বাংলা কৃষি সেচ যোজনা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি উদ্যোগ যার মাধ্যমে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদেরকে সেচ যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এই উদ্যোগটি কৃষকদের স্বল্প জল ব্যবহারের সাথে কৃষিক্ষেত্র সক্ষম করার লক্ষ্যে মাইক্রো সেচ সুবিধা স্থাপনে সহায়তা করার চেষ্টা করে চলেছে। এই প্রকল্পটি কৃষিক্ষেত্রে মূলত খরার প্রভাবকে হ্রাস করবে, তাই এটি কম বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলগুলির জন্য।
পশ্চিমবঙ্গের পূর্বাঞ্চল অন্যতম প্রধান ধান উত্পাদনকারী রাজ্য। তবে শুধু ধানই নয়, বিভিন্ন ফসলের চাষ হয় এখানে। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে, এখানে প্রায়শই দেখা দেয় খরা। এতে কৃষকদের লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়।
কৃষকদের এই দুরাবস্থার কথা বিবেচনা করে, রাজ্য সরকার একটি মাইক্রো-সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন, যা জল সম্পদ সংরক্ষণ করবে, আবার কৃষকদের বেশী ফসল উৎপাদনেও সহায়তা করবে। এই প্রকল্পের নাম ‘বাংলা কৃষি সেচ যোজনা’।
এই প্রকল্পের লক্ষ্য (The goal of this scheme)–
১) কৃষি উন্নয়ন - এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হল দরিদ্র কৃষকদের বিনামূল্যে ফসল সেচ সুবিধা সহ তাদের ফসল চাষ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করা।
২) মাইক্রো সেচ সুবিধা স্থাপন - এই প্রকল্পের আওতায় পশ্চিমবঙ্গের সরকার কৃষকদের জন্য ক্ষুদ্র-সেচ সুবিধা স্থাপন করেছে। এটি কৃষিক্ষেত্রে জলের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করবে, সর্বোপরি জলের অপচয় রোধে কার্যকর হবে।
৩) সেচ পদ্ধতি - কর্তৃপক্ষ দুটি নির্দিষ্ট সেচ কৌশল চিহ্নিত করেছে। একটি স্প্রিঙ্কলার সেচ এবং অন্যটি ড্রিপ সেচ। এই দুটি পদ্ধতিই জলে সংরক্ষণে সহায়তা করবে। ড্রিপ সেচ ব্যবস্থা ইনস্টল করতে ব্যয় হয় প্রায় ৭০,০০০ টাকা এবং স্প্রিঙ্কলার সেচ মেশিন ইনস্টল করতে ব্যয় প্রায় ২০,০০০ টাকা।
৪) ফ্রি মেশিন ইনস্টলেশন - রাজ্য সরকার এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত যে, দরিদ্র কৃষকদের মেশিনগুলি ইনস্টল করার জন্য এত টাকার ব্যবস্থা করা অসম্ভব। সুতরাং, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সমস্ত মেশিন বিনামূল্যে প্রদান এবং ইনস্টল করা হবে।
৫) শস্যের ধরণ – খাদ্যশস্যের চাষ ছাড়াও, এই সেচ প্রকল্পটি শাকসবজি এবং ফল আবাদের জন্যও ক্ষেতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল সরবরাহ করবে।
৬) বাস্তবায়ন অঞ্চল – এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও জঙ্গলমহল জেলা তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এই স্কিমটি মূলত সেই অঞ্চলে প্রয়োগ করা হবে, যেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব কম।
ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্যই এই প্রকল্পের প্রচলন করা হয়েছে। তবে, এই প্রকল্পটি রাজ্য সরকার নতুনভাবে প্রচলন করেছে, অনলাইন আবেদনের পদ্ধতি এখনও ঘোষিত হয়নি। এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে গেলে কৃষককে ব্লক টেকনিক্যাল ম্যানেজার-এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
কারা আবেদনের যোগ্য –
সরকার এই প্রকল্পের আওতায় পশ্চিমবঙ্গের সকল ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য সুবিধা প্রদান করবে। সুতরাং, সকল কৃষকই আবেদন করতে পারবেন।
আবেদন পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয় নথি (Application Procedure)–
একমাত্র অফলাইনেই এই প্রকল্পের সুবিধা কৃষক পেতে পারেন। কারণ, এই প্রকল্পের জন্য অনলাইনে আবেদন এখনও শুরু হয়নি। তাই কৃষককে আবেদন করতে হলে স্থানীয় এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট অফিসার (Agriculture Development Officer) –এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এডিও অফিসে গিয়ে সেখানে কৃষককে নিজের পরিচয় পত্র, বাসস্থানের প্রমাণপত্র এবং জমি সংক্রান্ত সকল নথি সহ এডিও-র চাহিদা মোতাবেক সকল দস্তাবেজ দাখিল করতে হবে। এরপর কৃষকের নথি সরকার দ্বারা প্রতিপাদন করা হবে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই কৃষক এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন।
এই জাতীয় প্রকল্পগুলি কৃষকদের উন্নতির উদ্দেশ্যে কাজ করে থাকে। সরকারের এই প্রকল্প কৃষি খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য আরও ভাল ভিত্তি সরবরাহ করবে। এটি কৃষকদের জলের ঘাটতিজনিত সমস্যাগুলি নিরসনে সহায়তা করবে।
Image Source - Google
Related link - কৃষকবন্ধু প্রকল্প (Krishakbandhu Online Application) অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া, ২০২০
কৃষক বন্ধু প্রকল্প, ২০২০ -এর স্থিতি (beneficiary status) অনলাইনে চেক করুন
প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা (PMFBY)- খারিফ ফসলের জন্য আবেদনের শেষ তারিখ ৩১ শে জুলাই
কৃষকরা পাবেন ফার্ম যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম (farm equipment) ক্রয়ে সরকারের থেকে 80% পর্যন্ত ভর্তুকি
সরকারের সহায়তায় (PMMY) এখন আপনিও করতে পারেন নিজের মনের মতো ব্যবসা
Share your comments