(World Fisheries Day) আজ ২১ শে নভেম্বর বিশ্ব মৎস্য দিবস পালন আঙ্গিকে মানসম্পন্ন জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যকরী খাদ্য হিসাবে মাছ এর ভূমিকা

(World Fisheries Day) প্রতি বছর ২১ শে নভেম্বর বিশ্ব মৎস্য দিবস পালন করা হয়। অতিরিক্ত মাছ ধরা, অযাচিত মাছ ধরা কৌশল, আবাসস্থল ধ্বংস, মাছ ধরার অপ্রতুল পদ্ধতি এবং মিষ্টি জল ও সামুদ্রিক সম্পদের অন্যান্য হুমকির মতো মত্স্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিশ্ব মৎস্য দিবস উদযাপিত হয়। মুখ্যত এই দিন পালনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর জলজ বাস্তুতন্ত্রের গুরুত্ব তুলে ধরে, এটি বিশ্বের মৎস্যজীবনের টেকসই স্টককেও নিশ্চিত করে।

KJ Staff
KJ Staff
the role of fish as an important effective food
World Fisheries Day

আজ ২১ শে নভেম্বর বিশ্ব মৎস্য দিবস, একদিকে যেমন বিশ্ব মৎস্য দিবস পালনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক জলাশয় তথা জলজ সম্পদের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার প্রয়োজন তেমনি মানসম্পন্ন জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যকরী খাদ্য হিসাবে মাছ এর ভূমিকা জানা দরকার। এই বিষয়ে আলোকপাত করলেন সুমন কুমার সাহু, মৎস্যচাষ সম্প্রসারণ আধিকারিক, হলদিয়া।

প্রতি বছর ২১ শে নভেম্বর বিশ্ব মৎস্য দিবস পালন করা হয়। অতিরিক্ত মাছ ধরা, অযাচিত মাছ ধরা কৌশল, আবাসস্থল ধ্বংস, মাছ ধরার অপ্রতুল পদ্ধতি এবং মিষ্টি জল ও সামুদ্রিক সম্পদের অন্যান্য হুমকির মতো মত্স্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিশ্ব মৎস্য দিবস উদযাপিত হয়। মুখ্যত এই দিন পালনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর জলজ বাস্তুতন্ত্রের গুরুত্ব তুলে ধরে, এটি বিশ্বের মৎস্যজীবনের টেকসই স্টককেও নিশ্চিত করে।

মৎস্য ও জলজ পালন বিশ্বজুড়ে ৪৩.৫ মিলিয়নেরও বেশি লোককে নিয়োগ দেয়। মৎস্যসম্পদ ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত, যা দেশের খাদ্য সুরক্ষায় অবদান ছাড়াও লক্ষ লক্ষ মানুষকে কর্মসংস্থান সরবরাহ করে। ভারতে 8,000 কিলোমিটারেরও বেশি উপকূলরেখা রয়েছে এবং ২ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটারের একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইইজেড) বিস্তৃত রয়েছে। দেশের  জিডিপিতে (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) প্রায় ১.০7 শতাংশ অবদান রেখে এই মৎস্যজীবীরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

অভ্যন্তরীণ ফিশারিও আমাদের দেশে ফিশারিগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ভারতের মিস্টি জলের সংস্থানগুলি নিয়ে গঠিত: নদী এবং খাল (১৯৭,০২৪ কিমি), জলাধার (৩.১৫ মিলিয়ন হেক্টর)

পুকুর এবং ট্যাঙ্ক (২৩৫ মিলিয়ন হেক্টর), অক্সবো হ্রদ এবং অবরুদ্ধ জল (১.৩ মিলিয়ন হেক্টর)

ব্র্যাকিশওয়াটারস (১.২৪ মিলিয়ন হেক্টর) এবং মোহনা (০.২৯ মিলিয়ন হেক্টর)

পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একমাত্র রাজ্য যা হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত এবং অক্ষাংশ  ২১º৩৮ 'N - ২৭º১০' N এবং দ্রাঘিমাংশ ৮৫º38 'E ৮৯.৫০' E এর মধ্যে অবস্থিত। পশ্চিমবঙ্গ এর মৎস্যসম্পদ বাস্তুতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে, জলাভূমিতে উপস্থিত প্রজাতির বৈচিত্র্য সামগ্রিকভাবে জলজ জীব বৈচিত্র্যের ইস্যুর আপেক্ষিক গুরুত্বের ইঙ্গিত দেয়। পশ্চিমবঙ্গ পুকুর ও ট্যাঙ্কগুলি (২.৮৮ লক্ষ হেক্টর), বিল ও ভেড়ি (০.৪১ লক্ষ হেক্টর), জলাশয় (০.২৭ লক্ষ হেক্টর), ২২ টি নদীর নিষ্কাশন অববাহিকা (১.৭২ লক্ষ হেক্টর) আকারে ০.০৮ লক্ষ হেক্টর এবং খাল (0.৮০ লক্ষ হেক্টর) মিস্টি জলের মৎস্য সম্পদ সমৃদ্ধ।

পশ্চিমবঙ্গ এর বিশাল মাছের বৈচিত্র্য। ফলস্বরূপ, প্রাকৃতিক জল সম্পদের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ মাছ উৎপাদনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। অতএব, এই রাজ্যে মৎস্য বিকাশের জন্য বিশাল সুযোগ রয়েছে। জীববৈচিত্র্য বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিশীলকরণে, পৃথিবীর সমস্ত প্রজাতির অন্তর্নিহিত মূল্য গ্রহণের জন্য সামগ্রিক পরিবেশগত মান রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পশ্চিমবঙ্গ এর মাছ উত্পাদন  ২০১৭-১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী সামুদ্রিক মাছের আহরণ ১৮৫৪৮৪ মেট্রিক টন,  অভ্যন্তরীণ মাছ উত্পাদন ১৫৫৬৭২৮ মেট্রিক টন এবং  মোট মাছের উত্পাদন ১৭৪২২১২ মেট্রিক টন।

মাছ বিশ্বের প্রায় ২৫% এরও বেশি প্রোটিন সরবরাহ করে। কার্যকরী খাদ্য এমন খাদ্য যা মৌলিক পুষ্টির বাইরে স্বাস্থ্য বেনিফিট সরবরাহ করে। মাছ আসলে কার্যকরী খাদ্য. মাছ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলির উত্স: প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, খনিজ এবং ভিটামিন, পেপটাইড এবং লিপিড এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড।

প্রাণিজ আমিষের মধ্যে মাছের আমিষ সবচেয়ে সস্তা ও সহজলভ্য। মাছের শতকরা ২০ ভাগই আমিষ। মাছে আছে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ লবণ এছাড়াও মাছে চর্বি, খনিজ তেল, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস পাওয়া যায়। এছাড়াও ছোট মাছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-এ আছে। ভিটামিন-এ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়ে থাকে। একজন মানুষের প্রতিদিনের ভিটামিনের চাহিদা মেটাতে কয়েকটি ছোট মাছই যথেষ্ট

আবার মাছের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও লৌহ। ক্যালসিয়াম মানুষের হাড় ও দাঁতের উপাদান গঠন করে এবং ভিটামিন বিশোষণ ও রক্তে জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়ামের অভাবে শিশুদের রিকেট ও বড়দের অষ্টিও রোগ হয়ে থাকে। ফসফরাস হাড়, পেশী ও রক্ত গঠনে সক্রিয় অংশ নেয়। লৌহ মানবদেহের লোহিত কনিকায় হিমোগ্লোবিন তৈরির প্রধান উপাদান হিসেবে কাজ করে।

Expert advisory
Suman Kumar Sahoo (FEO, Haldia, WB)

বিজ্ঞানীদের মতে যারা বেশী মাছ খায় তাদের স্মরণশক্তি ও বোঝার ক্ষমতা প্রখর হয়। তার কারণ হিসেবে বলা হযে থাকে যে, মাছে বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছে মেধা বৃদ্ধিকারক ডি.এইচ.এ (Docosahexaenoic acid) নামক এক ধরণের ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা মাছের তেলে যথেষ্ঠ পরিমাণে থাকলেও অন্যান্য আমিষ জাতীয় খাদ্যে খুব একটা পাওয়া যায় না।

মাছের তেলে ওমেগা থ্রি এম নামে এক ধরনের অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড আছে যা রক্তের অণুচক্রিকাকে জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। ফলে রক্তনালী বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা কমে যায়। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছের তেল রক্তে কোলেস্টেরল কমায়, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। এছাড়া মাছের কোলেষ্টেরলও মানুষের দেহের জন্য ক্ষতিকারক নয়।

ছোট মাছ আকারে ছোট হলেও পুষ্টিতে ছোট নয়।  ছোট মাছে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। কাঁটাসহ ছোট মাছ ক্যালসিয়ামের এক অনন্য উপাদান। তাই ছোট মাছ খাওয়ার আর একটা বিশেষ দিক হলো যে, এই সব ছোট মাছ কাঁটাসহ খাওয়া যায়, তা থেকে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম পেতে পারি। মৌরলা, ঢেলা, চাঁদা, পুঁটি, ছোট চিংড়ি ইত্যাদি জাতীয় মাছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং ভিটামিন ‘এ’ বিদ্যমান। মানবদেহে দৈনিক প্রচুর ক্যালসিয়ামের চাহিদা থাকে। বিশেষ করে বাড়ন্ত শিশু, গর্ভবতী মা এবং প্রসূতি মায়েদের ক্যালসিয়ামের চাহিদা আরও বেশি। হাড় ও দাঁত গঠনে ক্যালসিয়াম অত্যন্ত দরকারি। তাই প্রতিদিন আমাদের ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ ছোট মাছ খাওয়া উচিত।

উঠতি বয়সী শিশুদের জন্য প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-৩ এবং ভিটামিন ডি যুক্ত গুঁড়া মাছ খুবই উপকারী। 

ছোট মাছে অসম্পৃক্ত চর্বি আছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এ ছাড়া আয়রন, প্রোটিন, ফসফরাস, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি২, ফ্যাটি অ্যাসিড, লাইসনি ও মিথিওনিনেরও ভাল উৎস ছোট মাছ।

তাই বলা যায় যে প্রাণিজ আমিষের মূল যোগানদাতা মাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ফলশ্রুতিতে শরীর সুস্থ থাকার সম্ভাবনাও বাড়বে। আর বলা হয়ে থাকে সুস্থ দেহে সুস্থ মন । 

যাইহোক , আসুন আমরা একদিকে যেমন মাছের স্বাস্থ্যকর ও রোগপ্রতিরোধক বিষয়ে অবগত হয়ে এই করোনা অতিমারির মতো সকল বিষয়ে লড়াই করব তেমন জলাভূমি সংরক্ষণ সহ পরিবেশ সচেতন ভূমিকা পালন করি। আর এর সাথে ভূলবনা সেসব মৎস্যচাষি, মৎস্যজীবী যারা নিরলস ভাবে পরিশ্রমের ফসল ফলাচ্ছে। 

ওয়ার্ল্ড ফিসারিজ ডে'র শুভেচ্ছা জানাই। 

নিবন্ধ - সুমন কুমার সাহু, মৎস্যচাষ সম্প্রসারণ আধিকারিক, হলদিয়া, পূর্বমেদিনীপুর

Image source - Google

Related link - ওয়ার্ল্ড মিল্ক ডে (World Milk Day) প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ পান করুন এবং সুস্থ থাকুন

Published On: 21 November 2020, 01:27 PM English Summary: Today, 21st November, World Fisheries Day, the role of fish as an important effective food for quality of life

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters