ছোলা একটি ডাল জাতীয় শস্য। আমাদের দেশের ছোলা একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য। এতে প্রায় শতকরা ২২.৫ ভাগ আমিষ জাতীয় উপাদান আছে। ধানের পরে একই জমিতেই কম খরচে ছোলা চাষ করা যায়। আমন তোলার পরই ছোলা চাষের উপযুক্ত সময়। সাধারণত বাজারে সারা বছর ছোলার চাহিদাও থাকে বেশ ভালো | ছোলা অনেকদিন ঘরে সংরক্ষণ করা যায় |
স্বল্প মূলধনে চাষীভাইদের এই চাষ বেশ লাভজনক | তাই ছোলা চাষে (chickpea farming) কৃষকরা লাভের মুখ দেখছেন, তবে জেনে নেওয়া যাক কিভাবে করবেন ছোলা চাষ;
মাটি (Soil):
সাধারণত, প্রায় সবরকম মাটিতেই ছোলা চাষ করা যায়। তবে দোঁয়াশ ও বেলে মাটিতে ছোলার চাষ ভাল হয়। এঁটেল মাটিতেও ছোলা চাষ করা যায়। জলভাবযুক্ত বেশি জমিতে ছোলা ভাল জন্মায় না। ছোলা আবার মিশ্রচাষ হিসাবেও চাষ করা যায়।
জমি তৈরি (Land preparation) :
প্রথমে ছোলা চাষে উপযুক্ত মাটি দেখে জমি নির্বাচন করতে হবে। জমিতে কোনও আগাছা থাকা চলবে না। জমিতে তিন চারবার আড়াআড়ি ও লম্বালম্বিভাবে জমি চষে দিতে হবে। এরপর খুব ভাল করে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। তারপর মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে সমতল করে নিতে হবে। জমি তৈরির সময় একর প্রতি পাঁচ থেকে ছ’টন গোবর সার প্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে খুব ভাল করে মিশিয়ে দিতে হবে।
জাত:
দেশজুড়ে বিভিন্ন জাতের ছোলার চাষ করা হয়। তার মধ্যে বি-৭৫, বি-৯৮, বি-১১৫, বি-১০৮, সাবুর-৪, বিজি-৩৯ জাতগুলি পশ্চিমবঙ্গে চাষের পক্ষে উপযোগী।
বীজের পরিমান:
এক একর জমির জন্য ২০ থেকে ২৫ কিলোগ্রাম বীজ লাগবে। তবে আপনি যদি যন্ত্র দিয়ে বুনতে চান, তবে ১৫ থেকে ২০ কিলোগ্রাম বীজ লাগবে।
রোপণ পদ্ধতি:
কাতির্ক ও অগ্রহায়ণ মাস ছোলা চাষের উপযুক্ত সময়। প্রতি কিলোগ্রাম বীজের সঙ্গে তিন গ্রাম হারে এগ্রোসন জি-এন ও দেড় গ্রাম থাইরাম বা ট্রাইকোডারমা ভিরিডি মিশিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, ছোলার বীজ সারিতে বোনাই ভাল। এক ফুট অন্তর সারি করে বুনতে হবে। অনেক সময় আমন ধান তোলার তিন সপ্তাহ আগে জমিতে ছোলার বীজ ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে ছোলা চাষের খরচ অনেক কমে যায়।
সার প্রয়োগ (Fertilizer):
সাধারণত ছোলা চাষের জন্য জমিতে সার খুব একটা লাগে না। তবে ভাল ফলনের জন্য কৃষি বিশেষজ্ঞরা একর প্রতি ৮ কিলোগ্রাম নাইট্রোজেন ও ১৬ কিলোগ্রাম ফসফরাস ও ৮ কিলোগ্রাম পটাশিয়াম মিশিয়ে সেই মিশ্রণ প্রয়োগ করার পরামর্শ দেন। জমি তৈরির সময় শেষ চাষের আগে সার প্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। গাছে ফুল আসার আগে দু’শতাংশ ডিএপি স্প্রে করলে ফলন বাড়ে।
রোগ ও প্রতিকার (Disease management system):
ছোলা গাছ বড় হলেই বিভিন্ন রোগ পোকা আক্রমণ করে। বিশেষ করে ছত্রাকঘটিত রোগ যেমন ধসা, মরচে ও ঢলে পড়া রোগ প্রভৃতি। এই রোগ দমনের জন্য প্রতি লিটার জলে ২.৫ গ্রাম ইন্দোফিল বা ডাইথেন এম-৪৫ জলে গুলে জমিতে স্প্রে করতে হবে। শুটি ছিদ্রকারী পোকা দমনের জন্য প্রতি লিটার জলে ২ মিলিলিটার থায়োডান ৩৫ ইসি বা ফলিথায়োন ৫০ ইসি জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। প্রতি একরে ১৫০-২০০ লিটার ওষুধ গোলা জল লাগবে। এছাড়াও, জমির আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে |
আরও পড়ুন - Cashew Farming: লাভের নতুন দিশা দেখাচ্ছে কাজু বাদাম চাষ
ফসল সংগ্রহ:
সাধারণত, ছোলা পাকতে ১২০ থেকে ১৩০ দিন সময় লাগে। ফাল্গুন বা চৈত্র মাসে গাছের পাতা হলুদ হলে গাছ কেটে বা শিকড়-সহ উপড়ে তোলা হয়। কাটা গাছ অন্তত ৭ দিন রোদে শুকিয়ে বলদ দিয়ে মাড়িয়ে বা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বীজ আলাদা করা হয়। সেচবিহীন জমিতে বি-৭৫ ৭ থেকে ৮ কুইন্টাল, বি-৯৮ ৫ থেকে ৬ ’কুইন্টাল পর্যন্ত ফলন দেয়। সেচ যুক্ত জমিতে ফলন আরও বেশি পাওয়া যায়।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Bitter gourd cultivation - সহজ পদ্ধতিতে করলা চাষ করে আয় করুন অতিরিক্ত অর্থ
Share your comments