পেংবা একটি মিষ্টি জলের মাছ | এর বৈজ্ঞানিক নাম অস্টিওব্রাম বেলঞ্জারী | সাধারণত, মণিপুরে এই মাছের দেখা মেলে | এমনকি প্রতি বছর মণিপুরে পেংবা দিবস পালন করা হয় | এই মাছের অসাধারণ স্বাদের জন্য এর চাহিদা প্রচুর | এ রাজ্যে ইতিমধ্যেই হলদিয়া ব্লকে পেংবা মাছের চাষ ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে | বর্তমানে হলদিয়া থেকে এই মাছের ডিম পোনা অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন হ্যাচারি মালিকরা। তাছাড়া, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক সিএডিসি মৎস্য খামারে পেংবার চারা পাওয়া যায় |
রাজ্যে কার্প জাতীয় মাছের সঙ্গে সহজেই পেংবার মিশ্র চাষ করা যায়। পেংবা রাক্ষুসে নয়, শাকাশি জাতীয় মাছ। অর্থাৎ রুই, কাতলার (Rohu fish farming) সাথে পেংবা চাষ কৃষকদের খুবই ভালো লাভের সুযোগ করে দেবে | তবে দেখে নিন কিভাবে রুই কাতলার (Catla fish farming) সাথে সাথী ফসল হিসাবে পেংবার মিশ্র চাষ করা যায়;
পোনা ছাড়ার পদ্ধতি:
বড় পুকুরে চাষের জন্য হেক্টর প্রতি ৭ থেকে ৮ হাজারটি পেংবা মাছের চারাপোনা মজুত করা যায়। এগুলি বছরে ৪ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজন হলেই বিক্রি করা যেতে পারে। পেংবার যেহেতু বাজারমূল্য অনেক বেশি, তাই সাথী ফসল হিসেবে পেংবার মিশ্র চাষ অধিক লাভজনক।
আতুঁড় পুকুরে চাষের জন্য প্রতি হেক্টর জলাশয়ে ৩ থেকে ১০ মিলিয়ন ডিমপোনা ছাড়তে হবে। তবে পুকুরে বায়ুসঞ্চালনের ব্যবস্থা থাকলে প্রতি হেক্টরে ১০ থেকে ২০ মিলিয়ন ডিমপোনা ছাড়া যাবে।
খাদ্য(Food):
কৃত্রিম খাবার হিসেবে চালের কুঁড়ো ও বাদামখোল এর গুঁড়ো সমান অনুপাতে মিশিয়ে দিতে হবে। পালন পুকুরে চারাপোনার চাষের জন্য কার্প জাতীয় মাছের সঙ্গে মিশ্রচাষ করা যাবে। এক্ষেত্রে মৃত্যুর হার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। উপযুক্ত, সুষম খাবার পেলে বেঁচে থাকা হার ৯৪.৫ শতাংশ। ‘অ্যাজোলা’ খাওয়ালে পেংবা বৃদ্ধি আরও ভাল হয় এবং বেঁচে থাকার হারও বেশ ভালো হয়ে ওঠে |
আরও পড়ুন -Thai Sharpunti fish farming: কিভাবে করবেন থাই সরপুঁটি মাছের চাষ? শিখে নিন পদ্ধতি
মিশ্র চাষ পদ্ধতি(Farming process):
মে মাসের সময় সাধারণ পুকুরে চাষ করলে ডেসিম্যাল পিছু ৩০০ গ্রাম ওজনের ৩ টি কাতলা, ১০০-১৫০ গ্রাম ওজনের ৩ টি সিলভার কার্প, ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম ওজনের রুই মাছ ৩০টি, ১০০ -১৫০ গ্রাম ওজনের ২০ টি মৃগেলের সঙ্গে ২ থেকে ৭ গ্রাম ওজনের১৫টি পেংবা মাছ মজুত করা যেতে পারে। ৩ মাস পরে ৬০০ গ্রাম ওজনের রুই ও ১ কেজি ওজনের সিলভার কার্প হবে। সেগুলো বিক্রি করে ফের ১০০ গ্রাম ওজনের রুই মাছ ৪০ টি ও ২০০ গ্রাম ওজনের সিলভার কার্প ২টি মজুত করতে হবে। এরপর মাছ ছাড়ার ৪-৫ মাস পর, ১ কেজি ২০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি ওজনের কাতলা, ৪০০ গ্রাম ওজনের পেংবা মাছ ধরে বিক্রি করা যেতে পারে।
মাছের পরিচর্যা:
জৈব জুস প্রয়োগ করলে মাছের উৎপাদন আরও ভাল হয়। জৈব জুসে উপস্থিত কার্বন জলের অ্যামোনিয়া-সহ ক্ষতিকারক গ্যাস দূর করে দেয়। উপকারী ব্যাক্টেরিয়া বা বন্ধু জীবাণু জলের তলার জৈব পদার্থকে মাছের খাবারে পরিণত করে। এই জুস তৈরি সম্পর্কে মৎস্যবিজ্ঞানীরা বলেন, ২৫ ডেসিমেল পুকুরের জন্য আড়াই কেজি বাদাম খোল, ৩ কেজি চালের গুঁড়ো, ৬০০ গ্রাম ঈস্ট পাউডার, ৩ কেজি চিটে গুড়, ১.৫ কিলোগ্রাম আটা, ৩০০ গ্রাম কলা ও ১.৫ কিলোগ্রাম যে কোনও পোনা মাছের খাবার একসঙ্গে ৩ গুণ জলের সঙ্গে মিশিয়ে ৩ দিন পচিয়ে পুকুরে দিতে হবে। তাতে মাছের উৎপাদন বাড়বে, খাবারও সংগ্রহ করতে পারবে |
আরও পড়ুন -Pomelo cultivation guide: জেনে নিন বাতাবি লেবু চাষের সহজ পদ্ধতি
Share your comments