ভারতবর্ষের আর্থসামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে শূকর উৎপাদনের এক বিশেষ ভূমিকা আছে। অত্যাধিক জনসংখ্যার চাপ, কর্মহীনতা ও তদজনিত সমস্যা মোকাবিলায় শূকর একটি অর্থকরী চাষ। বৈজ্ঞানিক প্রথায় শূকর উৎপাদন করে সংসার প্রতিপালনের উপযোগী অর্থ আয় আজ আর অসম্ভব নয়। আমাদের দেশে অপুষ্টি বিশেষ ভাবে প্রোটিন বা আমিষজাতীয় খাদ্যের অপুষ্টি বেড়েই চলেছে। এই চাহিদা মেটাতে চেষ্টা চলছে নানাভাবে। দেশে শূকর উৎপাদন বৃদ্ধি হলে এই সমস্যার অনেকাংশে সমাধান ঘটবে। এক্ষেত্রে শূকরের মাংসের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে লক্ষণীয়ভাবে।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শূকর চাষ করতে হলে শূকরের বাসস্থান তৈরিতে নিম্নলিখিত বিষয়ের উপর বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন-
- শূকরের খামার লোকালয় থেকে অন্তত পক্ষে ২০০ মিটার দূরে এবং একটু উঁচু যায়গা দেখে করতে হবে।
- খামারের কাছাকাছি যাতায়াত ও নিকাশী ব্যবস্থা ভালো রাখা দরকার।
- শূকর আবহাওয়ার বেশি তারতম্য সহ্য করতে পারে না, তাই ছায়াযুক্ত যায়গায় খামার ঘর করতে হয়।
- বাসস্থানের ভিতর কোন পোকামাকড় বাঁ ইঁদুর যাতে ঢুকতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার।
- শূকরের খামারের কাছাকাছি হাঁস, মুরগি বা গরুর খামার যাতে না থাকে খেয়াল রাখতে হবে।
- বাসস্থানের ভিতর যথেষ্ট আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- বিভিন্ন বয়স এবং উৎপাদন অবস্থায় শূকরগুলিকে আলাদা ভাবে রাখতে হবে।
শূকরের স্থান প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন এলাকার জলবায়ু, শূকরের ওজন, বয়স ও শারীরিক অবস্থা বাসস্থানের পদ্ধতি ও অন্যান্য দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনা। একটি সাধারণ সূচক হিসাবে নিম্নে একটি খামারের পরিমাণ দেওয়া হল।
কি ধরনের শূকর | স্থান (বর্গফুট) |
একসাথে কতগুলি রাখা যেতে পারে |
গাভীন, বাচ্চা দেওয়াকালীন | ৮০ |
১ |
মদ্দা শূকর | ৬০ |
১ |
উইনার | ১৬ |
৩০ |
ধাড়ী শূকর | ২০ |
৩-১০ |
অসুস্থ শূকর (বড়) | ১০-২০ |
১ |
শূকরের খাবার তৈরি করার জন্য প্রধানত শস্য জাতীয় পদার্থ এবং উহার অবশিষ্টাংশ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। খাবারের শক্তি ও প্রোটিনের মাত্রা অনুযায়ী এদের শক্তি সমৃদ্ধ ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বলা হয়।
শক্তি সমৃদ্ধ খাবার -
যে সমস্ত খাবার সাধারণত শস্য জাতীয় পদার্থ এবং ডাল জাতীয় পদার্থ ও এদের অবশিষ্টাংশ দিয়ে তৈরি হয়, এদের শক্তি সমৃদ্ধ খাবার বলা হয়।
- ভুট্টা, জোয়ার, বাজরা, ওটস্, চালের খুদ, চালের কুঁড়ো, গমের ভুষি।
- ছোলা, মটর, অড়হর, বরবটি, ইত্যাদি ডাল জাতীয় শস্য ও এদের অবশিষ্টাংশ।
- শালবীজ, শালবীজের খোলা, শিমূল আলু, এবং গুড়।
- আলু, মিষ্টি আলু, শালগম, গাজর, বীট ইত্যাদি কন্দ জাতীয় পদার্থ।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার -
- ভেষজ প্রোটিন - সাধারণত বিভিন্ন রকম খোলা থেকে তৈরি হয়। যেমন বাদাম খোলা, তিল খোলা, নারিকেল খোলা এবং সরষে খোলা।
- প্রাণীজ প্রোটিন – শুঁটকি মাছ, কাঁকড়া, স্লাটার হাউস থেকে পাওয়া মাংসাবশেষ। এই সমস্ত পদার্থ খাদ্য উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এই উভয় প্রকার খাবারকে সুষম খাবার হিসাবে তৈরি করতে সঠিক পরিমাণে ধাতব লবণ ও ভিটামিন অবশ্যই মেশাতে হবে।
ধাতব লবণ -
সাধারণত হাড় গুঁড়ো ও বিভিন্ন রকম অজৈব পদার্থ এবং চকের গুঁড়ো সঠিক অনুপাতে মিশিয়ে তৈরি করা হয়।
জলের পরিমাণ -
বিভিন্ন বয়সের শূকরের জন্য জলের পরিমাণ বিভিন্ন হয়ে থাকে। প্রতি কেজি শুষ্ক খাবারের সাথে ২-২.৫ লিটার জল প্রয়োজন, তবে ঘরে যথেষ্ট পরিমাণ পরিষ্কার পানীয় জল থাকা দরকার। মায়ের থেকে আলাদা করা বাচ্চা শূকর দেহের ওজনের ২০ ভাগ পর্যন্ত জল খেয়ে থাকে। কিন্তু বয়স্ক শূকর ৬-৭ ভাগ জল পান করে। তবে দুধারু শূকরীর ক্ষুদান্ত্র ও বৃহদান্ত্র ছোট হওয়ায় ঘনঘন জল পান করে, কারণ তাকে দুধ উৎপাদন করতে হয়।
নিবন্ধ লেখক - ড. মানস কুমার দাস (বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ, কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র, জলপাইগুড়ি)
Image source - Google
Related link - (Doubling the income of fish farmers) উৎপাদন খরচ হ্রাস করে বর্তমান পরিকাঠামোতেই উন্নত মাছ চাষ ও সঠিক ফলন - মাছ চাষীদের দ্বিগুণ আয়
Share your comments