শুধুমাত্র যে মানুষের খাদ্যই চাষোপযুক্ত হয় তাই নয়, এর সাথে সাথে প্রাণি জগতের খাদ্য উৎপাদনের জন্যও বিভিন্ন চাষাবাদের প্রয়োজন হয়। মাছের খাদ্য প্রস্তুতের অন্যতম উপাদান শামুক। যা পুকুরে বা ডোবায় অতি সহজেই পাওয়া যায়। তবেই আজকাল শামুক ব্যবসায়িক ভাবেও চাষ হচ্ছে। শামুক চাষ করে মোটা অংকের টাকা রোজগার বহু চাষিরা আজকাল করছেনও বটে। জলজ প্রাণী হিসাবে শামুক চাষ দিনের পর দিনে পুকুর অথবা বিলে গ্রামীণ মানুষদের দ্বারা হয়ে চলেছে। এই ব্যবসায় বিনিয়োগও কম সাথে, অল্প পুঁজিতেই এই চাষে নামা যায় বলে বহু মানুষ আজকাল এই চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
শামুক চাষে দরকার কোনও ছোট পুকুর বা ডোবা। যেই পুকুর কোনও ভাবেই ব্যবহার করা হচ্ছে না, সেই পুকুরে শামুকের চাষ ব্যবসায়িক ভাবে করাই যেতে পারে। এই প্রাণীর বংশবিস্তারের ক্ষমতা বেশি হওয়ায় সহজেই এই চাষ অর্থনৈতিক সম্পদ বৃদ্ধিতে করা যেতে পারে।
শামুক চাষের উপায়: (Snail Farming)
প্রতি ডেসিম্যাল অনুযায়ী একটি পুকুরের জলে এক কেজি গোবর, এক কেজি সর্ষে খোল ও ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া উত্তম ভাবে মিশ্রিত করতে হবে। তিন দিন পরপর এই মিশ্রণ জলে মেশাতে হবে। খোল দেওয়ায় জলের রং আস্তে আস্তে গাঢ় সবুজ বর্ণ ধারণ করলে পুকুরটি শামুক চাষের জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠবে। এবার নামতে হবে শামুক সংগ্রহের পালায়। শামুক যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া গেলে, ডেসিম্যাল প্রতি ২৫০ গ্রাম শামুক গোটা পুকুরে ছড়িয়ে দিতে হবে। দেখতে দেখতে ১০-১৫ দিনের ভেতরই গোটা শামুক গোটা পুকুরে ব্যাপক ভাবে বংশবিস্তার করবে। ৪০ দিনের মধ্যে শামুকগুলি পূর্ণবয়স্ক হয়ে উঠবে। চাষ পদ্ধতি চালু হওয়ার প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ দিন বাদে শামুকগুলি জল থেকে তুলে ফেলতে হবে। শামুক তোলার জন্য জলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে বাঁশ গেঁথে রাখতে হবে, এর ফলে শামুকগুলি ওই বাঁশগুলির গায়ে লেগে থাকবে। শামুক তোলার সময় ওই বাঁশগুলি উঠিয়ে বাঁশের গায়ে লেগে থাকা শামুক ছাড়িয়ে নিতে হবে।
শামুক দিয়ে মাছের খাদ্য বানানোর প্রণালী (Snail as a Fish Food)
শামুকগুলি দিয়ে মাছের খাবার বানাতে হলে সেগুলিকে ভেঙে রোদে শুকাতে হবে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর সেগুলিকে মেশিনের সাহায্যে গুঁড়ো করে নিতে হবে। শামুক গুঁড়ো অন্যান্য খাবার উপাদানের সাথে মিশিয়ে নেওয়া হয়ে গেলে, পিলেট মেশিনের সাহায্যে মাছের খাবার বানিয়ে নিতে হবে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করে শামুক দিয়ে খাবার তৈরী করলে, মাছের উৎপাদন খরচ অনেকাংশে কমে যাবে সাথে সাথে মাছের আসল স্বাদও বজায় থাকবে। মাছের স্বাস্থ্যগত গুণাগুণও এই খাদ্য খেলে ভালো থাকবে। চেষ্টা করতে হবে, যেই শামুক চাষ হচ্ছে তা বিক্রির যেন বাজার তৈরী করা যায়। একবার বাজার পেয়ে গেলে প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপার্জন কোনও ব্যাপারই হবে না।
আরও পড়ুন:Balsam Farming Complete Guideline: দোপাটি ফুলের চাষ করে হয়ে উঠুন আদর্শ ফুল চাষি
মাছের খাদ্যর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান শামুক চাষ করতে খুবই কম বিনিয়োগ এবং পুঁজির দরকার পড়ে বলে এই চাষ করা অত্যন্ত অর্থনৈতিক ভাবে সুবিধাজনক। যত্ন করে শামুক চাষ করলে একটি পুকুর বা জলাশয় থেকে বছরে কম হলেও চারটি পর্যায়ে চার থেকে ছয় মেট্রিক টন শামুক উৎপাদনা করা কোনও ব্যাপারই নয়। দিনের পর দিন মাছের খাদ্য হিসাবে শামুকের ব্যবহার বাড়ায়, এই জলচর প্রাণীর চাষের পরিমাণ অনেকাংশে বেড়েছে। বহু মানুষ এই চাষে কম পুঁজিতে অধিক অর্থাগমের আশায় বিনিয়োগ করা শুরু করেছেন। ভবিষ্যতেও শামুক চাষ থেকে অর্থগত অনেক সুবিধা মিলতে পারে বলে মৎস্য বিজ্ঞানীদের অভিমত। তাই বিনা দ্বিধায় শামুক চাষ শুরু করুন, আর পরিচয় দিন বুদ্ধিমত্ততার।
আরও পড়ুন:Indian Pearl Culture: ভারতীয় মুক্ত চাষের বিশেষত্ব ও সাফল্য
Share your comments