শীতকালীন সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল কমলা লেবু। এই ফল যেমন সুস্বাদু, তেমনই স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত পুষ্টিকর। সুস্থ থাকতে তাই চিকিত্সকরা শীতকালে রোজ কমলালেবু খাওয়ার পরামর্শ দেন। জেনে নিন কমলা লেবুর কিছু গুণ।
প্রতিদিন যদি এক গ্লাস করে কমলা লেবুর রস খাওয়া যায়, তাহলে নানাবিধ ব্রেন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়, বিশেষত ডিমেনশিয়ার মতো রোগের খপ্পরে পরার সম্ভাবনা একেবারে থাকে না বললেই চলে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র অনুসারে এমনটাই জানা যাচ্ছে।
জার্নাল নিউরোলজিতে প্রকাশিক এই গবেষণাপত্রটি অনুসারে রোজের ডেয়েটে কমলা লেবুর রসকে জায়গা করে দিলে শরীরে নানাবিধ ভিটামিন এবং মিনারেলের পাশাপাশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রাও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। আর এর প্রভাবে ব্রেন পাওয়ার তো বৃদ্ধি পায়ই, সেই সঙ্গে ডিমেনশিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৪৭ শতাংশ কমে যায়। তবে কমলা লেবুর রস খাওয়া শুরু করলে যে শুধু ব্রেনই চাঙ্গা ওঠে, এমন নয়। সেই সঙ্গে আরও একাধিক শারীরিক উপকারে পাওয়া যায়। যেমন ধরুন-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে -
যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে কমলা লেবুতে উপস্থিত ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যাসকর্বিক অ্যাসিড এবং বিটা-ক্যারোটিন শরীরে প্রবেশ করার পর রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে এতটাই শক্তিশালী করে তোলে যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে নানা ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
আলসারের মতো রোগ দূরে থাকে -
বেশ কিছু স্টাডি অনুসারে, নিয়মিত কমলা লেবুর রস খাওয়া শুরু করলে শরীরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু যে তার প্রভাবে আলসারের প্রকোপ কমতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি কনস্টিপেশনের মতো রোগও দূরে পালায়। শুধু তাই নয়, নানাবিধ পেটের রোগের প্রকোপ কমাতেও এই পানীয়টি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
অ্যানিমিয়ার মতো রোগের চিকিৎসায় কাজে আসে -
রক্তাল্পতার মতো সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে নাকি? তাহলে নিয়মিত কমলা লেবুর রস খেতে ভুলবেন না যেন! কারণ এমনটা করলে শরীরে ভিটামিন সি-এর মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যে কারণে শরীর দ্বারা আয়রনের শোষণ ঠিক মতো হয়। সেই সঙ্গে লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বেড়ে যাওয়ার কারণেও অ্যানিমিয়ার মতো রোগ দূরে পালাতে সময় লাগে না।
হার্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় -
কমলা লেবুতে উপস্থিত ফাইবার এবং অন্যান্য উপকারি উপাদান দেহের ভিতরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। প্রসঙ্গত, কমলা লেবুতে থাকা পটাশিয়ামও এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ইনসমনিয়ার মতো সমস্যা দূর হয় -
নানা কারণে রাত্রে ঠিক মতো ঘুম হয় না? সেই সঙ্গে ক্লান্তিও যেন বাঁধ ভেঙেছে? তাহলে রোজের ডায়েটে কমলা লেবু রসকে অন্তর্ভুক্ত করা মাস্ট! কারণ এই ফলটির শরীরে থাকা ফ্লেবোনয়েড, বেশ কিছু নিউরোট্রান্সমিটারকে অ্যাকটিভ করে দেয়। ফলে একদিকে যেমন অনিদ্রার সমস্যা দূর করে, তেমনি স্মৃতিশক্তি এবং কগনিটিভ পাওয়ার বাড়াতেও সময় লাগে না।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে -
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, কমলা লেবুতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর এমন কিছু খেল দেখায় যে রক্তচাপ একেবারে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এই একটা কারণেও নিয়মিত কমলা লেবু খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
দেহের ভিতরে প্রদাহের মাত্রা কমে -
শীতকালে খেয়াল করে দেখবেন জয়েন্ট পেনের কারণে ভোগান্তি খুব বেড়ে যায়। কারণ এই সময় দেহের ভিতরে প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশন মাত্রা ছাড়ায়, যে কারণে এমন পরিস্থিতি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রেও কিন্ত কমলা লেবু আপনাকে সাহায্য করতে পারে। কিভাবে? এই ফলটির শরীরে এমন কিছু উপাকারি উপাদান রয়েছে, যা প্রদাহ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এবার বুঝেছেন তো শীতকালে নিয়মিত কমলা লেবুর রস খাওয়ার প্রয়োজন কতটা!
কিডনি স্টোনের মতো রোগ দূরে থাকে -
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কমলা লেবুর রস খাওয়া শুরু করলে শরীরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যাদের প্রভাবে কিডনি ফাংশনের উন্নতি তো ঘটেই, সেই সঙ্গে কিডনি স্টোনের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও যায় কমে।
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় -
শীত মানেই ত্বকের আদ্রতা কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে সৌন্দর্য কমে যাওয়া যেন খুবই স্বাভাবিক অবস্থা। তাই তো এই সময় সৈন্দর্য ধরে রাখতে স্কিনের আলাদা করে খেয়াল রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। আর এই কাজে আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে উঠতে পারে কমলা লেবু। কারণ নিয়মিত এই সাইট্রাস ফলটির রস খেলে শরীরে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে একদিকে যেমন ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকে, তেমনি অন্যদিকে বলিরেখা কমতে শুরু করে, কালো ছোপ দাগ মিলিয়ে যায় এবং ত্বক তুলতুলে হয়ে ওঠে। এক কথায় শীতের মৌসুমে ত্বকের পরিচর্যায় কমলা লেবুর রসের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
ক্যানসারের মতো মারণ রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না
একাধিক পরীক্ষার পর এ কথা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে যে কমলা লেবুতে উপস্থিত সাইট্রাস লিমোনয়েডস, শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে ক্যানসার সেল জন্ম নেওয়ার কোনও সম্ভবনাই থাকে না।
স্ট্রোক -
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী নিয়মিত কমলা লেবু, গ্রেপফ্রুট জাতীয় ফল খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
ব্লাড প্রেসার -
রত্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেমন সোডিয়াম কম খাওয়া প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়ানো। কমলা লেবুতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
লিউকোমিয়া:
আমেরিকান জার্নাল অব এপিডেমিওলজি অনুযায়ী, শিশুর জন্মের ২ বছর পর্যন্ত রোজ কমলা লেবুর রস খাওয়ালে লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।
হার্ট:
কমলা লেবুতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার, পটাশিয়াম, কোলিন ও ভিটামিন সি রয়েছে। যার সবকটিই হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে।
ডায়াবিটিস (Diabetes) -
একটি মাঝারি সাইজের কমলা লেবুতে ৩ গ্রাম ফাইবার থাকে। যা রক্তে ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়িয়ে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
Share your comments