কৃত্রিম উপায়ে কৈ মাছের রেনু উৎপাদনের কৌশল (Artificially Producing Koi Fish Pollen)

(Artificially Producing Koi Fish Pollen) কৈ মাছের রেনু উৎপাদন বিষয়ে মৎস্য চাষিদের সঠিকভাবে ধারণা রাখতে হবে। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক উৎসগুলোতে আগে প্রচুর পরিমাণে কৈ মাছ পাওয়া গেলেও এখন আর তেমন পাওয়া যায় না। তাই অনেক মৎস্য চাষিই এখন পুকুরে কৈ মাছের চাষ করছেন।কৈ মাছের কৃত্রিম প্রজননের জন্য শুধুমাত্র একটি হাপা হলেই এই মাছের প্রজনন করা সম্ভব। চাহিদামত বা ইচ্ছানুযায়ী লক্ষ লক্ষ রেনু এবং পোনা উৎপাদন করা যাবে।

KJ Staff
KJ Staff
Artificially Producing Koi Fish Pollen
Koi Fish Pollen (Image Credit - Google)

কৈ মাছের রেনু উৎপাদন বিষয়ে মৎস্য চাষিদের সঠিকভাবে ধারণা রাখতে হবে। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক উৎসগুলোতে আগে প্রচুর পরিমাণে কৈ মাছ পাওয়া গেলেও এখন আর তেমন পাওয়া যায় না। তাই অনেক মৎস্য চাষিই (Fish Farmer) এখন পুকুরে কৈ মাছের চাষ করছেন।কৈ মাছের কৃত্রিম প্রজননের জন্য শুধুমাত্র একটি হাপা হলেই এই মাছের প্রজনন করা সম্ভব। চাহিদামত বা ইচ্ছানুযায়ী লক্ষ লক্ষ রেনু এবং পোনা উৎপাদন করা যাবে। যার ফলে একজন মৎস্যচাষী অন্ততপক্ষে পোনা কেনা থেকে অনেক টাকা বাচাতে পারবেন।

পুকুর প্রস্তুতকরণ (Pond Preparing) : 

যে পুকুরে কৈ মাছকে ইঞ্জেকশন দেওয়ার জন্য নির্বাচন করা হবে সেই পুকুরটিকে প্রথমেই ভালভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। পুকুরের ভেতরের চারপাশের যাবতীয় ঘাস বা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে। তারপর পুকুরের চারপাশ দিয়ে ভালভাবে জাল দিয়ে বেড়া দিতে হবে যাতে বাইরে থেকে কোন ব্যাঙ বা সাপ পুকুরের ভেতর না ঢুকতে পারে। তারপর যেদিন কৈ মাছকে ইঞ্জেকশন দেওয়ার জন্য নির্বাচন করা হবে ঠিক সেদিনই পুকুরে পানি ঢুকাতে হবে। অন্যথায় পুকুরে পানি তোলার পর ২/৩ দিন দেরি হয়ে গেলে ওই পানিতে প্রাণী প্লাংটন জন্মাবে। যার কারণে কাঙ্খিত পরিমাণে পোনা উৎপাদন সম্ভব হবে না। অর্থাৎ প্রাণী প্লাংটনে কৈ মাছের রেনু ছোট হওয়ার কারণে রেনুগুলোকে সহজেই নষ্ট করতে পারে।

হাপা সেটিং ও প্রজনন কৌশল: 

জলের উচ্চতা ২ ফুট হলে ওই দিনই পুকুরে হাপা সেট করতে হবে। পুকুরে হাপা সেটিং করার পর বিকেলের দিকে অর্থাৎ তিনটা চারটার দিকে হাপা পুকুরে স্থাপন করে কৈ মাছগুলোকে ইঞ্জেকশনের জন্য বড় পাতিল করে পুকুরের কাছে আনতে হবে। এরপর পুকুরে স্থাপিত হাপায় মাছগুলোকে ইঞ্জেকশন করে হাপায় ভরতে হবে।

ইঞ্জেকশন প্রয়োগ পদ্ধতি: 

প্রতি কেজি স্ত্রী কৈ মাছকে ৭/৮ মি:গ্রা: পিজি দিয়ে ইঞ্জেকশন করতে হবে। প্রথমে ১ মি:লি: এর একটি ইনসুলিন সিরিঞ্জ নিতে হবে যে সিরিঞ্জে ৫০টি দাগ থাকতে হবে। বাজারে ১০০ দাগ সম্পন্ন পর্যন্ত ইনসুলিন সিরিঞ্জ পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে ৫০ দাগ মাত্রার সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত কৈ মাছের ক্ষেত্রে ১ কেজি মাছের জন্য ০.৫ মি: লি: জল ব্যবহার করা যায়। সেক্ষেত্রে প্রথমে ১ কেজি মাছের জন্য ৮ মি: গ্রা: পিজি একটি কাচের বাটিতে ভালভাবে পিষিয়ে তারপর ধীরে ধীরে ওই ১ মি:লি: পানি মেশাতে হবে। এভাবে ১ কেজি স্ত্রী কৈ মাছের ইঞ্জেকশনের জন্য দ্রবণ প্রস্তুত হয়ে গেল।

আমরা আগেই উল্লেখ করেছি যে, সিরিঞ্জে দাগ থাকবে ৫০টি। তা হলে প্রতিটি দাগের জন্য আমরা ২০ গ্রাম ওজনের মাছকে ইঞ্জেকশন করতে পারবো। যদি কোন মাছের ওজন ১০০ গ্রাম হয় তাহলে ৫ দাগ ওষুধ মিশ্রিত দ্রবণ ব্যবহার করতে হবে। এই হিসেবে সবগুলো স্ত্রী মাছকে ইঞ্জেকশন করে তারপর পুরুষ মাছকে ইঞ্জেকশন করতে হবে। ইঞ্জেকশন করে তারপর পুরুষ মাছকে ইঞ্জেকশন করতে হবে।

পুরুষ মাছের ক্ষেত্রে ১ কেজি মাছের জন্য মাত্র ৫ মি: গ্রা: পিজি মিশিয়ে উপরোউল্লেখিতভাবে প্রয়োগ করে সবগুলো স্ত্রী এবং পুরুষ মাছকে একসাথে হাপায় ভরতে হবে। এই পদ্ধতিতে রেনু উৎপাদনের জন্য থাই জাল (পলিথিন জাতীয়) দিয়ে একটি হাপা তৈরি করতে হবে। হাপার মাফ হবে দৈর্ঘ্যে দেড় মিটার প্রস্থে ছয় মিটার। হাপাটি সব দিক থেকেই একই নেট দিয়ে আবদ্ধ থাকতে হবে। আর তা না হলে প্রজননের সময় মাছ বেরিয়ে যেতে পারে।

প্রথমে এই হাপাটি তৈরি করার পর পুকুরে ১.৫/২ ফুট পানিতে করতে হবে। যাতে হাপাতে কমপক্ষে ১ ফুট পানি থাকে। হাপার উপরের অংশের এক কোণায় সামান্য খোলা রেখে মাছগুলোকে পি.জি. হরমোন দিয়ে ইঞ্জেকশন করার পর হাপার এক কোণার খোলা অংশ দিয়ে হাপাতে মাছগুলোকে ছেড়ে দিতে হবে। সাধারণত বিকেল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে মাছগুলোকে ইঞ্জেকশন দিয়ে হাপাতে ছাড়তে হবে। অর্থাৎ ৭/৮ঘন্টা পর অর্থাৎ গভীর রাতে মাছগুলো যাতে ডিম পাড়ার সময় হয়। এরপর সন্ধ্যার পর থেকে পুকুরের পাশে যে কোন শ্যালো দিয়ে ওই হাপার আশপাশ দিয়ে পানির প্রবাহ দিতে হবে। এভাবে ৫/৬ ঘন্টা জল দিলেই ওই হাপাতে কৈ মাছ ডিম পারবে। কৈ মাছের ডিমগুলো ভাসমান বিধায় ওই ডিমগুলো হাপার জালের ফাঁক দিয়ে অনায়াসে পুকুরে চলে যাবে।

আরও পড়ুন - হাঁস পালন গ্রামীণ অর্থনীতিতে বেকার যুবকদের আয়ের মাধ্যম (Poultry Farming - Source Of Income For Unemployed)

সকালের দিকে ডিমপাড়া শেষ হলে কৈ মাছসহ হাপাটিকে পানি থেকে উঠিয়ে ফেলতে হবে। পুকুরে শুধুমাত্র ভাসমান অবস্থায় ডিমগুলো থেকে যাবে। ডিম দেওয়ার ২০ ঘন্টার মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা বের হবে। বাচ্চা বের হওয়ার ৭২ ঘন্টা পর থেকে ডিম সিদ্ধ করে গ্লাস নাইলন কাপড় দিয়ে ছেঁকে রেনু পোনাকে খাবার দিতে হবে দিনে অন্তত ৩ বার। এবাবে ১ সপ্তাহ ডিমের কুসুম খাওয়ানোর পর নার্সারি ফিড দিতে হবে আরও ১৫ দিন। রেনু ফোটা থেকে ২২ দিনের মধ্যে পোনা তৈরি হয়ে যাবে। এভাবে পুকুরে হাপাতে কৈ মাছের ব্র“ড মাছকে ইঞ্জেকশন দিয়ে অনায়াসে ইচ্ছানুযায়ী রেনু এবং পোনা উৎপাদন করা সম্ভব।

খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ

১.কৈ মাছের রেনু ছাড়ার পরদিন থেকে পরের তিন দিন শতকে সকালে / দুপুরে / বিকালে ২ টি সিদ্ধ ডিমের কুসুম পানিতে মিশিয়ে ছিটিয়ে দিবেন (প্রতি বেলায়)।

২.৪র্থ দিন থেকে ৭ম দিন পর্যন্ত সকালে/দুপুর/বিকালে ২ টি সিদ্ধ ডিমের কুসুম, ৫০ গ্রাম আটা, পরিমাণ মত পানি মিশিয়ে পুকুরে ছিটিয়ে দিবেন (প্রতি বেলায়)।

৩. ৮ম দিন থেকে ১২তম দিন পর্যন্ত সকাল/দুপুর/বিকালে শতকে ১০০ গ্রাম করে ৪০% আমিষ সমৃদ্ধ নার্সারি পাউডার ছিটিয়ে দিবেন।

৪. ১৩ তম দিন থেকে ২০ তম দিন পর্যন্ত সকাল/দুপুর/বিকালে ২০০ গ্রাম করে নার্সারি পাউডার দিবেন।

৫. ২১ তম দিন থেকে ২৭ তম দিন পর্যন্ত সকাল/দুপুর/বিকালে শতকে ২৫০ গ্রাম করে নার্সারি পাউডার দিবেন। এর মধ্যেই রেনু পোনা গুলো মজুদ পুকুরে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তত হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন - জানুন ভেড়ার কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য ও খামারে ভেড়ার রোগ সংক্রমণ রোধের উপায় (Sheep Farming)

Published On: 04 March 2021, 12:54 PM English Summary: Procedure for artificially producing fish pollen

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters