আজকাল গবাদি পশু পালকদের ছোট প্রাণী পালনের দিকে প্রবণতা আরও বাড়ছে, কারণ ছোট প্রাণী পালনে ব্যয় কম আর লাভের সম্ভাবনা অনেক বেশী রয়েছে। বর্তমানে, সারা দেশে ছাগলের অনেক উন্নত জাতের পালন করা হচ্ছে।
ছাগলের কোন উন্নত জাতের পালন করে ভাল লাভ করা যেতে পারে, তা অনেক সময় স্থানীয় গবাদি পশু পালকরা বুঝতে পারেন না। যদি আপনিও গবাদি পশুপালন ব্যবসায় জড়িত থাকেন তবে আজ আমরা সিরোহি এবং ব্ল্যাকবেঙ্গল ছাগল সম্পর্কে তথ্য দিতে চলেছি। এই ছাগলগুলি আমাদের রাজ্য সহ অন্যান্য রাজ্যের গবাদি পশুপালকরাও পালন করতে পারেন।
ছাগল পালন পদ্ধতি এবং উন্নত জাত (Goat Rearing) -
ব্ল্যাকবেঙ্গল প্রজাতির ছাগল (Black Bengal) –
এই জাতের ছাগলগুলি পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, উত্তর ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ড সহ অন্যান্য রাজ্যেও পাওয়া যায়। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বক্ষস্থল চওড়া, কান কিছুটা উপরের দিকে ও শিং ছোট থেকে মাঝারি আকৃতির হয়ে থাকে। দেহের গড়ন আঁটসাঁট, পা অপেক্ষাকৃত খাটো এবং লোম মসৃণ হয়।
ব্ল্যাকবেঙ্গল ছাগলের ওজন -
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ওজন প্রায় ১৮ থেকে ২০ কেজি হয়। ছাগীর ওজন ১৫ থেকে 18 কেজি হয়।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল থেকে দুধের উৎপাদন -
একটি মহিলা ছাগল প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ মাস ধরে ৩০০ থেকে ৪০০ মিলি দুধ দিতে পারে।
সিরোহি ছাগল (Sirohi Goat) -
এই প্রজাতির ছাগল রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ এবং গুজরাটে লালন-পালন করা হয়। এগুলি আকারে ছোট। এই জাতের ছাগলের দেহ বাদামী বর্ণের হয় এবং শরীরে হালকা বা বাদামী দাগ থাকে। এদের কান চ্যাপ্টা এবং ঝুলন্ত এবং শিং বাঁকা হয়।
সিরোহি ছাগলের ওজন -
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ছাগলের ওজন ৫০ কেজি এবং প্রাপ্ত বয়স্ক ছাগীর ওজন ৪০ কেজি হয়।
পুরুষ সিরোহির দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী সিরোহির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬২ সেমি।
সিরোহি ছাগল থেকে দুধের উৎপাদন -
এই প্রজাতির ছাগল প্রতি দিন ০.৫ কেজি থেকে ০.৬ কেজি দুধ দিতে পারে।
সিরোহি ছাগল -
এই প্রজাতির ছাগল রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ এবং গুজরাটে লালন-পালন করা হয়। এগুলি আকারে ছোট। এই জাতের ছাগলের দেহ বাদামী বর্ণের হয় এবং শরীরে হালকা বা বাদামী দাগ থাকে। এদের কান চ্যাপ্টা এবং ঝুলন্ত এবং শিং বাঁকা হয়।
সিরোহি ছাগলের ওজন -
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ছাগলের ওজন ৫০ কেজি এবং প্রাপ্ত বয়স্ক ছাগীর ওজন ৪০ কেজি হয়।
পুরুষ সিরোহির দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী সিরোহির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬২ সেমি।
সিরোহি ছাগল থেকে দুধের উৎপাদন -
এই প্রজাতির ছাগল প্রতি দিন ০.৫ কেজি থেকে ০.৬ কেজি দুধ দিতে পারে।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা –
ছাগলকে রাস্তার ধার, পুকুর পাড়, জমির আল, পতিত জমি বা পাহাড়ের ঢালে বেঁধে বা ছেড়ে ৮ - ৯ ঘণ্টা ঘাস খাওয়াতে পারলে খুব উপকার হবে। এ ধরণের সুযোগ না থাকলে প্রতি ২০ কেজি ওজনের ছাগলের জন্য দৈনিক ০.৫ – ১ কেজি পরিমাণ কাঁঠাল, ইপিল, ঝিকা, বাবলা ইত্যাদি গাছের পাতা অথবা এদের মিশ্রণ দেওয়া যেতে পারে। প্রতিটি ছাগলকে দৈনিক ২৫০ - ৩০০ গ্রাম ঘরে প্রস্তুতকৃত দানাদার খাদ্য দেওয়া যেতে পারে।
১০ কেজি দানাদার খাদ্য মিশ্রণে যেসব উপাদান থাকা প্রয়োজন, তা হল- চাল ভাঙ্গা ৪ কেজি, ঢেঁকি ছাঁটা চালের কুঁড়া ৫ কেজি, খেসারি বা অন্য কোন ডালের ভুষি ৫০০ গ্রাম, মিনারেল মিক্সচার ২০০ গ্রাম এবং লবণ ৩০০ গ্রাম।
ইউরিয়া দ্বারা প্রক্রিয়াজাত খড় ও সাইলেজ খাওয়ালে ভালো হয়। কারণ প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে আমিষের পরিমাণ বেশী থাকে এবং পরিপাকও ভালোভাবে হয়। জন্মের পর থেকেই ছাগল ছানাকে আঁশজাতীয় খাদ্য যেমন কাঁচা ঘাস ইত্যাদিতে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।
দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর পর ছাগলকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পরিষ্কার জল খেতে দিতে হবে। বাড়ন্ত ছাগলকে দৈনিক প্রায় ১ লিটারের মতো জল পান করানো উচিৎ।
আরও পড়ুন - পশুপালন খাত উন্নত করতে সরকারের ৫০০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রচলন
কাঁচা ঘাস কম বা এর অভাব ঘটলে ছাগলকে ইউরিয়া - চিটা গুড় মেশানো খড় নিম্নোক্ত প্রণালীতে বানিয়ে খাওয়াতে হবে।
উপকরণ – ২ – ৩ ইঞ্চি মাপের কাটা খড় ১ কেজি, চিটা গুড় ২২০ গ্রাম, ইউরিয়া ৩০ গ্রাম ও জল ৬০০ গ্রাম। এবার জলেতে ইউরিয়া গুলে, তাতে চিটা গুড় দিয়ে খড়ের সাথে মিশিয়ে সরাসরি ছাগলকে দিতে হবে। খাসীর ক্ষেত্রে ৩ - ৪ মাস বয়সে দুধ ছাড়ানোর পর, নিয়মিত সঠিকভাবে এই প্রক্রিয়াজাত খাদ্য খাওয়ালে দৈনিক ৬০ গ্রাম করে দৈহিক ওজন বাড়ে ও এক বছরের মধ্যে ১৮ – ২২ কেজি ওজনপ্রাপ্ত হয়ে যায়। খাসীকে দৈহিক ওজনের ওপর ভিত্তি করে মোট ওজনের ৭ শতাংশ পর্যন্ত পাতা বা ঘাস জাতীয় খাদ্য, দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ (চাল ভাঙ্গা ৪০ শতাংশ, কুঁড়া ৫০ শতাংশ, ডালের ভুষি ৫ শতাংশ, লবণ ৩ শতাংশ এবং মিনারেল মিক্সচার ২ শতাংশ) ২০ কেজির বেশী হয়ে গেলে এদের দেহে চর্বির পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই এ সময় এদেরকে বাজারজাত কড়া উচিত। ছাগল খামারের খাদ্য খরচ মোট খরচের ৬০ – ৭০ শতাংশ হওয়া আবশ্যক। বাণিজ্যিক খামারের লাভ-লোকসান তাই খাদ্য ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভরশীল।
ছাগলের দাম -
এই জাতের দাম পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা।
আরও পড়ুন - রাজ্যের বেকার যুবকদের কম মূলধন বিনয়োগ করে অধিক লাভজনক মাছ চাষের মাধ্যমে জীবিকা অর্জন
Share your comments