মুসুর ডালে তিন ধরনের রোগ হতে পারে।
১) গোড়া ও শিকড় পচা রোগ
রোগের কারণ - ফিউজারিয়াম অক্সিসপোরাম , ফিউজারিয়াম সোলানি এবং স্ক্লেরোশিয়াম রফ্সাই নামক ছত্রাকের আক্রমণে মুসুর ডালে এই রোগ হয়ে থাকে। মাটিতে জৈব সার বেশি থাকলে জীবাণুরা বেশি আক্রমণ করে। তাছাড়া মাটির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে এই জীবাণুরা বেশী আক্রমণ করে।
রোগের লক্ষণ -
১) সাধারণত চারা গাছ এই রোগে আক্রান্ত হয়, কিন্তু বড় গাছও হতে পারে।
২) বড় গাছ আক্রান্ত হলে পাতা ঝড়ে পরে।
৩) প্রথমে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায় পরে পুরো গাছ হলুদ হয়ে যায়।
৪) গাছকে টানলে উপরের অংশ ছিঁড়ে আসে।
৫) হলুদ চারাগুলো শুকিয়ে যায়।
৬) গাছের গোড়া এবং শিকড় শুকিয়ে যায়।
রোগের প্রতিকার
১) ফসল সংগ্রহের পর বাকী অংশ পুড়িয়ে দিতে হবে।
২) রোগে আক্রান্ত গাছকে তুলে ফেলতে হবে।
৩) কার্বেন্ডাজিম অথবা কার্বোক্সিল + থিরাম প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করতে হবে।
৪) ফসলের গোড়ার চারিদিকের মাটি শুকনো করলে জীবাণু থেকে ফসলকে অনেকটা বাঁচানো যেতে পারে।
২) মরিচা রোগ
রোগের কারণ - ইউরোমাইসিস ভিসিয়া-ফেবেই নামক ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগ হয়ে থাকে। জানুয়ারী মাসের মাঝখান থেকে ফেব্রুয়ারী মাসে এই রোগ বেশী দেখা যায়। তাপমাত্রা ১৬-২২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট হলে এই রোগ আরো বেড়ে যায়।
রোগের লক্ষণ -
১) এই রোগ ফুল আসার সময় হয়।
২) পাতায় মরিচা রঙের ছোটো ফোস্কা দেখা যায়।
৩) গাছ গাঢ় বাদামী বা কালো রঙের হয়ে যায়।
৪) পাতা ঝরে যায়।
৫) ফল পাকার আগেই গাছ শুকিয়ে যায়।
রোগের প্রতিকার -
১) নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বীজ বপন করতে হবে।
২) জমিতে অতিরিক্ত ইউরিয়া ও জৈবসার না দেওয়াই ভালো।
৩) যে সব মুসুরের ডাল রোগে কম আক্রান্ত হয় তাদের চাষ করা ভালো যেমন- বারি মুসুর- ৫, ৬, ৭ ও ৮।
৪) ফসল তোলার পর আক্রান্ত জমির অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৩) স্টেমফাইলিয়াম ব্লাইট রোগ
রোগের কারন -
স্টেমফাইলিয়াম বোট্রাওসাম ও স্টেমফাইলিয়াম সারসিনিফরমিস নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তার -
জানুয়ারী মাসের প্রথমদিকে এই রোগ দেখা যায়। রাতের তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি ও দিনের তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি এবং মেঘলা আবহাওয়া ও বৃষ্টি হলে এই রোগ বেড়ে যায়।
রোগের লক্ষণ -
১) এই রোগ ফুল আসার সময় থেকে দেখা যায়।
২) পাতায় হালকা বাদামী রঙ হয় ও পরে এটি গাঢ় হয়।
৩) পুরো গাছ ঝলসে গেছে বলে মনে হয়।
৪) যদি খুব বেশী প্রকারে ছত্রাকের আক্রমণ হয় তাহলে গাছের রঙ বাদামী থেকে কালো হয়ে যায়, এবং গাছ নুইয়ে পড়ে।
রোগের প্রতিকার
১) ভালো সার এবং সেচ প্রোয়গ করতে হবে।
২) রোগে আক্রান্ত কম হয় এমন জাতের মুসুর ডাল চাষ করতে হবে যেমন- বারি মুসুর-৫, ৬, ৭, ৮।
৩) কার্বেন্ডাজিম অথবা কার্বোক্সিল + থিরাম প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করে তারপর বপন করতে হবে।
- দেবাশীষ চক্রবর্তী
Share your comments