আপনার কি গাছের শখ রয়েছে? তাহলে নিজের বাগানেই চাষ করতে পারেন পেঁপে। পেঁপে ফলানো খুব একটা শক্ত কাজ নয়৷ কয়েকটি বিষয় মেনে চললে সহজেই ফলন ভালো হবে, সেই সঙ্গে উপার্জনের পথও খুলে যাবে৷
পেঁপে স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী৷ পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি ও ই রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং এতে থাকা ভিটামিন সি ত্বক, চুলের জন্য উপকারী৷
পেঁপে, সারা বছরই পাওয়া যায়৷ কাঁচা হোক বা পাকা, গুণে সমৃদ্ধ পেঁপে বর্তমান সময়ে বেশি করে প্রয়োজন আপনার শরীরের জন্য৷ করোনা ভাইরাসকে প্রতিহত করতে শুধু লকডাউন নয়, সেই সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে তুলতে হবে৷ এবং তাই এই সময় বেশি করে ভিটামিন সি যুক্ত ফল, সবজির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে৷ আর পেঁপে-তে ভিটামিন এ এবং সি প্রচুর পরিমাণে, তাই এটি খেতেই পারেন৷ তবে শুধু খাওয়া নয়, এটি বাড়িতে চাষ করে একই সঙ্গে উপার্জনও শুরু করতে পারেন৷
একনজরে দেখে নেব পেঁপের গুণাগুণ (Health Benefits) -
পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি ও ই রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং এতে থাকা ভিটামিন সি ত্বক, চুলের জন্য উপকারী৷ পেঁপে খাবার হজমে সহায়তা করে৷ পেঁপে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে৷ এছাড়া পেঁপে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে৷ পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়৷ এটি ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও কমায় এবং ডায়াবেটিস হওয়া প্রতিরোধ করে৷ পাশাপাশি পেঁপে খেলে তা হাড় মজবুত করতেও সাহায্য করে৷
এতো গুণ সমৃদ্ধ এবং সহজে চাষ সম্ভব হওয়ায় পেঁপে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকেই৷ এবার দেখে নেওয়া যাক এর ফলনে কোন কোন প্রাথমিক বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে৷
পেঁপে চাষ (Papaya cultivation) -
পেঁপের চাষ সাধারণত আশ্বিন বা ফাল্গুণ-চৈত্র মাসে করা হয়৷ সারাবছরই পেঁপে পাওয়া যায়, এবং বাড়ির বাগানে স্বল্প পরিসরে নিজের মতো করেও এর চাষ সম্ভব৷ সাধারণত দোআঁশ মাটি পেঁপে চাষের জন্য প্রয়োজন৷ তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন মাটিতে জল না জমে যায় এবং জমিকে আগাছা মুক্ত রাখতে হবে৷ গ্রীষ্মকালে এক সপ্তাহ পর পর সেচ করতে হবে৷ আর শীতকাল হলে ১০ থেকে ১২ দিন৷ গাছে পোকা না লাগলে একটি গাছ থেকে বছরে তিন-চারবার ফলন পাওয়া যেতে পারে৷
পলিব্যাগে বীজ রোপনের সময় দুই ভাগ মাটির সঙ্গে এক ভাগ জৈব সার মিশিয়ে নিতে হবে৷ অথবা আপনি ভালো মানের চারা নিকটস্থ নার্সারি থেকেও নিযে আসতে পারেন৷ চারা রোপণের আগে প্রতি গর্তে পচা গোবর, টিএসপি ও এমপি, খৈল মিশিয়ে সেই মিশ্রণটি দিয়ে গর্ত ভরাট করে রাখতে হবে৷ প্রায় দু সপ্তাহ এভাবে থাকবে এবং এতে একটু একটু করে জল দিতে হবে রোজ৷ ১৫ দিন পর মাটি তৈরি হবে চারা রোপণের জন্য৷
পেঁপে গাছের চারার বয়স মাস খানেক হয়ে গেলে সেগুলি পলিব্যাগ থেকে সাবধানে বের করে এনে, রোদ কমে এলে অর্থাৎ বিকেল বেলায় জমিতে ৬ফিট দূরত্বে ওই গর্ত করে রোপন করতে হবে৷
মনে রাখবেন, স্ত্রী এবং পুরুষ গাছের চারা প্রতি গর্তে কিছুটা দূরে দূরে রোপন করবেন তবে একটি গর্তে দুই-তিনটের বেশি চারা রোপন করবেন না৷ ফুল না আসা পর্যন্ত প্রতিমাসে ৫০ গ্রাম এমওপি সার এবং ৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার দিতে হবে প্রতিটি চারার জন্য৷ এবং ফুল এলে সেই পরিমাণ বাড়িয়ে গাছ প্রতি ১০০ গ্রাম করতে হবে৷ অর্থাৎ, ১০০ গ্রাম এমওপি এবং ১০০ গ্রাম ইউরিয়া৷
আরও পড়ুন - Bottle Gourd - বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লাউ চাষের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ও পোকামাকড় দমনের পদ্ধতি
গাছ যাতে ঝুঁকে না পড়ে তার জন্য শক্ত খুঁটির ব্যবহার করতে হবে এবং মাঝে মাঝে জল দিতে হবে তবে তা যেন কখনোই মাটিতে জমে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে নাহলে গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ খুব কম সময়ের মধ্যেই পেঁপের ফলন হয়৷ চারা রোপণের প্রায় ৩ মাসের মধ্যেই ফুল আসে এবং ফল ধরার ২-৩ মাস পরেই পেঁপে খাওয়ার জন্য বা বিক্রির জন্য উপযুক্ত হয়ে যায়৷
আরও পড়ুন - Bottle Gourd Rooftop Farming - বাড়ির ছাদে লাউ চাষ করে অর্থ উপার্জন করুন সহজেই
Share your comments