যেসব মাছ পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় ৫–২৫ সে.মি. আকারের হয় সাধারণত সেগুলোকে ছোট মাছ বলা হয। প্রাচীনকাল থেকে মলা, পুঁটি, চেলা, চান্দা, চাপিলা, মেনি, বাইম, খলিশা, টেংরা, ফলি, পাবদা, শিং, মাগুর ইত্যাদি ছোট মাছ এ দেশের মানুষের বিশেষ করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য তালিকার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে। বিভিন্ন প্রজাতির এসব ছোট মাছে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থসহ খাদ্য ও পুষ্টিমান অনেক বেশি। পরিবেশের পরিবর্তন, আবাসস্থালেরর সংকোচন পুকুর জলাশয় সম্পূর্ণ সেচ করে সব মাছ ধরে ফেলা ও মনুষ্যসৃষ্ট নানাবিধ কারণে এসব প্রজাতির মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। দেশের সামগ্রিক মৎস্য উৎপাদন ও প্রাচুর্য্যতায় ছোট মাছের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
ছোট মাছের গুরুত্ব(Benefits of small fish):
১) ছোট মাছে প্রচুর পরিমাণ আমিষ এবং অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিড বিদ্যমান।
২) মলা–পুঁটি মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ আছে যা রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
৩) গর্ভবতী মহিলা ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের রক্তশূন্যতা থেকে রক্ষায় ছোট মাছ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
৪) প্রাকৃতিক জনজ পরিবেশে এরা বংশ বিস্তার করে। ফলে প্রতি বছর আলাদা করে পোনা মজুদ করতে হয় না।
৫) সব ধরণের জলাশয়ে এদের চাষ করা যায় এবং চাষে সময়ও কম লাগে।
৬) ছোট মাছ ওজনের অনুপাতে সংখ্যায় বেশি হয় বলে পরিবারের সদস্যদের মাঝে বন্টনের সুবিধা হয়।
আরও পড়ুন -Shing Fish Farming: পুকুরে লাভজনক শিং মাছ চাষ করে দ্বিগুন উপার্জন করুন
মলা, চেলা ও পুঁটির চাষ:
মাছ চাষের বৈশিষ্ট্য:
একক ও মিশ্র উভয় পদ্ধতিতে চাষ করা হয়।প্রাকৃতিকভাবে বছরে ২–৩ বার প্রজনন করে থাকে।
সহজ ব্যবস্থাপনায় চাষ করা যায়।যে কোন ছোট জলাশয়ে চাষ করা যায়।
পুকুর নির্বাচন:
জলাশয়টি বন্যামুক্ত হতে হবে। জলের গভীরতা ১–১.৫ মিটার হলে ভালো হয়। জলাশায়ে আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
প্রস্তুতি, পোনা মজুদ, খাদ্য ও সার প্রয়োগ:
পুকুরের পাড় মেরামত করে শতাংশ প্রতি ১ কেজি চুন ও ৪–৫ কেজি গোবর প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের ৩–৪ দিন পর প্রাকৃতিক খাদ্য জন্মালে ছোট মাছ ছাড়তে হবে। একক চাষের ক্ষেত্রে শতাংশ প্রতি ৪০০–৫০০টি মলা/ঢেলা/পুঁটি চাষ করা যায়। মাছ ছাড়ার পরদিন হতে মাছের দেহ ওজনের শতকরা ৫
১০% হিসাবে চালের কুঁড়া, গমের ভূষি ও সরিষার খৈল সম্পূরক খাবার হিসেবে দেওয়া যেতে পারে।প্রাকৃতিক খাবার তৈরির জন্য ৭দিন অন্তর অন্তর শতাংশ প্রতি ৫–৬ কেজি গোবর অথবা ২–৩ কেজি হাঁস–মুরগির বিষ্ঠা দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
রুইজাতীয় মাছের সাথে মলা–পুঁটির মিশ্র চাষ(Mixed fish farming):
পুকুর নির্বাচন:
দো–আঁশ ও এটেল দো–আঁশ মাটির পুকুর ভালো।পুকুর/জলাশয় বন্যামুক্ত এবং মাঝারী আকারের হলে ভালো হয়।পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ে এমন পুকুর নির্বাচন করা উচিত। জলের গভিরতা ১–১.৫ মিটার হল ভালো।
পুকুর প্রস্তুতি:
পাড় মেরামত ও আগাছা পরিস্কার করতে হবে। রাক্ষুসে ও ক্ষতিকর প্রাণী অপসারণ করতে হবে শতাংশে ১ কেজি করে চুন প্রয়োগ করতে হবে। চুন প্রয়োগের ৭–৮ দিন পর শতাংশ প্রতি ৫–৭ কেজি গোবর ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম টিএসপি সার দিতে হবে।
পোনা মজুদ, খাদ্য ও সার প্রয়োগ:
শতাংশ প্রতি ১০–১৫ সে.মি. আকারের ৩০–৩২টি রুইজাতীয় পোনা এবং ৫–৬ সে.মি. আকারের ৬০টি মলা ও ৬০টি পুঁটি মাছ মজুদ করা যায়।মাছের পোনা মজুদের পরদিন থেকে পোনার দেহের ওজনের শতকরা ৫–১০ ভাগ হারে সম্পূরক খাবার হিসেবে খৈল, কুড়া, ভূষি দেয়া যেতে পারে। গ্রাস কার্পের জন্য কলাপাতা, বাধা কপির পাতা, নেপিয়ার বা অন্যান্য নরম ঘাস দেয়া যেতে পারে। মলা–পুঁটি মাছের জন্য বাড়তি খাবার দরকার নাই। প্রাকৃতিক খাবার জন্মানোর জন্য পোনা ছাড়ার ১০ দিন পর শতাংশ প্রতি ৪–৬ কেজি গোবর, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।
মাছ আহরণ:
পোনা মজুদের ২ মাস পর হতে ১৫ দিন পর পর বেড় জাল দিয়ে মলা–পুঁটি মাছ আংশিক আহরণ করতে হবে।৭৫০–৮০০ গ্রাম থেকে কেজি ওজনের কাতলা ও সিলভার কার্প মাছ আহরণ করে সমসংখ্যক ১০–১২ সে.মি. আকারের পোনা পুনরায় মজুদ করতে হবে।
আরও পড়ুন - Star Fruit Cultivation: জেনে নিন ছাদে কামরাঙার চাষ পদ্ধতি
Share your comments