বাঁধাকপির বৈজ্ঞানিক নাম Brassica oleracea var capitata । দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো পশ্চিমবঙ্গেও বাঁধাকপির চাষ হয়ে থাকে। বাঙালিদের মধ্যে সবজি হিসাবে বাঁধাকপির জনপ্রিয়তা অত্যাধিক। পূর্বে বাঁধাকপি প্রধানত শীত কালেই পাওয়া যেত। এখন সারাবছর এটি উপলব্ধ।
এদেশে উৎপাদিত বাঁধাকপির প্রায় সব জাতই বিদেশি ও হাইব্রিড। সব জাতের বীজ এদেশে উৎপাদন করা যায় না। তবে এদেশে বীজ উৎপাদন করা যায় বারি উদ্ভাবিত এমন জাতও আছে। বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ‘ এবং বিটামিন বি, ও ভিটামিন সি রয়েছে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য বাঁধাকপি বেশ উপকারী।
বাঁধাকপির চাষের সময় (Cultivation time) -
বাঁধাকপি শীত মৌসুমে আগাম ও নাবী দুইভাবেই চাষ করা হয়ে থাকে। বর্তমানে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালেও বাঁধাকপি চাষ করা হয়।
চাষের মাটি -
সব ধরণের মাটিতেই বাঁধাকপি চাষ করা যায়। সবথেকে বেশি ভালো হয় দো-আঁশ বা পলি দো-আঁশ মাটিতে চাষ উপযোগী। অত্যধিক বেলে মাটি ছাড়া ও অদিক অম্লীয় বা লাল মাটিতে বাঁধাকপি ভালে জন্মে না।
বাঁধাকপি চাষে চারা উৎপাদন পদ্ধতি –
বাঁধাকপির চারা প্রথমে বীজতলায় উৎপাদন করতে হয় এবংপরবর্তী সময়ে জমিতে লাগানো হয়। বীজতলায় জন্য বালি, মাটি ও জৈবসার ভালাভাবে মিশিয়ে ঝুরঝুরা করে নিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হয়। বীজতলার আকার ১ মিটার পাশে ও লম্বায় ৩ মিটার হওয়া উচিত।
বাঁধাকপি চাষে জমি তৈরি (Land preparation for cabbage cultivation) -
বাঁধাকপি চাষ -এ জমি তৈরির জন্য গভীর ভাবে ৪-৫টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হবে। শেষ চাষের সাথে জমিতে প্রয়োজনীয় সার সমানভাবে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। জমি তৈরি হয়ে গেলে মাটি থেকে ১৫-২০ সে.মি. উঁচু ও এক মিটার চওড়া করে বেড তৈরি করে নিতে হবে। বেড থেকে বেডের মাঝখানের দুরত্ব কমপক্ষে ৩০ সে. মি. রাখতে হবে এবং বেডের মাঝে নালা রাখতে হবে।
চারা রোপণ পদ্ধতি -
বীজ বপনের পর চারার বয়স ৩০-৩৫ দিন হলে বা ৫/৬টি পাতা বিশিষ্ট ১০-১৫ সেন্টিমিটার লম্বা সুস্থ ও সবল চারা মুল জমিতে রোপন করতে হবে। রোপণের জন্য সারি থেকে সারির দুরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার এবং প্রতি সারিতে চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪৫ সেন্টিমিটার দিলে ভাল হয়। প্রতি শতকে ১৫০টির মত বাঁধাকপির চারার প্রয়োজন হয়।
বাঁধাকপির সার প্রয়োগ পদ্ধতি (Fertilizer application) -
জমিতে ভালো ফলন পেতে হলে জৈব সার, বাঁধাকপির জন্য প্রতি শতক প্রতি ১২৫ কেজি গোবর সার,ইউরিয়া ১ কেজি, টিএসপি ৮০০ গ্রাম, এমওপি ৬৫০ গ্রাম সার দিতে হবে। জমি তৈরির সময় সম্পূর্ন গোবর ও টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ও এমওপি সার ২ কিস্তিতে চারা রোপণের ২০-২৫ দিন পর একবার এবং ৩০-৪০ দিন পর আর একবার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
বাঁধাকপির চাষে সেচ প্রদান -
সার দেওয়ার পর পরই জমিতে সেচ দিতে হবে। এ ছাড়া জমিতে জলের অভাব দেখা দিলে সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সেচ দেওয়ার সুবিধার জন্য গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে দুই সারির মাঝখান নালা তৈরি করে দিতে হবে।
পোকা মাকড় ও রোগ ব্যবস্থাপনা -
বাঁধাকপির রোগ-বালাই ও পোকামাকড়ের মধ্যে সবথেকে ক্ষতিকর পোকা হল মাথা খেকো লেদা পোকা। নাবী জাতের সরুই পোকা বা ডায়মন্ড ব্যাক মথ বেশি ক্ষতি করে। বীজ উৎপাদনের জন্য চাষ করলে পুষ্পমঞ্জরীকে জাব পোকার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। অন্যান্য পোকার মধ্যে ক্রসোডলমিয়া লেদা পোকা, বিছা পোকা, ঘোড়া পোকা ইত্যাদি মাঝে মাঝে ক্ষতি করে থাকে।
বাঁধাকপির রোগের মধ্যে পাতায় দাগ ও কালো পচা রোগ প্রধান সমস্যা। এছাড়া চারা ঢলে পড়া বা ড্যাম্পিং অফ, মাথা পচা বা গ্রে মোল্ড, ক্লাব রুট বা গদাই মূল, মোজেইক, পাতার আগা পোড়া ইত্যাদি রোগও হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন - Terrace Farming – বাড়ির ছাদেই করুন লেটুস শাকের চাষ, জেনে নিন চাষের পদ্ধতি
ফসল সংগ্রহ ও ফলন:
মুল জমিতে চারা রোপণের ৬০-৯০ দিনের মধ্যে বাঁধাকপি সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি বাঁধাকপি গড়ে ২.৫ কেজি ওজন হয়ে থাকে। প্রতি শতকে ১৫০-১৮০ কেজি, হেক্টরে ৭৫-৮০ টন ফলন হয়ে থাকে। প্রভাতী জাতের বাঁধাকপির ১১০-১১০ টন/হেক্টর ফলন হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন - Hydroponic Method - জানুন হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম চাষের পদ্ধতি
Share your comments