ঢেঁড়স মূলত শীতকালীন সবজী হলেও বর্তমানে এটি সারা বছরই চাষ করা যায়। এটি একটি জনপ্রিয় সবজি।ঢেঁড়স আমাদের দেশে বৃহৎ পরিসরে চাষ করা হয়। ঢেঁড়শে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি ও সি এবং এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমানে আয়োডিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও বিভিন্ন খনিজ পদার্থ রয়েছে। ঢেঁড়শ নিয়মিত খেলে গলাফোলা রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে না, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ করে, এছাড়াও এটা হজম শক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। বীজ বোনার প্রায় ১২০-১৩০ দিনের মধ্যে ঢেঁড়সগুলো শুকিয়ে লম্বালম্বিভাবে ফাটতে শুরু করে। ঢেঁড়স শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধারালো ছুরি দিয়ে পাকা ফলগুলো সংগ্রহ করে ও রোদে ভালো করে শুকিয়ে মাড়াই করার পর বীজ ঠান্ডা করে প্লাষ্টিক ব্যাগে ভরে রাখতে হবে। বীজ হিসাবে চাষাবাদে ফলন হয় ১০০-১৫০ কেজি/ হেক্টর। এই ঢেঁড়সের বেশ কিছু রোগ আছে যা নিম্নে আলোচনা করা হল।
পোকা- মাকড় ও রোগ-বালাই দমন (Disease Management) -
সাদা মাছি দমন ব্যবস্থা:
এ পোকা ঢেঁড়সের চারা গাছ থেকে শেষ পর্যন্ত পাতার রস চুষে খায়। আক্রান্ত পাতা বিবর্ণ ও কুঁকড়ে যায়। টাফগর / সানগর ২ মিলি,/ এডমায়ার ০.৫ মিলি/ একতারা ০.২৫ গ্রাম / লিটার লিটার পানি স্প্রে করতে হবে।
১। ৫০ গ্রাম সাবান/সাবানের গুড়া ১০ লিঃ পানিতে মিশিয়ে পাতার নীচে সপ্তাহে ২-৩ বার ভাল করে স্প্রে করতে হবে।
২। ফসলের অবশিষ্টাংশ ধ্বংস করা।
৩। ম্যালথিয়ন ৫৭ ইসি জাতীয় কীটনাশক (প্রতি লিটার পানিতে ২মি.লি. পারিমাণ) অথবা এডমায়ার ২০০ এমএল (প্রতি লিটার পানিতে ০.৫মি.লি. পরিমাণ) মিশিয়ে স্প্রে করা।
ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা:
১। সপ্তাহে অন্তত: একবার মরা বা নেতিয়ে পড়া ডগা, আক্রান্ত ফুল ও ফল সংগ্রহ করে কমপক্ষে একহাত গভীর গর্ত করে পুতে ফেলতে হবে।
২। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করে পোকার কীড়া বা পুত্তুলি ধ্বংস করা।
৩। বিকল্প পোষক গাছ যেমন তুলার আবাদ ঢেঁড়শের জমির কাছাকাছি না করা।
৪। আক্রমনের মাত্রা বেশী হলে অন্ত:বাহী বিষ ক্রিয়া সম্পন্ন কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে বিষ প্রয়োগের দুই সপ্তাহের মধ্যে খাওয়ার জন্য কোন ফল সংগ্রহ করা যাবে না।
পোকা- মাকড়:
পাতা মোড়ানো পোকা:
এই পোকা ঢেঁড়সের কচি পাতা মোড়ায় এবং ভিতরে থেকে পাতার সবুজ অংশ খায়। আক্রমনের মাত্রা বেশি হলে সুমিথিয়ন/ফলিথিয়ন /নিক্সইয়ন ৫০ ইসি ২ মিলি/ লিটার পানিতে (হেক্টর প্রতি) মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ডগা, কান্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকা:
এ পোকার কীড়া গাছের কচি ফল ও কান্ড ছিদ্র করে ও ভিতরে কুড়ে কুড়ে খায়। রিপকর্ড ১ মিলি/ সবিক্রন ২ মিলি /সুমিথিয়ন ২ মিলি /ডায়াজিনন ২ মিলি /লিটার পানিতে (হেক্টর প্রতি ) মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ঢ়েঁড়সের মোজাইক ভাইরাস রোগঃ
এ রোগে পাতাগুলোতে হলুদ ও সবুজ রংয়ের মোজাইক দেখা যায়। পাতা কুঁকড়ে যেতে পারে এবং গাছের বৃদ্ধি ও ফলন খুব কমে যায়। এ রোগের কোন ঔষধ নেই। আক্রান্ত গাছ তুলে নষ্ট করে দিতে হবে। জমিতে পানি নিষ্কাশন করতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছ থেকে বীজ ব্যবহার করা উচিত নয়। এ রোগ সাধারণত সাদা মাছি দ্বারা বিস্তার লাভ করে। সাদা মাছি দমনের জন্য টাফগর / সানগর ২ মিলি,/ এডমায়ার ০.৫ মিলি/ একতারা ০.২৫ গ্রাম/ রগর বা রক্সিয়ন ২ মিলি / লিটার পানিতে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া ভাইরাস প্রতিরোধক জাত ব্যবহার করা ভালো।
ঢ়েঁড়সের পাতার শিরা স্বচ্ছতা রোগঃ
সব পাতাই হলুদ ও সবুজ ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। পাতার শিরাগুলো স্বচ্ছ ও হলুদ হয়ে যায়। গাছের পাতা ছোট ও খর্বাকৃতি হয়। ভাইরাসের বাহক পোকা সাদা মাছি এ রোগ ছড়ায়। সাদা মাছি দমনের জন্য টাফগর / সানগর ২ মিলি,/ এডমায়ার ০.৫ মিলি/ একতারা ০.২৫ গ্রাম/ রগর বা রক্সিয়ন ২ মিলি / লিটার পানিতে স্প্রে করতে হবে।
আরও পড়ুন - জানুন টিউলিপ ফুলের বৈশিষ্ট্য ও টিউলিপ ফুলের চাষাবাদের পদ্ধতি
ঢ়েঁড়সের পাতার দাগ রোগঃ
অল্টারনারিয়া ছত্রাক দ্বারা আক্রমনের ফলে পাতার উপরে বিভিন্ন আকৃতির গোলাকার বাদামি রং পড়ে। রোগের মাত্রা বেশি হলে পাতা মুচড়িয়ে যায় এবং পরে ঝলসে ঝরে পরে। ব্যাভিস্টিন ১ গ্রাম/ রোভরাল ২ গ্রাম/ডাইথেন এম-৪৫ ২ গ্রাম/লিটার পানিতে পাতায় ২/১ টি দাগ দেখা দিলে স্প্রে করতে হবে।
ঢ়েঁড়সের শিকড়ের গিঁট রোগঃ
আক্রান্ত গাছের শিকড়ে প্রচুর গিঁট দেখা যায়। গাছের পাতা ছোট ও খর্বাকৃতি হয় এবং ফল কম হয়। ফুরাডান/মিরাল ব্যবহার করতে হবে।
আরও পড়ুন - জানুন টমেটোর বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার
Share your comments