠিকমতো সব খাবার না খেলে খাবার দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। তাই সব সময় দৃষ্টি রাখতে হবে কোনও রকম অস্বাভাবিক আচরণ বা গতিবিধি মাছের হচ্ছে কি না।
পরিমিত খাবার - ভাসমান খাবারই এদের খুব পছন্দ এবং এই খাবারই এরা খায়। সব থেকে ভালো খাবার পরীক্ষিত ভাসমান খাবার (বাজারে পাওয়া যায় ১ : ৩ : ১)। মাছের ওজন ৪০০ – ৫০০ গ্রাম হলে বা চর্বি জমতে শুরু করলে বা ২ – ৩ মাস বয়সের পর থেকে সকালের খাবারে মটর সিদ্ধ (৬০%) ও বিকেলের খাবারে অল্প বাদাম খোল (৪০%) মিশিয়ে দিলে ভালো হয়।
উন্নত উপায়ে অর্থাৎ ভালো জলে, সঠিক পরিচর্যা করে, উপযুক্ত ও সঠিক খাবার প্রয়োগ করলে মাছের গুণমান অনেক বেড়ে যায়। এদের গায়ের রং, মাংসের রং, স্বাদ ও গন্ধ ভালো হয়।
জৈব জুস প্রয়োগ করলে মাছের উৎপাদন আরো ভালো পাওয়া সম্ভব। জৈব জুসে উপস্থিত কার্বন জলের অ্যামোনিয়া সহ ক্ষতিকারক গ্যাস দূর করে দেয় , উপকারী ব্যাক্টেরিয়া বা বন্ধু জীবাণু জলের তলার জৈব পদার্থকে মাছের খাবারে পরিণত করে। কিভাবে এই জুস তৈরি করতে হবে? ২৫ ডেসিমেল পুকুরের জন্য আড়াই কেজি বাদাম খোল, তিন কেজি চালের গুঁড়ো, ছয়শো গ্রাম ঈষ্ট পাউডার, তিন কেজি চিটে গুড় , দেড় কেজি আটা, তিনশো গ্রাম কলা ও দেড় কেজি যেকোনো পোনা মাছের খাবার একসাথে তিন গুণ জলের সাথে মিশিয়ে তিন দিন পচিয়ে পুকুরে দিতে হবে। মাসে দুবার করে জৈব জুস প্রয়োগ করা দরকার। জুস প্রয়োগের আগে চুন দেওয়া আবশ্যক।
আরও পড়ুন: Profitable Goat Farming - ছাগল পালনে অধিক লাভ করতে চান? মেনে চলুন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
মাছ তোলা(Fishing)
মাছ তোলা এবং বাজারজাত করার সময় ও পদ্ধতির উপর মাছ চাষের লাভক্ষতি অনেক অংশেই নির্ভর করে। তাই পাঙ্গাস মাছ ধরার জন্য কয়েকটি কথা মনে রেখে প্রয়োজন অনুযায়ী ও বাজারের চাহিদার গুরুত্ব দিয়ে মাছ ধরতে হবে। বছরে সাধারণত ৩ বার এই মাছ ধরা হয়। স্থানীয় বাজারে ছোট (৪০০ – ১০০০ গ্রাম ) মাছের চাহিদা বেশি। এই মাছ প্রথম ৩ থেকে ৪ মাস ভীষণ বাড়ে। যদি মাছের সংখ্যা কমানোর প্রয়োজন না থাকে, তবে মাছ ধরা স্থগিত রেখে মাছকে বাড়তে দিলে বেশি লাভ হয়। গ্রীষ্মে এই মাছ বেশি বাড়ে। বৈশাখের শেষে বা জ্যৈষ্ঠ মাসে এদের ওজন ৭০০ গ্রামের ঊর্ধ্বে হয়ে যায়। এই সময় সমস্ত মাছ ধরে বাজারজাত করে নতুন ভাবে আবার বছর-ফেরি চারা মাছ (১৫ গ্রাম) জ্যৈষ্ঠ মাসে ছাড়লে, শ্রাবণের শেষে ৭০০ গ্রামের ঊর্ধ্বে ওজনের মাছ আবার তৈরি হয়ে যাবে।
নিয়মানুসারে বাজারের চাহিদা অনুসারে এদের বাড়তে দেওয়া উচিত। পাঙ্গাস মাছ স্বাদের জন্য বর্তমানে বহু ঘরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ঠিকঠাক রান্না করলে পাঙ্গাশ মাছ খেতে অপূর্ব লাগবে।
আরও পড়ুন: Puti Fish Farming: পুকুরে পুঁটি মাছ চাষে আয় করুন দ্বিগুন
Share your comments