পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর বেগুন ফসলের ফলন প্রায় ৮ থেকে ২০ টন হয়ে থাকে, এটি কৃষকের বিভিন্ন ধরণের হাইব্রিড বীজের উপর নির্ভর করে। বীজ নির্বাচন বিভিন্ন মাটির প্রকার, অঞ্চল এবং বিভিন্ন জলবায়ুর অবস্থার উপর নির্ভর করে। তদনুসারে একজন কৃষক বেগুনের ফসলের উচ্চ ফলনের জন্য উপযুক্ত জাত নির্বাচন করেন। বেগুন চাষের গড় ব্যয়ের পরিমাণ ৩২,৫০০ টাকা।
বেগুন চাষে কৃষক যদি পলিমালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করেন, তবে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়, রোগ পোকার থেকেও ফসলকে সুরক্ষিত রাখা যায়। সাধারণত ২০ জি এস এম –এর পলিমালচ্ হলে ভালো হয়। বিভিন্ন কোম্পানির পলিমালচ্ বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। পলিমাল্চ-এর ফিল্মগুলি বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তৈরী করা হয়, যার উপরের দিকটি রুপোলী ও ভেতরের দিকটি কালো বর্ণের। বাইরের দিকের রুপোলী বর্ণ সূর্যের আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে বেগুন গাছের সালোকসংশ্লেষের মাত্রা বাড়িয়ে উদ্ভিদটির স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, এতে ফলন অনেক বেশী পাওয়া যায়। আবার কালো রঙের ভেতরের দিকটি মাটিতে প্রখর সূর্যরশ্মি প্রবেশ করতে না দেওয়ায় আগাছা একেবারেই জন্মাতে পারে না। তবে পলিমাল্চ বেডের জন্য ড্রিপ সেচ হল সর্বোৎকৃষ্ট। ড্রিপ সেচ না দিলে ঘন ঘন অল্প পরিমাণ জল সেচের জন্য প্রয়োজন।
চাষ পদ্ধতি (Cultivation method) –
বেগুন বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে বোনা হয়। চারা রোপণের আগে মূল জমিতে ৪০ কুইন্টাল জৈব সার বা ২৫ কুইন্টাল কেঁচো সার, ১৫ কেজি নিম কোটেড ইউরিয়া, ৭৫ কেজি সি.সু.ফসফেট, ১০ কেজি মিউরেট অফ পটাশ মিশিয়ে বেড তৈরি করতে হবে। বেডের উপর পলিমালচ্ বিছিয়ে দিতে হবে। এর পর পলিমালচে্ মাপ অনুযায়ী উদ্ভিদের এক সারি থেকে অপর সারির দূরত্ব অনুযায়ী ছিদ্র করে চারা বসাতে হবে। উঁচু বেডের মাঝের নিচু নালাগুলিতে অল্প পরিমাণে কিন্তু ঘন ঘন জলসেচ দেওয়া দরকার।
এই পলিমালচ্ আগাছা নিয়ন্ত্রণের সাথে সাথে সুসংহত উপায়ে কীট দমনেও প্রভুত সাহায্য করে ফলে জৈব উপায়ে বেগুন উৎপাদন করতে সুবিধা হয়।
বর্ষায় বেগুনের রোগ (Disease Management) -
বর্ষায় বেগুনে ছত্রাকঘটিত রোগ, ফল ও গোড়া পচা রোগ, ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়। এ সম্পর্কে চাষিদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি দপ্তর। অনেক সময় নিমাটোডের আক্রমণের কারণে বর্ষায় বেগুনের গোড়া ফুলে যায়। গাছের গোড়া ও ফল পচা রোগের কারণে চাষীরা তো প্রায় প্রতি বছর লোকসানের মুখে পড়েন। তাই এবার কৃষি দপ্তর এই রোগ সম্পর্কে চাষীদের আগাম সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। কৃষি দপ্তর জানিয়েছে, এই রোগের প্রকোপে বেগুনের গোড়া পচে গিয়ে গাছ মরে যায়। পরে পাতা হলদে হয়ে ঝরে পড়ে, ফুল-ফলও আশানুরূপ হয় না।
এছাড়া এই সময়ে বেগুনে ফল, পাতা ও কাণ্ড ছিদ্রকারী এক ধরনের পোকারও উপদ্রব হয়। এই রোগ ও পোকা দমনের জন্য জলের মধ্যে কার্বেনডাজিম ও ম্যানকোজেবের মিশ্রণ গুলিয়ে বেগুন গাছে স্প্রে করতে হবে। কীটের আক্রমণে অনেক সময় উদ্ভিদটি মাটি থেকে জল ও সার শোষণ করতে অক্ষম হয়ে পড়ে, ফলে গাছে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। এর প্রতিকারের জন্য এক লিটার জলে দেড় মিলিমিটার কার্বোসালফান গুলিয়ে বেগুন গাছে স্প্রে করলে দ্রুত ভালো ফল পাওয়া যায়।
সম্প্রতি ২০ জি এস এম –এর পলিমাল্চ ব্যবহার করে চাকদহ, নদীয়ার কৃষক শ্রী অসীম মণ্ডল বেগুন চাষ করছেন, ড্রিপ সেচ ছাড়াই তিনি ব্যাপক ফলন পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন যে-
-
মালচিং পদ্ধতিতে চাষে ব্যয় কম হয়।
-
মালচ্ দিয়ে চাষ করে তার নিড়েনের খরচা আশি শতাংশ কম লেগেছে।
-
রোগ-পোকার উপদ্রব আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।
-
ফসলের গুনমানও পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভালো গুণমানের উৎপাদনের জন্য তিনি বেগুন বিক্রি করে ব্যাপক মুনাফা অর্জন করেছেন বলে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন - মালটা ফসলে রোগ পোকা ও তার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
Share your comments