বর্ষাকালে পোল্ট্রি খামারিদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হয়।তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার হ্রাস-বৃদ্ধি, দেশের কোনো কোনো অংশে প্রচুর বৃষ্টিপাত, কোথাও ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, কোথাও বা থেমে থেমে দীর্ঘদিন বৃষ্টির কারণে অনেক সময় সঠিক খামার ব্যবস্থাপনা সমস্যার সম্মুখীন হয়। এই অবস্থায় নিন্মোক্ত ব্যবস্থাগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখলে খামারি উপকৃত হবে-
পোল্ট্রি খামারের করনীয় বিষয় (Important aspects):
১) পোল্ট্রি শেডের চারপাশে ৫ মিটার জায়গা অতিরিক্ত বাড়াতে হবে |
২) প্রয়োজনীয় পলিথিনের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে যদি অতিরিক্ত ছাউনি দেওয়া না হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত বৃষ্টির সময় সামনে ও পেছনে যেন চটের তৈরি আচ্ছাদন থাকে। বড় মুরগির ক্ষেত্রে বৃষ্টি না থাকলে তা উঠিয়ে রাখতে হবে যাতে ভালভাবে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে |
৩) বাড়তি জায়গা ভালভাবে পরিস্কার এবং ঘাস ও ঝোপঝাড় মুক্ত রাখতে হবে; বাড়তি জায়গার উপরে ভালমত ছাউনি দিতে হবে |
৪) বাচ্চা উঠানোর আগেই সকল পাকা মেঝে ভালমত রিপিয়ারিং করতে হবে এবং যতদিন সম্ভব শুষ্ক রাখা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে |
৫) খাবারের পাত্র যাতে যথাসম্ভব শুষ্ক রাখা যায় সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে |
৬) লিটারের ক্ষেত্রে, জানালা এবং ঘরের পাশ দিয়ে বৃষ্টির জল ঢোকার সম্ভাব্য সব ছিদ্র বের করতে হবে এবং তা বন্ধ করার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যেন লিটার শুষ্ক থাকে। শক্ত লিটার ভেঙ্গে দিয়ে নতুন লিটার ছড়িয়ে দিয়ে এবং শুষ্ক দ্রব্য যেমন: লাইম পাউডার, এমোনিয়াম সালফেট ইত্যাদি ব্যবহার করে শুষ্ক অবস্থা বজায় রাখতে হবে। অন্যথায় ভেজা লিটার কক্সিডিওসিস, এন্টারইটিস, কৃমি সংক্রমণের উপযুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার হবে যা পোল্ট্রির জন্য ক্ষতিকর |
৭) পোল্ট্রি শেডের আশেপাশে যাতে বৃষ্টির জল জমে না থাকে সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রয়োজনে পর্যাপ্ত জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে বিভিন্ন রোগ-বালাই শেডে প্রবেশ করতে পারে।
৮) যারা আখের ছোবড়া লিটার হিসেবে ব্যবহার করেন তাদের যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অন্যথায় Aspersillus fumigatus নামক মোল্ড জন্মাতে পারে যা ফুসফুসের কোষে প্রবেশ করে এবং বাচ্চাতে ব্রুডার নিউমোনিয়া ঘটায়।
আরও পড়ুন - Beetal Goat Farming: বিটল জাতের ছাগল পালনে পশুপালকের হবে দ্বিগুন আয়
খাবার প্রদানে করণীয় (Food management):
বর্ষার সময় যাতে নতুন খাদ্য কেনা না লাগে এজন্য যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য মজুত করা উচিত। অন্যথায়, পরিবহনের সময় খাদ্য পরিবেশ হতে আর্দ্রতা শোষন করবে। খাদ্য কেনার পর খাদ্যের ব্যাগ কাঠের মাচাতে রাখা উচিত। তবে মাচা যেন মেঝে থেকে এবং দেওয়াল থেকে এক ফুট দূরত্বে থাকে। পাকা ঘরের জন্য খাদ্য সংরক্ষণের রুম থাকা দরকার যা কোনোভাবেই ভেজা না থাকে। যদি ঘরের ভেতরের আর্দ্রতা বেশি থাকে অথবা জল প্রবেশ করে এবং এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকে তবে ফাংগাস এবং মোল্ডের মারাত্মক সংক্রমণ দেখা দেবে। সবচেয়ে ভয়ংকর যে ফাংগাস ভুট্র সি ফিসমিল ইত্যাদিতে আক্রমণ করে তা হচ্ছে Aspergillus flavus । এই প্রজাতি হতে যে বিষ নিঃসৃত হয় তা আফলাটক্সিন বি ১, বি ২, জি ১, এবং জি ২ নামে পরিচিত। এর মধ্যে বি ১ হচ্ছে সবচেয়ে মারাত্মক। এর ফলে ডিম উৎপাতন হ্রাস, বৃদ্ধি ব্যাহত, নিম্ন খাদ্যে রূপান্তর, লিভার টিউমার এমনকি লেয়ার ও ব্রয়লারের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। লেয়ারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ০.১ পিপিএম এবং ব্রয়লারের জন্য ০.০৫ পিপিএম বাস্তব ক্ষেত্রে সহনীয় মাত্রা। হাঁস এবং টার্কি, মুরগির চেয়ে বেশি সহনীয়। এজন্য খাদ্যে ভালমানের টক্সিন বাইন্ডার সাধারণ মানের চেয়ে একটু বেশি ভাল ব্যবহার করা উচিত।
বর্ষাকালে ঝিনুকের অভাব দেখা যায়। যেহেতু ঝিনুক সস্তা খাদ্য উপাদান এবং দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় তাই ভাল সিদ্ধান্ত হবে যদি আগেই কিনে মজুদ করা যায়। তবে যে কোনো খাদ্য মজুদের পূর্বেই ঘরের তাপ কি পরিমাণ সংরক্ষণ করা যাবে তা বিবেচনায় রাখতে হবে। লক্ষ্যণীয় যে, ধারণক্ষমতার চেয়ে অধিক সংরক্ষণ করা যাবে না।
জলের ব্যাবস্থাপনা (Water management):
বর্ষাকালে পুকুর, নদী, টিউবওয়েল এমনকি ট্যাপের জল পর্যন্ত জীবাণু দ্বারা দূষিত হয় যা প্রাকৃতিকভাবেই মাটিযুক্ত বৃষ্টির জলের মাধ্যমে ঘটে থাকে। ভাল জল পেতে হলে এলাম দ্বারা পরিশোধন করে এবং ২৪ ঘণ্টা ধরে অধঃক্ষেপন করতে হবে। জল বিশুদ্ধ করার অন্য উপায় হচ্ছে ৩৫ ভাগ ক্লোরিন যুক্ত করা যা ২ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার ১০০০ লিটার খাবার জলের সাথে মিশ্রণ করে পাওয়া যায়। এ জল মিশ্রণের ৩ ঘণ্টা পরে প্রয়োগ করতে হবে।
মল ব্যবস্থাপনা:
পোল্ট্রি মল রোগ বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই নির্দিষ্ট সময় পর পর লিটার থেকে মল সরিয়ে ফেলতে হবে। অন্যথায় মলের উপরে জীবাণুনাশক যেমন ভিরকন, মেলাথিয়ন ইত্যাদি ছিটিয়ে দিতে হবে। বর্ষায় মশা, মাছি এবং অন্যান্য পোকা-মাকড়ের উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। তাই শেডের চারপাশে জীবাণুনাশক স্প্রে করে শেডকে রোগমুক্ত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন -Fish Farming: খাঁচায় মাছ চাষে বিপুল লক্ষীলাভ, নিবন্ধটি পুরো পড়ুন
Share your comments