কাঁঠাল (Jackfruit) এর বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus heterophyllus ।এটি এক প্রকারের হলুদ রঙের সুমিষ্ট গ্রীষ্মকালীন ফল। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলের প্রায় সর্বত্র কাঁঠাল গাছ দেখা যায়। কাঁচা কাঁঠালকে বলা হয় এঁচোড়। কাঁঠাল গাছের কাঠ আসবাবপত্র তৈরীর জন্য সমাদৃত। কাঁঠাল পাতা বিভিন্ন প্রাণীর পছন্দের খাদ্য। তুলনামূলকভাবে বিশালাকার এই ফলের বহির্ভাগ পুরু এবং কন্টকাকীর্ণ, অন্যদিকে অন্তরভাগে একটি কাণ্ড ঘিরে থাকে অসংখ্য রসালো কোয়া। কাঁঠালের বৃহদাকার বীজ কোয়ার অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত।
কাঁঠালের জাত :
কাঁঠালের বেশ কিছু জাত রয়েছে। চাষযোগ্য জাতসমূহ মোটামুটি দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। গালা ও খাজা - এ দুটি জাত ছাড়াও কাঁঠালের আরো জাত আছে। গালা ও খাজা কাঁঠালের মাঝামাঝি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হিসেবে রয়েছে ‘রসখাজা’। এছাড়া আছে রুদ্রাক্ষি, সিঙ্গাপুর, সিলোন, বারোমাসী, গোলাপগন্ধা, চম্পাগন্ধা, পদ্মরাজ, হাজারী প্রভৃতি। তার মধ্যে হাজারী কাঁঠাল ছাড়া, বাকী সব ভারতে চাষ হয়।
১.গালা বা গলা :
যখন কাঁঠাল ভালভাবে পাকে তখন এর অভ্যন্তরে রক্ষিত কোষ বা কোয়া অত্যন্ত কোমল, মিষ্টি ও রসালো প্রকৃতির হয়ে থাকে। তবে কখনো কখনো রসের স্বাদ টক-মিষ্টিও হয়ে থাকে। কোষ অপেক্ষাকৃত ছোট হয়। খোসার গায়ে কাঁটাগুলো খুব একটা চ্যাপ্টা হয় না। পাকার পর একটু লালচে-হলুদাভ হয়। কোষগুলোকে সহজেই আলাদা করা যায়।
২.খাজা :
কোষ আকারে বড় হয়, পাকার পর কম রসালো ও অপেক্ষাকৃত শক্ত বা কচকচে হয়। কোষ চিপলেও সহজে রস বের হয় না। রং ফ্যাকাশে হলুদ ও স্বাদ মোটামুটি মিষ্টি হয়। সহজে হজম হয় না বলে অনেকেই এ জাতের কাঁঠাল পছন্দ করেন না। খোসার রঙ পাকার পরও সবুজাভ থাকে এবং গায়ের কাঁটাগুলো মোটামুটি চ্যাপ্টা, বড় ও মসৃণ প্রকৃতির হয়।
কাঁঠালের পুষ্টিগুণ :
কাঁঠাল পুষ্টি সমৃদ্ধ। এতে আছে থায়ামিন,রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং নায়াসিনসহ বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান। অন্যদিকে কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় তা মানব দেহের জন্য বিশেষ উপকারী।
উপকারিতা :
১.কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ নিতান্ত কম। এই ফল খাওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা কম।
২.কাঁঠাল পটাশিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস। ১০০ গ্রাম কাঁঠালে পটাশিয়ামের পরিমাণ ৩০৩ মিলিগ্রাম। পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এ জন্যে কাঁঠালে উচ্চরক্তচাপের উপশম হয়।
৩. কাঁঠালে প্রচুর ভিটামিন এ আছে যা রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
৪. কাঁঠালের অন্যতম উপযোগিতা হল ভিটামিন সি। প্রাকৃতিকভাবে মানবদেহে ভিটামিন “সি” তৈরি হয় না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দাঁতের মাড়িকে শক্তিশালী করে ভিটামিন “সি”।
কাঁঠালে বিদ্যমান ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস- আলসার, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে সক্ষম।
৫.কাঁঠালে আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রির্যাডিকেলস থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও আমাদেরকে সর্দি-কাশি রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
৬. টেনশন এবং নার্ভাসনেস কমাতে কাঁঠাল বেশ কার্যকরী।
৭.বদহজম রোধ করে কাঁঠাল।
কাঁঠাল গাছের শেকড় হাঁপানী উপশম করে। শেকড় সেদ্ধ করলে যে উৎকৃষ্ট পুষ্টি উপাদান নিষ্কাশিত হয় তা হাঁপানীর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম।
কাঁঠালের চাষ :
জমি:
পানি দাঁড়ায় না এমন উঁচু ও মাঝারি সুনিষ্কাষিত উর্বর জমি কাঁঠালের জন্য উপযোগী।
চারা তৈরি:
সাধারণত কাঁঠালের বীজ থেকে কাঁঠালের চারা তৈরি করা হয়। ভাল পাকা কাঁঠাল থেকে পুষ্ট বড় বীজ বের করে ছাই মাখিয়ে ২/৩ দিন ছায়ায় শুকিয়ে বীজতলায় বপন করলে ২০-২৫ দিনে চারা গজাবে। ২-৩ মাসের চারা সতর্কতার সাথে তুলে মূল জমিতে রোপণ করতে হয়।এছাড়া গুটি কলম, ডাল কলম, চোখ কলম, চারা কলম এর মাধ্যমেও চারা তৈরি করা যায়।
রোপনের সময়:
ষড়ভূজী পদ্ধতিতে সুস', সবল ও রোগমুক্ত চারা বা কলম মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য শ্রাবণ মাসে রোপণ করতে হয়।
রোপন পদ্ধতি:
গাছ ও লাইনের দূরত্ব ১২ মিটার করে রাখা দরকার। রোপণের সময় প্রতি গর্তে গোবর ৩৫ কেজি, টিএসপি সার ২১০ গ্রাম, এমওপি সার ২১০ গ্রাম সার প্রয়োগ করতে হয়। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রতি গাছের জন্য সারের পরিমাণ বৃদ্ধি করা দরকার। চারা/ কলমের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য পরিমিত ও সময় মতো সেচ প্রদান করা দরকার।
রোগ আক্রমণ ও তার প্রতিকার:
এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমণে এর রোগ হয়। এ রোগের আক্রমণে কচ ফলের গায়ে বাদমি রঙের দাগের সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত আক্রান্ত ফল গাছ থেকে ঝড়ে পড়ে।গাছের নিচে ঝড়ে পড়া পাতা ও ফল পুড়িয়ে ফেলতে হয়। ফলিকুর ছত্রাকনাশক ০.০৫% হারে পানিতে মিশিয়ে গাছে ফুল আসার পর থেকে ১৫ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করা দরকার। ছত্রাকের আক্রমণের কারণে ছোট অবস্থাতেই কালো হয়ে ঝড়ে পড়ে। এ সময় ডাইথেন এম ৪৫ অথবা রিডোমিল এম জেড ৭৫, প্রতিলিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম করে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফলন সংগ্রহ:
ফল পাকতে ১২০-১৫০ দিন সময় লাগে। সাধারণত জ্যৈষ্ঠ- আষাঢ় মাসে কাঁঠাল সংগ্রহ করা হয়।
আরও পড়ুন - সঠিক নিয়মে রুট কাটিং নিয়মে বাড়ির ছাদে বা উঠানে আঙ্গুর চাষের পদ্ধতি (Grape Cultivation On Rooftop)
Share your comments