Crop rotation in farming: জেনে নিন কৃষিকাজে চক্রকৃষির গুরুত্ব

উৎপাদন বৃদ্ধি ও জমির উর্বরতা বজায় রাখার জন্য কোনা জমিতে ধারাবাহিকভাবে পরপর বিভিন্ন শস্যের পর্যায়ক্রমিক চাষকে শস্যাবর্তন বা চক্ৰকৃষি (Crop Rotation) বলে। ভূমধ্যসাগরীয় এবং মিশ্র কৃষির অন্তর্ভুক্ত দেশগুলিতে শস্যাবর্তনের সর্বাধিক প্রয়োগ দেখা গেলেও এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এই কৃষিপদ্ধতিটি প্রসার লাভ করেছে। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিতে মিশ্র কৃষি পদ্ধতিতে (Mixed farming) মূলত চারটি পর্যায়ে শস্যাবর্তন বা চক্ৰকৃষি সম্পূর্ণ হয়।

রায়না ঘোষ
রায়না ঘোষ
Crop rotation in farming
Crop rotation (image credit- Google)

উৎপাদন বৃদ্ধি ও জমির উর্বরতা বজায় রাখার জন্য কোনা জমিতে ধারাবাহিকভাবে পরপর বিভিন্ন শস্যের পর্যায়ক্রমিক চাষকে শস্যাবর্তন বা চক্ৰকৃষি (Crop Rotation) বলে। ভূমধ্যসাগরীয় এবং মিশ্র কৃষির অন্তর্ভুক্ত দেশগুলিতে শস্যাবর্তনের সর্বাধিক প্রয়োগ দেখা গেলেও এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এই কৃষিপদ্ধতিটি প্রসার লাভ করেছে। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিতে মিশ্র কৃষি পদ্ধতিতে (Mixed farming) মূলত চারটি পর্যায়ে শস্যাবর্তন বা চক্ৰকৃষি সম্পূর্ণ হয়। প্রথম পর্যায়ে মানুষের খাদ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন পশুখাদ্য (ভুট্টা, শালগম) চাষ করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের ঘাস জাতীয় তৃণের (ক্লোভার, আলফা-আলফা) চাষ করা হয়। তৃতীয় পর্যায়ে জমিকে পশুচারণ ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং চতুর্থ পর্যায়ে বিভিন্ন অর্থকরী শস্য (গম, রাই) ইত্যাদির চাষ করা হয়।

বারংবার একই শস্য জমিতে আবাদ করলে সেই মাটির উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায়। জলবায়ু এবং মাটির অবস্থা বুঝে কৃষকদের বৈচিত্র্যময় ফসল চাষ করতে হবে। প্রায় ৭০% পরিষ্কার জল বিশ্বজুড়ে কৃষি প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। সর্বোপরি, মাটির আর্দ্রতার স্তরটি উদ্ভিদের স্বাস্থ্য এবং সর্বাধিক ফসল বজায় রাখার মূল চাবিকাঠি। স্বাভাবিকভাবেই মাটির উর্বরতা, আর্দ্রতা স্তর, সেচ ব্যবস্থা, রাসায়নিক কৃষিবিষের ব্যবহার কমিয়ে জৈব কীটনাশক ব্যবহার- এ সকল দিকই কৃষককে মনে রাখতে হবে।

শস্য আবর্তন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য(Importance of Crop rotation):

১) জলবায়ুর পরিবর্তনের ওপর নির্ভরশীল:

শস্যাবর্তন পদ্ধতিতে কোন সময় কোন্ শস্যের চাষ করা হবে তা জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।

২) পর্যায়ক্রমিক বিভিন্ন শস্যের চাষ:

কোনাে একটি নির্দিষ্ট জমিতে একটার পর একটা পরপর বিভিন্ন শস্যের চাষ করা হয়।

৩) জমির উর্বরতা ও উৎপাদন বৃদ্ধি:

জমির উর্বরতা যাতে বজায় থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখে কৃষিতে শস্যাবর্তন পদ্ধতির প্রয়োগ  করা হয়। তা ছাড়া উৎপাদন বৃদ্ধি করাও এই কৃষিপদ্ধতি প্রয়োগের  অন্যতম লক্ষ্য।

আরও পড়ুন -Dillenia Indica cultivation: জেনে নিন চালতা চাষের সহজ ও সঠিক পদ্ধতি

৪) মানুষ ও পশুর খাদ্যের চাষ:

মানুষের বিভিন্ন খাদ্য (গম, রাই) প্রভৃতির চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন পশুখাদ্যও (টিমাথি, ক্লোভার জাতীয় তৃণ) চাষ করা হয়।

চক্র কৃষির কিছু নিয়ম(Rules of crop rotation):

১) জমিতে বরবটি, ধঞ্চে, লুশান ইত্যাদি ফসলকে সবুজ সার হিসেবে জমিতে ব্যবহার করতে হবে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে জমিতে নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থ বৃদ্ধি।

২) ঢালু জমিতে যেমন ভূমিক্ষয়কারী ফসল যেমন ভুট্টা চাষ করার পর ডাল চাষ করা উচিৎ।

৩) বেশি সার প্রয়োগ করা হয় এমন চাষের পর কম সার গ্রহণকারী ফসলের চাষ করতে হবে। উদাহরণ - ধানের পর শশা, কিংবা আলুর পর কুমড়ো।

৪) আদর্শ ফসলচক্রে খামারের জমি, মজুর, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি সকল কৃষি উপকরণের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা বাঞ্চনীয়।

৫) যেসব ফসল ফলতে বেশি সময় নেয় তারপর কম সময় যুক্ত ফসল চাষ করতে হবে। (যেমন : ধান, সর্ষে, তিল) |

শস্য আবর্তনের সুবিধা (Benefits of crop rotation):                                                           

১) কম উৎপাদন ব্যয়:

এই প্রকার কৃষিপদ্ধতিতে চাষের জমিকে বারবার নতুন করে তৈরি করতে হয় না। তা ছাড়া চাষের জন্য প্রয়োজনীয়  পরিকাঠামোও পর্যাপ্ত থাকে, তাই উৎপাদন ব্যয় অনেক কম হয়।

২) রোগ-পোকার উপদ্রব কম:

জমিতে কোনো নির্দিষ্ট শস্য একভাবে চাষ করা হয় না বলে, জমিতে রোগ পোকার  উপদ্রব কম থাকে।

৩) কৃষকদের সারাবছর অর্থের যোগান থাকে:

এই কৃষি পদ্ধতিতে জমিকে একবার চাষের পর ফেলে রাখা হয় না। সারাবছরই জমিতে কোনো না কোনো শস্য উৎপাদন করা হয়। এজন্য কৃষকদের সারাবছর কাজের অভাব হয় না। এবং আর্থিক দিক থেকেও কৃষকবন্ধুরা উপকৃত হয়ে থাকে |

৪) মানুষ ও পশুর উভয়ের খাদ্যের জোগান:

মানুষ ও পশু উভয়েরই খাদ্যের জোগান এই কৃষিপদ্ধতির মাধ্যমে খুব সহজেই করা সম্ভব | কৃষকের ফসল চাষের পাশাপাশি গবাদি পশু থাকলে একাধারে দুই থেকেই লাভ করতে পারবেন |

৫) জমির উর্বরতা বৃদ্ধি:

শস্যাবর্তন পদ্ধতিতে পর্যায়ক্রমিক চাষের জন্য এমন কিছু শস্যকে নির্বাচন করা হয় যেগুলি জমির উর্বরতাকে বজায় রাখে। যেমন ধান চাষের পর জমিতে মটর জাতীয় শস্য চাষ করলে জমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

৬) আগাছা হ্রাস পায়:

একই জমিতে বারবার চাষ করা হয় বলে জমি সবসময় আগাছা মুক্ত থাকে।

৭) কৃষকের ক্ষতির সম্ভাবনা কম:

প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত কারণে যদি কোনো শস্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে কৃষক অন্য শস্য উৎপাদন করে সেই ক্ষতিপুরণ করতে পারেন। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এই কৃষিপদ্ধতিতে কৃষকদের ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক হ্রাস পায়।

আরও পড়ুন -Weed management methods: দেখে নিন ক্ষেতের আগাছা দমন করার উপায়

Published On: 08 October 2021, 08:53 PM English Summary: Crop rotation in farming: Learn the importance of crop rotation in agriculture

Like this article?

Hey! I am রায়না ঘোষ . Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters