শরীরের ক্লান্তি দূর করার এক জনপ্রিয় পানীয় হলো কফি | কফি গাছ ঝোপের মত হয়। Rubiaceae পরিবারভুক্ত কফি মাঝারি উচ্চতার চিরসবুজ প্রকৃতির গাছ। কফি প্রায় ৬০ টি দেশে উৎপাদিত হয়। বৃহত্তম কফি উৎপাদনকারী দেশগুলি হলেন: ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া এবং ভারত | বাজারে কফির চাহিদা তো সকলেরই জানা প্রায় আকাশছোঁয়া | তাই কফি চাষে কৃষকরা লাভবান হতে পারে |
জলবায়ু(climate):
প্রধানত উষ্ণ-আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলে কফি চাষ করা হয়। কফি চাষের জন্য সারা বছর অধিক উষ্ণতা প্রয়োজন হয়। সাধারনত ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতায় কফি চাষ ভালো হয়। এর মধ্যে উঁচু জমিতে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং নিচু জমিতে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা কফি চাষের (coffee cultivation) পক্ষে বিশেষ উপযোগী। কফি চাষের জন্য প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়। সাধারনত ১৫০ থেকে ২৫০ সেমি বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে কফি চাষ ভালো হয়। কিন্তু ঝড়ঝঞ্ঝা ও তুষারপাত কফি চাষের পক্ষে ক্ষতিকারক। কুয়াশা ও আর্দ্রতা কফি গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
মাটি(Soil):
লৌহ, পটাশ ও নাইট্রোজেন মিশ্রিত ঊর্বর লাল দোঁয়াশ মাটি কফি চাষের পক্ষে বিশেষ উপযোগী |এছাড়া লাভা গঠিত ঊর্বর কৃষ্ণ মাটিতেও কফি চাষ ভালো হয়। উত্তম জলনিকাশি সুবিধা যুক্ত ঈষৎ ঢালু পাহাড়ি জমি কফি চাষের পক্ষে আদর্শ। কারণ গাছের গোড়ায় জল জমলে কফি গাছের ক্ষতি হয়। সাধারণত, দক্ষিণ ভারতের পাহাড়ি ঢালে কফি চাষ ভালো হয়।
রোপণ:
প্রধানত, কফির বীজ ও কলম থেকে চারা তৈরি করা হয়। প্রথমে সুস্থ , পুষ্ট ও রোগমুক্ত বীজ সংগ্র্রহ করে ফলের খোসা ছাড়িয়ে পরিস্কার জলে ধুয়ে ফল থেকে বীজ আলাদা করা হয়। ভালভাবে বীজ শুকিয়ে শুকনো কাঠের গুঁড়ো বা ছাইয়ের সাথে মিশিয়ে ছায়াতে ছড়িয়ে রাখা হয়। ৪/৫ দিন পর বীজ আলাদা করে বীজ তলায় বীজ বপণ করা হয় । বীজ বপনের ৩০-৪৫ দিনের মধ্যে বীজ গজিয়ে চারা হয়। ফেব্রুয়ারী- মার্চ মাসে পলিব্যাগে চারা স্থানান্তর করা হয়। মে -জুন মাসে মূল জমিতে গর্ত করে চারা রোপন করা হয় । গর্তে জৈব সার এবং সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা ভাল।
আরও পড়ুন -Paddy disease management: শিখে নিন ধানের কীটশত্রুকে দমন করার পদ্ধতি
ছায়া প্রদানকারী গাছ:
কফি গাছ উচ্চ তাপমাত্রা এবং তীব্র সূর্যালোক সহ্য করতে পারেনা। তাই, কফি বাগানে ছায়া প্রদানকারী গাছ রোপন করা প্রয়োজন। তাই, কফি গাছকে রক্ষা করার জন্য কফি বাগানের মধ্যে কলা, ভুট্টা ইত্যাদি বড় পাতার ছায়া প্রদানকারী গাছ লাগানো হয়।
সার প্রয়োগ:
গাছের বয়স, মাটির গুনাগুন ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে গাছে সার দেওয়া প্রয়োজন | ১ বছরের গাছ প্রতি প্রতিবার ২০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫ গ্রাম টিএসপি, ২০ গ্রাম পটাশ হারে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। চতুর্থ বছরের গাছের গোড়ায় ৩৫ গ্রাম ইউরিয়া, ২৫ গ্রাম টিএসপি এবং ২৫ গ্রাম পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে । ৫ বছর ও তর্দূধ গাছে ৪৫ গ্রাম ইউরিয়া, ৩০ গ্রাম টিএসপি এবং ৩০ গ্রাম পটাশ প্রয়োগ করা প্রয়োজন। সেচ দিয়ে মালচিং করে দেওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া গাছ প্রতি ৫-৬ কেজি জৈব সার প্রয়োগ করলে ভাল ফলন পাওয়া যাবে। আবার গাছের বাড়-বাড়তি কমে গেলে এবং ফুল ও ফল ধরার সময় ১০ লিটার জলে ২৫ গ্রাম ইউরিয়া, টিএসপি ২০ গ্রাম এবং ১৮ গ্রাম পটাশ মিশিয়ে গাছের পাতায় স্প্রে করা যেতে পারে।
গাছের পরিচর্যা:
বাগান আগাছা মুক্ত রাখতে হবে | গাছের সঠিক ফলধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ডাল-পালা ছাটাই জরুরী। একক পদ্ধতিতে ছাটাই করার ক্ষেত্রে মাটি থেকে ১-১.৫০ মি. উচুঁতে কাণ্ডের শীর্ষ কুড়ি কেঁটে দিতে হবে। এতে ফলধারণ শাখার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ঝোপালো হবে।
রোগবালাই ও দমন(Disease management system):
কফি গাছে মিলিবাগ, গ্রীনবাগ, সাদা কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা যায় | ম্যালাথিয়ন/কার্বারিল/সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক প্রয়োগ করে পোকা সহজে দমন করা যায় | কফির উল্লেখযোগ্য রোগ হলো পাতার রাস্ট। ০.৫% বর্দো মিক্সার স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যায় |
ফল সংগ্রহ:
চারা রোপনের ২-৩ বছর পর থেকে কফি সংগ্রহ করা যায় | একটি গাছ থেকে বছরে ১ কেজি ফল পাওয়া যায়। হেক্টর প্রতি ফলন ৭৫০- ১০০০ কেজি।
আরও পড়ুন - Lotus cultivation guide: কিভাবে ঘরে চাষ করবেন পদ্মফুল, জেনে নিন পদ্ধতি
Share your comments