শূকর পালন থেকে অধিক উপার্জন করতে হলে শুধু শূকর পালন করলেই হবে না, প্রয়োজন তার রোগ প্রতিকারেরও। কোন কোন রোগে আক্রান্ত হতে পারে শূকর? রোগে আক্রান্ত হলে এর প্রতিকারই বা কি? আজ আমরা এই নিবন্ধে শূকরের রোগ এবং তার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আপনাকে তথ্য দিতে চলেছি।
শূকরের রোগ এবং তার প্রতিকার (Pig disease and its cure) -
পিগলেট এনিমিয়া (Piglet Anemia): শুকরীর দুধে লৌহ জাতীয় ধাতব পদার্থ অত্যন্ত কম থাকে, ফলে দুধ খাওয়া শুকরের বাচ্চাগুলি দৈনিক পর্যাপ্ত লৌহ পায় না. এই কারণে অল্প দিন পর থেকেই শাবক গুলি রক্তাল্পতায় ভোগে এবং এই অবস্থা বেশি দিন চললে ১০-১৫ দিনের মধ্যে শাবকগুলি মারাও যাতে পারে. এই অবস্থার থেকে বাঁচা যেতে পারে সেক্ষেত্রে ৩-৪ দিন বয়সে লৌহ যুক্ত ইঞ্জেকশন দিতে হবে. অথবা নিম্ন লিখিত পদার্থগুলি মিশ্রণ করে শুকরীর বাঁটে লাগলেও ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে.
কোবাল্ট ক্লোরাইড - ৫৫ গ্রাম
কপার সালফেট – ২৬৫ গ্রাম
ফেরাস সালফেট - ৫০০ গ্রাম
জিঙ্ক সালফেট - ৭৫০ গ্রাম
এই ক্ষেত্রে শূকরের জন্মের পর থেকে মাত্র ১/৩ ভাগই সাধারণত সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে বড় হয়। তাই শূকর পালনে সঠিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার মূল্য অপরিসীম।
শূকরের অসুস্থতার কিছু সাধারন লক্ষণ –
- অসুস্থ শূকরের ক্ষুধামান্দ্য দেখা যাবে, একলা থাকতে চাইবে, ঘরের এক কোণে শুয়ে পড়বে এবং চলাফেরায় কষ্ট হবে।
- শূকর হাঁপাবে, কাশবে, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া দেখা যাবে। কানের রং পরিবর্তন হতে পারে এবং শূকর সবসময় ঝিমাতে থাকবে।
- শূকরের জ্বর আসতে পারে (স্বাভাবিক ১০১-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট), লালা ঝরতে পারে বা চোখে জল পড়তে পারে।
- প্রত্যেকদিন সকালে বিকালে খামারের সমস্ত শূকরের ঘোরাফেরা ঘনিষ্ঠভাবে দেখা প্রয়োজন। কোন ধরণের অসংলগ্নতা নজরে এলেই পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
গর্ভবতী শূকরীর প্রতি অবশ্যই করণীয় বিষয়ঃ
- শূকরী গর্ভবতী হলে তাদেরকে অবশ্যই আলাদা ঘরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। দরকারে প্রথম বাচ্চা দেবে এমন শূকরীদেরকে এবং পূর্বে বাচ্চা দিয়েছে এমন শূকরীকে আলাদা রাখলে আরও ভালো হয়।
- গর্ভবতী হওয়ার প্রথম ১০ সপ্তাহ প্রতিদিন পরিমাণ মত সুষম খাবার দেওয়া উচিত।
- গর্ভাবস্থায় শেষের ৫ সপ্তাহ শূকরীকে পরিপূর্ণ সুষম পুষ্টিকর খাবার দেওয়া উচিত। এই সময় শূকরীর নিজের প্রয়োজন ছাড়াও ১০-১২ টি শাবকের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদান সরবারহ করতে হবে। এই সময় খাবারে শর্করা জাতীয় উপাদান কমিয়ে আমিষ জাতীয় এবং লবণ ও ভিটামিন বাড়িয়ে দেওয়া উচিৎ।
- প্রসবের অন্তত ১ সপ্তাহ আগে থেকেই গর্ভবতী শূকরীর ঘরে প্রতিদিন জীবাণুনাশক দ্রব্য যেমন ফিনাইল, ডেটল ইত্যাদি দিয়ে ধুয়ে দেওয়া দরকার। ঘরে যথেষ্ট পরিমাণে শুকনো ঘাস, বিচালি বিছিয়ে দেওয়া দরকার।
- প্রতিদিন শূকরীর পশ্চাৎভাগ ও পালান পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট (১শতাংশ) মেশানো জল দিয়ে ধুয়ে দেওয়া দরকার। প্রথম প্রসূতির ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে পিছন দিকে হাল্কা ভাবে মালিশ করে দিতে পারলে ভাল হয়।
অসুস্থ শুকর, শূকর উৎপাদকের বহু অর্থের অপচয় ঘটায়। রোগ জ্বালা শূকরের মৃত্যুর সাথে শুকরের উৎপাদন কমায়। অসুস্থ শূকরের বেশি খাবারের প্রয়োজন হয়, তাদের দেহ বৃদ্ধির হার কম হয় এবং অসুস্থ শূকরের বাজারমূল্যও কম হয়। সাধারণভাবে পরিলক্ষিত অসুস্থ শূকরের থেকে যে সমস্ত শূকরের অসুস্থতা আসে, তা সহজে বোঝা যায় না, অর্থনৈতিক দিক থেকে তারা বেশি বিপজ্জনক। অন্য পশুর তুলনায় শূকরের মৃত্যুর হার বেশি দেখা যায়। যত শিশু জন্মায় তার এক-তৃতীয়াংশই কেবল সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে বড় হয়। তাই শুকর উৎপাদনে সঠিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার মূল্য অপরিসীম। অতএব, স্বাস্থ্যসম্মত দৈনন্দিন পরিচর্যা ও উপযুক্ত খাদ্যের দ্বারা নানারকম রোগব্যাধি থেকে রক্ষা করা সম্ভব এবং শূকর পালনের থেকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা যেতে পারে।
নিবন্ধ লেখক - ড. মানস কুমার দাস (বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ, কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র, জলপাইগুড়ি)
Image source - Google
Related link - (Doubling the income of fish farmers) উৎপাদন খরচ হ্রাস করে বর্তমান পরিকাঠামোতেই উন্নত মাছ চাষ ও সঠিক ফলন - মাছ চাষীদের দ্বিগুণ আয়
Share your comments