লিলিয়াম ফুলের চাষ – পদ্ধতি ও রোগপোকার উপশমের উপায়

লিলিয়াম ফুল, ফুল চাষ, রোগপোকা, উপশম, পদ্ধতি, চাষবাস, উপায়, পশ্চিমবঙ্গ, গোমূত্রের উপকারিতা, মাছ চাষে ভিটামিন প্রয়োগ, অপরাজিতা ফুলের চা

KJ Staff
KJ Staff

লিলিয়াম হল একধরণের গুল্মজাতীয় সপুষ্পক উদ্ভিদ যা প্রধানত কন্দ থেকে উৎপন্ন হয়। এই গাছে বেশ গোটা গোটা বড় সুন্দর পুষ্প প্রস্ফুটিত হয়ে থাকে। এই ফুল প্রধানত শীতল নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে বেশি প্রস্ফুটিত হয়, এবং এর বিস্তার শীতল ক্রান্তিয় অঞ্চল পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত থাকে। এই গাছের ফুলকে অনেকে পোষকি নাম ধরে ডাকে লিলি। পৃথিবীতে অনেক ফুল-ই লিলির মতো দেখতে, কিন্তু তাদের মধ্যে লিলির মতো বৈশিষ্ট্য নেই।

লিলি একটি বড় সুগন্ধি ফুল এবং সারা পৃথিবীতে সাদা, হলুদ, কমলা, গোলাপী, লাল, ও বেগুনী বর্ণের ফুল দেখা যায়। এই ফুলের বর্ণচ্ছটা অনেকটা চিত্রের মতো, যেন কোনও শিল্পী তাঁর তুলি দিয়ে ফুলের গায়ে মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছে। এই ফুল প্রধানত বসন্তের শেষে বা গ্রীষ্মের প্রথম দিকে ফোটে। এই জাতের ফুলে ছয়টি পাপড়ি থাকে যারা বেশ প্রসারিত হয়।

গ্রীষ্মের প্রায় শেষের দিকে এর বীজ পরিপক্ক হয়। এই প্রজাতির ফুলেরা বিভিন্ন ধরণের হয় বলে এই বীজের অঙ্কুরোদ্গমে প্রচুর জটিলতা রয়েছে। আসলে এই ফুলের ক্ষেত্রে শীতল তাপমাত্রার জলবায়ু সবথেকে বেশি উপযোগী।

রকমফের

এশিয় হাইব্রিডঃ ড্রিমল্যান্ড (হলুদ), ব্রুনেলো (কমলা), নোভোনা (সাদা), পল্লিয়ানা (হলুদ), ইয়েলো জায়ান্ট (হলুদ), ভিভাল্ডি (গোলাপী),  ব্ল্যাক আউট (গাঢ় লাল)

ওরিয়েন্টাল হাইব্রিডঃ স্টার গেজার (গোলাপী ও সাদা), নেরোস্টার, সাইবেরিয়া, অ্যাকাপিউল্কো (হাল্কা গোলাপী) এবং ক্যাসাব্লাঙ্কা ইস্টার্ণ লিলি, এলিগ্যান্ট লেডি, এস স্নো ক্যুইন, হোয়াইট আমেরিকান, ক্রফট এবং হার্বো।

জলবায়ুঃ লিলি ফুল সবথেকে ভালো হয় গ্রীণহাউসে, যেখানে দিনের তাপমাত্রা থাকবে ১৮-২২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এবং রাতের তাপমাত্রা থাকবে ১০-১৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড

মাটিঃ হিউমাস বা পাতা সার এবং কোকোপিট এর মিশ্রণ (সাথে ৫.৫ থেকে ৬.৫ Ph) লিলির বেড়ে ওঠার পক্ষে খুব উপযোগী। এই বীজের বীজতলা ডেজোমেট দিয়ে (প্রতি বর্গ মিটারে ৩০ গ্রাম) মাটির মিশ্রণটা ভালো করে মেশাতে হবে।

কলম তৈরিঃ লিলিয়াম বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করতে গেলে এর কন্দর সাথে কলম তৈরি করতে হবে। এর জন্য কলম তৈরির পর একে ছয় সপ্তাহ ২-৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় এই কলমের সুপ্ততা ভঙ্গ করতে হবে। এই কাজের জন্য হিমঘরও ব্যবহার করা যেতে পারে। এরপর সেই সুপ্ত কন্দকে -২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় প্রায় এক বৎসর রেখে দিতে হবে।

জায়গাঃ এই ফুল গাছ গুলির জন্য ৩০০, ২২৫, ১৫০ বর্গ সেমি জায়গা দরকার। এই বিভিন্ন সংখ্যা দেওয়ার কারণ হলো এই গাছের ঘনত্ব। যদি বেশি চারা লাগানো হয় তাহলে ৩০ থেকে ৬০ টি কন্দ পুঁততে হবে প্রতি বর্গমিটারে।

জলসেচঃ গ্রীষ্মকালীন সময়ে ৬-৮লিটার/ বর্গমিটার প্রতি দিন এবং শীতকালে দিন প্রতি  ৫-৬ লিটার / বর্গ মিটার।

গাছের ঠেকনাঃ এই গাছের জন্য নাইলনের জাল ব্যবহার নির্দেশিত।

লিলিয়াম ফুল

গাছের সুরক্ষা

কীটনাশক হিসেবে ইমিডাক্লোপ্রাইড ১৭.৮% এস এল প্রতি লিটার জলে ১ মিলি করে অথবা ডাইমেথিয়ন ৩০ ই সি প্রতি লিটার জলে দুই মিলিগ্রাম। চেলোপোকা মারার জন্য ওয়েটেবল সালফার প্রতি লিটারে ১.৫ গ্রাম অথবা আবামেক্টিন প্রতি লিটারে ০.৪ মিলি এবং প্রোপারজাইট প্রতি লিটারে ২ মিলিগ্রাম। তাছাড়া থ্রিপ কীট দমনের জন্য মিথাইল ডেমেটন ২৫ এস ই সি প্রতি লিটারে ২ লিটার অথবা ডাইমিথনেট ৩০ ই সি প্রতি লিটারে ২ মিলিগ্রাম হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

গাছের রোগ

বাদামী রোগঃ যিনাব প্রতি লিটারে দুই গ্রাম

কন্দ পচা বা দাগী রোগঃ কার্বান্ডাযিম প্রতি লিটারে ১ গ্রাম অথবা ডাইফেনোকোনাজোল প্রতি লিটারে আধ গ্রাম করে ছেটাতে হবে।

গোঁরা পচা বা মূল পচাঃ মেটালেক্সিল প্রতি লিটারে শতকরা এক ভাগ মিশিয়ে মাটিতে ছেটাতে হবে।

ঝলসা রোগঃ পাতায় বাদামী হলুদ দাগ থাকলে কার্বেন্ডাজিম প্রতি লিটারে ২ গ্রাম মিশিয়ে এই পাতা ঝলসা রোগ থেকে গাছকে মুক্ত করা সম্ভব।

ফুল তোলাঃ গাছের ফুল ততক্ষণ পর্যন্ত তোলা উচিত নয় যতক্ষণ ফুলগুলি সম্পূর্ণ প্রস্ফুটিত হচ্ছে। কুড়ি অবস্থায় বা অপ্রসারিত অবস্থায় ফুল তুললে এই ফুলের সম্পূর্ণ সৌন্দর্য পাওয়া সম্ভব নয়।

পুষ্প পর্যায়

এশিয় হাইব্রিডঃ ৮-১০ সপ্তাহ

ওরিয়েন্টাল হাইব্রিডঃ ১৪-১৬ সপ্তাহ

ফলনঃ ৩০ থেকে ৪০ টি ফুল প্রতি গাছ থেকে।

কীভাবে গ্রীণহাউসে লিলিয়াম প্রতিপালন করবেন?

একটি সুস্থিত গ্রীনহাউস যেখানে লিলিয়াম চাষের পর্যাপ্ত পরিবেশ থাকবে তা হল পর্যাপ্ত তাপমাত্রা, ভালো পরিমাণে বায়ুচলাচল, ভেন্টিলেশন, ও আলো যে সমস্ত বিষয়সমূহ সুনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকবে। গ্রীণহাউসের উচ্চতা হবে ৪ থেকে ৪.৫ মিটার যা একটা ভালো ঘর প্রদান করতে সক্ষম। এই গ্রীনহাউসে সেচ ও আলোক পর্যাপ্ততা থাকতে হবে। ভালো আলো এই ফুলের চাষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ

অনেক অঞ্চলে, গ্রীণহাউসে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রাংশ প্রয়োজন। এশীয় হাইব্রিডের জন্য গ্রিনহাউসে ৮-১৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন, এবং গুচ্ছ চাষের ক্ষেত্রে তা ১৫-১৬ ডিগ্রী হওয়া উচিত, অর্থাৎ প্রতি বর্গমিটারে যাতে ২২০ ওয়াট তাপমাত্রা থাকে তেমনভাবেই গ্রীণহাউসে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রাখা উচিত। এই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণকারী ব্যবস্থা থাকা উচিত।

কার্বন-ডাই অক্সাইড ব্যবস্থা

কার্বন-ডাইঅক্সাইড যে কোনো সপুষ্পক উদ্ভিদের পুষ্প পর্যায়কে বৃদ্ধি করতে সক্ষম। তাই এই গ্রীণহাউসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ অনেকটা রাখতেই হবে। গ্রীণহাউসের কেন্দ্রস্থলে ঝুলন্ত বার্নারের সাহায্যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ইঞ্জেক্ট প্রসেস এর ব্যবস্থা রাখতে হবে। এই গ্যাস ইঞ্জেক্ট-এর ব্যাপারটি সূর্যালোকের সাথে তাল মিলিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত কার্বন-ডাই অক্সাইডকে নিষ্কাশন করতে হবে। এতে গাছের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে। অঙ্গার আত্তীকরণকালে কার্বন-ডাই অক্সাইডের ইঞ্জেক্ট কাল ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত রাখতে হবে। এই গ্যাসের কমা বা বাড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সরল মনিটরিং যন্ত্রাংশ রাখতে হবে।

আলোক যন্ত্রাংশ- এই গ্রীনহাউসে আলোক সংবেদী একটি মিটার ব্যবস্থা রাখতে হবে যা কিনা আলোর পর্যাপ্ততার দরুন গাছের বৃদ্ধি কতখানি হচ্ছে তার পরিমাপ করতে হবে।

আর্দ্রতা- গ্রীণহাউসের ভেতরে যে আর্দ্রতা তা অন্তত পক্ষে ৮০-৮৫% সর্বদা বজায় রাখতে হবে।

এশিয়াটিক হাইব্রিডের ক্ষেত্রে কন্দ তৈরির ক্ষেত্রে ২-৪০ ডিগ্রি তাপমান দরকার প্রথম ছয় সপ্তাহে এবং ওরিয়েন্টালের ক্ষেত্রে এই সময়কাল হবে ৮ সপ্তাহ।

বীজতলা তৈরীর মাধ্যমঃ এশিয়াটিক হাইব্রিডের ক্ষেত্রে বীজতলার Ph হতে হবে ৬-৭ আবার ওরিয়েন্টালের ক্ষেত্রে ৫.৫-৬.৫ Ph রাখতে হবে। মাটিতে ক্লোরিনের পরিমাণ হতে হবে ১.৫ মিলি মোল প্রতি বর্গ মিটার। এই পরিমাণ জমির ক্ষেত্রে কোকোপিটের পরিমাণ হতে হবে ১৯ কেজি প্রতি মিটার।

বীজ বপনের গভীরতাঃ লিলিয়াম কন্দ পোঁতার জন্য ৬ ইঞ্চি মাটির গভীরতা দরকার, অবশ্য এই গভীরতা কন্দের আয়তন হিসেবে বাড়াতে কিংবা কমাতে হতে পারে।

জলসেচঃ সেচে জলের পরিমাণ মাটির ধরণ, আর্দ্রতা এর রকমফেরের উপর নির্ভরশীল। প্রতি গ্রীষ্মে জলের পরিমাণ লাগবে ৬-৮লিটার/ বর্গ মিটার।

সুতরাং এই ভাবে যদি লিলি ফুলের চাষ করা যায় তাহলে ভারতে লিলি ফুলের উৎপাদন হয়তো বাড়ান সম্ভব বিশেষ করে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে।

- প্রদীপ পাল

Published On: 02 November 2018, 04:34 PM English Summary: Lilium flower cultivation

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters