
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্যের তাগিদে শস্য উত্পাদন বৃদ্ধিও একান্ত আবশ্যক এবং সুস্থায়ী কৃষিতে ফসল উত্পাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল শস্য পরিচর্যা ও সুরক্ষা। একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা গেছে, গ্রামীণ অঞ্চলের পরিবারগুলির মধ্যে এখনও ৭০ শতাংশ মানুষ কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল এবং তাদের মধ্যে ৮২ শতাংশ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী। সুতরাং কৃষিক্ষেত্রে তো নিযুক্ত রয়েছেন অনেকেই, কিন্তু শস্য সুরক্ষা ও পরিচর্যার বিষয়ে কতটা ওয়াকিবহাল আমাদের প্রান্তিক কৃষকবন্ধুরা ? এই ক্ষেত্রে প্রধান পদ্ধতিগুলি বা কী কী?
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, কৃষকরা যদি ফসল সুরক্ষার পদ্ধতিগুলি প্রয়োগ করা বন্ধ করে দেয়, তবে শস্যে কীটপতঙ্গ এবং রোগ-পোকার আক্রমণের কারণে অবিলম্বে তাদের ফসলের উৎপাদন প্রায় ৪০ শতাংশ হ্রাস পাবে। সম্প্রতি বায়োসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা থেকে জানা গেছে যে, সামগ্রিক খাদ্য উত্পাদন ২০৫০ সালের মধ্যে ২৫-৭০% বৃদ্ধির প্রয়োজন। কারণ বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী প্রায় ২.২ বিলিয়ন মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাবার রয়েছে। অর্থাৎ জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি জরুরী অবশ্যই, কিন্তু মাতৃস্বরূপা জমির উপর অত্যাচার না করে সঠিক পদ্ধতিতে শস্য সুরক্ষার বিষয়টিতে মনোনিবেশ করতে হবে।
ক্রপ রোটেশন শস্য পরিচর্যার অপর একটি দিক। বারংবার একই শস্য জমিতে আবাদ করলে সেই মাটির উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায়। জলবায়ু এবং মাটির অবস্থা বুঝে কৃষকদের বৈচিত্র্যময় ফসল চাষ করতে হবে। প্রায় ৭০% পরিষ্কার জল বিশ্বজুড়ে কৃষি প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। সর্বোপরি, মাটির আর্দ্রতার স্তরটি উদ্ভিদের স্বাস্থ্য এবং সর্বাধিক ফসল বজায় রাখার মূল চাবিকাঠি। স্বাভাবিকভাবেই মাটির উর্বরতা, আর্দ্রতা স্তর, সেচ ব্যবস্থা, রাসায়নিক কৃষিবিষের ব্যবহার কমিয়ে জৈব কীটনাশক ব্যবহার- এ সকল দিকই কৃষককে মনে রাখতে হবে।

পরিশেষে বলা যায়, পরিবেশ দূষণ ও চাষের পদ্ধতির ক্রমবিবর্তনে বাংলার কৃষি জমির পরিবর্তন ঘটেছে। অনির্বচনীয়ভাবে রাসায়নিকের প্রয়োগে ফসল উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও শস্য হারিয়েছে তার পুষ্টিগুণ। এর কারণ অবশ্যই জনবিস্ফোরণ, নগরায়ন ও শিল্পায়ন। কিন্তু ফসলের পুষ্টিগুণ বজায় রেখে ন্যূনতম অপচয়ে উচ্চমানের ফসল উৎপাদন করা এবং শস্য পরিচর্যা ও তার সুরক্ষা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এর জন্য রাসায়নিকের ব্যবহারের পরিমাণ যতটা সম্ভব কমিয়ে ফসল উৎপাদনে ব্যবহার করতে হবে জৈব প্রযুক্তি। এতে রাসায়নিক প্রয়োগের তুলনায় অপেক্ষাকৃত খরচ একটু বেশী এবং উৎপাদন সামান্য কম হলেও তা মানুষের এবং প্রাণীর স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করবে না। শুধু আমাদের কৃষক বন্ধুদের সচেতন করতে হবে, বর্তমানে অধিক মাত্রায় রাসায়নিক প্রয়োগে উচ্চ ফলনের আকাঙ্খা ত্যাগ করে ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তার দিকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে, তবেই নদীমাতৃক এই বাংলায় পরিপূরক খাদ্যের অভাব আর থাকবে না, আবার উচ্চকণ্ঠে প্রকৃত অর্থে উচ্চারিত হবে – ‘সুজলাং সুফলাং মলয়জশীতলাম্, শস্যশ্যামলাং মাতরম্’।
Related link - নভেল করোনা ভাইরাসের কৃষিতে (Impact of Covid-19 on agriculture) প্রভাব
Share your comments