দেশের বহু জায়গাতেই বর্ষার অতি বৃষ্টিতে শুরু হয়েছে। এমতাবস্থায় সবজি চাষ করেন এমন অনেক কৃষকেরই মাথায় হাত পড়েছে৷ কিন্তু বর্ষাকালে জলজ শাক সবজি বা Aquatic Vegetables যদি চাষ করা শুরু করেন কৃষকেরা, সেক্ষেত্রে লাভের সম্ভাবনাই বাড়বে৷ বর্ষার জলে চাষ ভালো হবে এমন শাক সবজিতেই (Profitable Farming in Monsoon) জোর দিচ্ছেন কৃষকেরা৷ বলা যায়, লকডাউনে ধাক্কা খাওয়ার পর কৃষিক্ষেত্রে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে বর্ষাকাল৷
এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) চাষে বিশেষ নজর দেন৷ ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষ হয়ে থাকে বিভিন্ন রাজ্যে৷ তবে এসব ছাড়াও, বেশ কয়েকটি উদ্ভিদ চাষে (Kharif Crop Farming) বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷ বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷
এই বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷
পদ্ম (Lotus)-
এটিও বহুল পরিমাণে চাষ হয়ে থাকে৷ চিন-জাপানে পদ্ম প্রচুর চাষ করা হয়৷ এর পাতা, কাণ্ড, ফুল, বীজ থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুই ব্যবহার করা হয়৷ সবজি, আচার, স্যুপ, বিভিন্ন প্রকারের রান্না তৈরিতে পদ্মের বিভিন্ন অংশের ব্যবহার হয়৷ ভিটামিন, প্রোটিন, ৮ প্রকারের খনিজে ভরপুর এগুলি৷ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতেও সহায়তা করে পদ্ম৷ পদ্মপাতা শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে৷
পানিফল (Water Chestnut) -
বিভিন্ন শাক সবজির পাশাপাশি পানিফল চাষও কিন্তু খুবই লাভজনক৷ সবুজ বা মেরুন রঙের শক্ত খোসার ভিতরে সাদা রঙের পানিফল খুবই জনপ্রিয়৷ ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সবুজ পানিফলের গুরুত্ব বেশি৷ পানফেলর চাষ করে বহু চাষিই লাভের মুখ দেখেছেন৷
বর্ষাকালে (Farming in Monsoon) বিভিন্ন শাকের মধ্যে কলমি শাকের (Water Spinach) চাষ উল্লেখযোগ্য৷ এর বৈজ্ঞানিক নাম আইপোমিয়া অ্যাকোয়াটিকা৷ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভূত পরিমাণে এই শাকের চাষ হয়ে থাকে৷ দেশে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, ওডিশা, কর্ণাটকে এর চাষ করা হয়৷ জুন-জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর এই চারমাসেই এর বীজ বপন করা যেতে পারে৷ বীজ বপনের ৫-৬ দিনের মধ্যে এই শাক সংগ্রহের উপযুক্ত হয়ে যায়৷
ঘৃতকুমারী -
এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷
অগ্নিশিখা বা কলিহারি -
এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷
আরও পড়ুন - Profitable Mushroom Farming - দারিদ্র দূরীকরণে দিশা দেখাচ্ছে মাশরুম, চাষে আয়ের সম্ভবনা প্রচুর
যষ্টিমধু - জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷
অশ্বগন্ধা - বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷
আরও পড়ুন - Monsoon Crop Care - ভালো ফল পেতে এই মরসুমে কীভাবে করবেন পেয়ারা গাছের পরিচর্যা, জেনে নিন পদ্ধতি
Share your comments