সবুজ গোখাদ্য চাষের সুযোগ অনেক চাষির ক্ষেত্রে সম্ভব হয়ে ওঠে না, চাষের জায়গা বা পর্যাপ্ত শ্রমের অভাবে। এই কারনেই বিকল্প সবুজ খাদ্য হিসেবে অ্যাজোলা চাষ বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
অ্যাজোলা হল একপ্রকার জলজ ফার্ন যা বদ্ধ জলাশয়ে অবাধে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে পারে। অ্যাজোলা অ্যানাবিনা নামক একটি নীলাভ সবুজ শৈবাল এর সাথে একসাথে বেড়ে ওঠে। এই শৈবালটি আবহাওয়ার নাইট্রোজেনকে নিজের মধ্যে আবদ্ধ করতে পারে এবং এর ফলে অ্যাজোলাও নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। অ্যাজোলা উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি খাদ্য যার মধ্যে সবরকম প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। এছাড়াও এটি লৌহ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি খনিজ এবং পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন এ ও ভিটামিন বি ১২ সমৃদ্ধ।
অ্যাজোলা চাষের উপযোগিতা -
- খোলা অবস্থায় বা আবদ্ধ অবস্থায় দুই ভাবেই চাষ করা যায়।
- সারা বছরই সবুজ খাদ্য হিসেবে চাষ করা যায়।
- অ্যাজোলা চাষের খরচ খুবই সামান্য এবং সহজে সংগ্রহ করা যায়।
- বৃদ্ধির হার অন্যান্য সবুজ ঘাসের থেকে অনেক বেশি (১৫ দিন)।
- অ্যাজোলা গরু, মোষ, ছাগল, ভেড়া, শূকর বা মুরগী নির্বিশেষে সকল প্রকার প্রাণীকে খাওয়ানো যায়।
- প্রাণীদের খুব কম খরচে সবুজ খাদ্য দেওয়া যেতে পারে।
- কাঁচা বা শুকিয়ে উভয় ভাবেই খাওয়ানো যেতে পারে।
- অ্যাজোলা উচ্চ প্রোটিন (২৫-৩৫%), বিভিন্ন খনিজ লবণ (১০-১৫%) ও অ্যামিনো অ্যাসিড (৭-১০%) সমৃদ্ধ।
- আ্যাজোলার মধ্যে ক্ষতিকারক বা বিষাক্ত কোন পদার্থ নেই।
- অ্যাজোলা সহজপাচ্য এবং দুধ উৎপাদন বাড়াতে (১৫-২০%) সহায়তা করে।
অ্যাজোলা চাষের পদ্ধতি –
- একটি ৬ ফুট x ৪ ফুট x ১/২ ফুট সাইজের একটি গর্ত কেটে নিতে হবে, যার চারিদিকের উচ্চতা থাকবে একদম সমান। এছাড়া কতকগুলি ইট কে পরপর সাজিয়ে মাটির উপরেই একটি গর্ত বানিয়ে নেওয়া যায়।
- এই সাইজের থেকে দুইদিকে ২ ফুট বেশি মাপের একটি প্লাস্টিক শিট বা পলিথিন টারপলিন নিতে হবে, যেটিকে ওই গর্তের উপরে ভালভাবে লাগিয়ে দিতে হবে ও গর্তের বাইরের চারিদিক ভালভাবে মাটি দিয়ে বা ইট দিয়ে চেপে দিতে হবে, যাতে ওই শিট এক জায়গায় থাকে।
- এরপর ওই প্লাস্টিক শিটের মধ্যে কিছুটা (২-৩ কেজি) সারযুক্ত ঝুরঝুরে পরিষ্কার মাটি সমান ভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। এর সঙ্গে ৫০০ গ্রাম গোবর সার ও ২০ গ্রাম সুপার ফসফেট মিশ্রিত ৫ লিটার জল ওই প্লাস্টিক শিটের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।
- এর পরে আরোও জল ঢেলে জলের উচ্চতা মোটামুটি ১০ সেমি করতে হবে এবং তারপর ৫০০ গ্রাম অ্যাজোলা ঐ জলে ছেড়ে দিতে হবে।
- অ্যাজোলা খুব দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং প্রতিদিন ৫০০-৬০০ গ্রাম অ্যাজোলা প্রতিদিন সংগ্রহ করা যাবে।
- অ্যাজোলার ভালো উৎপাদনের জন্য প্রতি দুই সপ্তাহ অন্তর ১৫ গ্রাম সুপার ফসফেট ও ২০০ গ্রাম গোবর সার ওই জলে মিশিয়ে দিন।
- বৃষ্টির জল থেকে বাঁচাতে গর্তের উপরে ছাউনির ব্যবস্থা করা যেতে পারে বা গাছের ছায়ার নিচেও করা যেতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে গাছের পাতা যেন ওই জলে বেশি না পরে।
Image source - Google
Related link - (Process to increase cow's milk production capacity) দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে গবাদি পশুকে অ্যাজোলা খাওয়ানোর পদ্ধতি
Share your comments