আম, কলা এবং আনারসের পরে পেঁপে পশ্চিমবঙ্গের চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ ফল, এখানে গড়ে ৩৪.৩ টন/হেক্টর পেঁপে উৎপাদিত হয়। ৭,৫৮০ হেক্টর এলাকা জুড়ে রাজ্যে পেঁপের চাষ হয়। পেঁপের থেকে আর্থিক উপার্জন দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশের শহরের দূষণের মাত্রা এতটাই বেশী যে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই কমে যাচ্ছে। পেঁপে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ৷ এতে থাকা ভিটামিন এ, সি, ই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে এক্ষেত্রে৷ ঘুম বাড়াতে, মানসিক চাপ কমাতেও ধীরে ধীরে এটি সাহায্য করে ৷ পেঁপে মানুষের শরীরে প্লেটলেটস বাড়িয়ে অনাক্রমণ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। এই কারণে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক ঔষধের বাজারে পেঁপের ভালো দাম রয়েছে। সুতরাং, এই ফসলের চাষ করে কৃষক অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নমিত হতে পারে।
পেঁপে চাষের ক্ষেত্রে প্রথমেই মনে রাখতে হবে যে উন্নত জাতের বীজ কেবল অনুমোদিত স্থান থেকে নেওয়া উচিত। ভাল জমিতে এক সেন্টিমিটার গভীরতায় বীজ বপন করতে হবে। বীজ ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষার্থে কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা উচিত।
২২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ২৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা পেঁপের ভাল উত্পাদনের জন্য উপযুক্ত। বেলে দোআঁশ মাটিতে পেঁপের ফলন ভালো হয়।
পেঁপে চাষ করার সঠিক সময় -
ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত পেঁপে চাষের আদর্শ সময়। জমি ভালো করে প্রস্তুত করে নিয়ে তাতে চারা রোপণ করতে হবে। একটি চারা থেকে অপর চারার দূরত্ব ২ মিটার রাখলে ভালো হয়। জমিতে বৃষ্টির জল যাতে না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
চাষ পদ্ধতি (Cultivation Method)-
(১) বীজের হারঃ-
প্রতি গ্রামে বীজের সংখ্যা ৬০-৭০টি। হেক্টর প্রতি ৭০-১০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন। সে হিসেবে ৩০০০-৩২০০ চারা দিয়ে ১ হেক্টর জমিতে পেঁপে চারা লাগানো যায়।
(২)চারা তৈরিঃ-
বীজ থেকে বংশ বিস্তার করা যায়। বীজের প্যাকেট কেটে ২ ঘন্টা রোদে শুকানোর পর ২ ঘন্টা রোদে শুকানোর পর ঠান্ডা জায়গায় রেখে ঠান্ডা করে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা জলে ভেজানোর পর পলেথিন ব্যাগে চারা তৈরি করতে হবে। পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করলে রোপনের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ৫X৬ সেঃ মিঃ আকারে ব্যাগে সম পরিমাণ বেলে দোয়াশ মাটি ও পচা গোবরের মিশ্রণ ভর্তি করে, ব্যাগের তলায় ২-৩ টি ছিদ্র করতে হবে। তারপর এতে সদ্য সংগৃহীত বীজ হলে একটি এবং পুরাতন বীজ হলে ২টি বীজ বপন করতে হবে। ১টি ব্যাগে এক এর অধিক চারা রাখা উচিৎ নয়।
(৩) চারা রোপণ-
১.৫ থেকে ২ মাস বয়সের চারা রোপন করা হয়। ২ মিটার দূরে দূরে ৬০X৬০X৬০ সেঃ মিঃ আকারে গর্ত করে রোপনের ১৫ দিন পূর্বে গর্তের মাটির সার মিশাতে হবে। জমির জল নিষ্কাশনের জন্য ২ সারির মাঝখানে ৫০ সেঃ মিঃ নালা রাখতে হবে।
(৪) সারের পরিমানঃ-
প্রতি পেঁপে গাছে নিন্মরূপ সার ব্যবহার করতে হবে।
(৫) রোপনের সময়ঃ-
চারা লাগানোর পর নতুন পাতা আসলে ইউরিয়া ও এমওপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি ১ মাস অন্তর প্রয়োগ করতে হবে। গাছে ফুল আসলে এ মাত্রা দ্বিগুণ হবে। শেষ ফল সংরহের পূর্বেও সার প্রয়োগ করতে হবে।
(৬) অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যাঃ-
বাগান সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। গাছের গোড়া থেকে আগাছা তুলে ফেলে দিতে হবে। গাছের গোড়া মাটি কোদাল দিয়ে হালকা করে দিতে হবে। গাছে অতিরিক্ত ফল ধরলে কিছু ফল পেরে নিয়ে হালকা করে দিলে, বাকি ফল গুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। পেঁপে গাছে বিভিন্ন হরমোন প্রয়োগ করে বেশ সুফল পাওয়া যায়।
Image Source - Google
Related Link - (Chrysanthemum flower) চন্দ্রমল্লিকার রোগ ও তার প্রতিকার
Share your comments