ছাগল পশ্চিমবঙ্গের অতি গুরুত্বপূর্ণ পশু সম্পদ। ছাগল আমদের দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। উল্লেখ্য যে, এ রাজ্যের ছাগলের অধিকাংশই ব্ল্যাক বেঙ্গল প্রজাতির। বাংলার কালো ছাগল প্রজাতির নাম হলেও কালো রঙ ছাড়া বাদামী এবং সাদা রঙের প্রজাতির ছাগল কম সংখ্যায় দেখা যায়। তবে বাণিজ্যিকভাবে ছাগল পালনে ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করা দরকার।
- ছাগলকে রাস্তার ধার, পুকুর পাড়, জমির আল, পতিত জমি বা পাহাড়ের ঢালে বেঁধে বা ছেড়ে ৮ - ৯ ঘণ্টা ঘাস খাওয়াতে পারলে খুব উপকার হবে। এ ধরণের সুযোগ না থাকলে প্রতি ২০ কেজি ওজনের ছাগলের জন্য দৈনিক ০.৫ – ১ কেজি পরিমাণ কাঁঠাল, ইপিল, ঝিকা, বাবলা ইত্যাদি গাছের পাতা অথবা এদের মিশ্রণ দেওয়া যেতে পারে। প্রতিটি ছাগলকে দৈনিক ২৫০ - ৩০০ গ্রাম ঘরে প্রস্তুতকৃত দানাদার খাদ্য দেওয়া যেতে পারে।
- ১০ কেজি দানাদার খাদ্য মিশ্রণে যেসব উপাদান থাকা প্রয়োজন, তা হল- চাল ভাঙ্গা ৪ কেজি, ঢেঁকি ছাঁটা চালের কুঁড়া ৫ কেজি, খেসারি বা অন্য কোন ডালের ভুষি ৫০০ গ্রাম, মিনারেল মিক্সচার ২০০ গ্রাম এবং লবণ ৩০০ গ্রাম।
- ইউরিয়া দ্বারা প্রক্রিয়াজাত খড় ও সাইলেজ খাওয়ালে ভালো হয়। কারণ প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে আমিষের পরিমাণ বেশী থাকে এবং পরিপাকও ভালোভাবে হয়। জন্মের পর থেকেই ছাগল ছানাকে আঁশজাতীয় খাদ্য যেমন কাঁচা ঘাস ইত্যাদিতে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।
- দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর পর ছাগলকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পরিষ্কার জল খেতে দিতে হবে। বাড়ন্ত ছাগলকে দৈনিক প্রায় ১ লিটারের মতো জল পান করানো উচিৎ।
- কাঁচা ঘাস কম বা এর অভাব ঘটলে ছাগলকে ইউরিয়া - চিটা গুড় মেশানো খড় নিম্নোক্ত প্রণালীতে বানিয়ে খাওয়াতে হবে।
উপকরণ – ২ – ৩ ইঞ্চি মাপের কাটা খড় ১ কেজি, চিটা গুড় ২২০ গ্রাম, ইউরিয়া ৩০ গ্রাম ও জল ৬০০ গ্রাম। এবার জলেতে ইউরিয়া গুলে, তাতে চিটা গুড় দিয়ে খড়ের সাথে মিশিয়ে সরাসরি ছাগলকে দিতে হবে। খাসীর ক্ষেত্রে ৩ - ৪ মাস বয়সে দুধ ছাড়ানোর পর, নিয়মিত সঠিকভাবে এই প্রক্রিয়াজাত খাদ্য খাওয়ালে দৈনিক ৬০ গ্রাম করে দৈহিক ওজন বাড়ে ও এক বছরের মধ্যে ১৮ – ২২ কেজি ওজনপ্রাপ্ত হয়ে যায়। খাসীকে দৈহিক ওজনের ওপর ভিত্তি করে মোট ওজনের ৭ শতাংশ পর্যন্ত পাতা বা ঘাস জাতীয় খাদ্য, দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ (চাল ভাঙ্গা ৪০ শতাংশ, কুঁড়া ৫০ শতাংশ, ডালের ভুষি ৫ শতাংশ, লবণ ৩ শতাংশ এবং মিনারেল মিক্সচার ২ শতাংশ) দিতে হবে।
২০ কেজির বেশী হয়ে গেলে এদের দেহে চর্বির পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই এ সময় এদেরকে বাজারজাত কড়া উচিত। ছাগল খামারের খাদ্য খরচ মোট খরচের ৬০ – ৭০ শতাংশ হওয়া আবশ্যক। বাণিজ্যিক খামারের লাভ-লোকসান তাই খাদ্য ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভরশীল।
Share your comments