আদা হলো এক স্বাদ বৃদ্ধিকারি জনপ্রিয় মশলাজাতীয় ফসল। ভেষজ গুণ থাকায় আদা কাঁচা ও শুকনা দুভাবেই ব্যবহার করা যায়। বাজারে সারাবছর আদার চাহিদা থাকে তুঙ্গে | কারণ, মানুষের নিত্য রান্নায় আদার ব্যবহার হয়ে থাকে | এছাড়াও, রান্নার কাজে ছাড়া আদার বহু ভেষজ গুন্ থাকে | আদার রস মধু মিশিয়ে খেলে কাশি দূর হয়। আদার রস পেট ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আদা পাকস্থলী ও লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি ছাড়াও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। তাই, আদা চাষে (Ginger cultivation) কৃষকরা আর্থিক দিক থেকে লাভবান হতে পারেন অনায়াসে |
মাটি ও জলবায়ু(Soil and climate):
আদা চাষ করার জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু পূর্ণ আবহাওয় দরকার। সামান্য ছায়াযুক্ত স্থানে আদা চাষ ভাল হয়। আদা চাষের জন্য ঊর্বর দোআঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো। তবে এঁটেল মাটিতে চাষ করলে জল নিষ্কাশনের খুব ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে।
জমি তৈরী:
আদা চাষের জন্য জমিতে ভালো করে ৫/৬টি চাষ ও মই দিয়ে এবং মাটি ঝুরঝুরে করে জমি প্রস্তুত করতে হবে। আদা চাষ করার জন্য উঁচু অথবা মাঝারী উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে আদা চাষ করার জমিতে যেন জল না জমে।
বীজ শোধন:
পচন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বীজ শোধন করতে হবে। এজন্য ১০ লিটার জলে ১২-১৩ গ্রাম রিডোমিল গোল্ড বা এক্রোবেট এম জেড বা ডাইথেন এম-৪৫ মিশিয়ে তাতে ১০ কেজি আদা বীজ আধা ঘন্টা পর্যন্ত ভিজিয়ে তুলে ছায়াযুক্ত স্থানে খড়/চট দিয়ে ঢেকে রাখলে ভ্রুণ বের হয়। এ ভ্রুণযুক্ত আদা জমিতে রোপণ করতে হবে।
আরও পড়ুন - Aquaponics Farming: অ্যাকোয়াপনিক্স পদ্ধতিতে ছাদে মাছ ও সবজি চাষে লক্ষ্মীলাভ
বীজের হার:
আদার ফলন অনেকাংশে বীজের আকারের উপর নির্ভর করে। বীজ আদার আকার বড় হলে ফলন বেশি হয়। সাধারণত ৩৫-৪০ গ্রাম আকারের বীজ রোপণ করলে আদার ফলন বেশি হয়। এ আকারের বীজ রোপণ করলে হেক্টরপ্রতি ২.০-২.৫ টন আদার প্রয়োজন হয়। অপরদিকে, ছোট (২০-৩০ গ্রাম) আকারের বীজ ব্যবহার করলে খরচ কম হয়। এ আকারের বীজ রোপণ করলে হেক্টরপ্রতি ১.৬-২.৪ টন আদার প্রয়োজন হয়।
রোপন পদ্ধতি(Plantation):
সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৫০ সেমি এবং কন্দ থেকে কন্দ ২৫ সেমি দূরত্বে রোপণ করা হয়। একক সারি পদ্ধতিতে ৫০ সেমি পরপর ৫-৬ সেমি গভীর করে সারি তৈরি করার পর ২৫ সেমি দূরত্বে বীজ আদা রোপণ করতে হয়। বীজ আদা রোপণের সময় সবগুলো বীজের অঙ্কুরিত মুখ একদিকে রাখতে হবে যাতে বীজ আদা রোপণের ৭৫-৯০ দিন পর সারির এক পার্শ্বের মাটি সরিয়ে সহজেই আদার রাইজোম সংগ্রহ করা যায়।
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
বেশি ফলন পেতে হলে আদার জমিতে প্রচুর পরিমাণ জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। গোবর ৫-১০ টন ইউরিয়া ৩০০ কেজি, টিএসপি ২৭০ কেজি, এমওপি ২৩০ কেজি, জিঙ্ক ৩ কেজি এবং জিপসাম ১১০ কেজি মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া এবং এমওপি সারের অর্ধেক আদা রোপণের ৫০ দিন পর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া এবং এমওপি ২ কিস্তিতে সমানভাবে বীজ রোপণের ৮০ দিন এবং ১০০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
পরিচর্যা:
রোপণের ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে আদার গাছ বের হয়। আদা রোপণের ৫-৬ সপ্তাহ পর জমির আগাছা নিড়িয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে দিতে হবে। এরপর প্রয়োজনমতো আগাছা পুণরায় পরিষ্কার করে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। আদার রাইজমের বৃদ্ধি এবং জল নিষ্কাশনের জন্য ২-৩ বারে সারির মাঝখানে থেকে মাটি তুলে আদা গাছের গোড়ায় দিতে হবে।
রোগবালাই ও দমন(Disease management system):
পাতা ঝলসানো রোগ:
প্রাথমিক অবস্থায় পাতায় ফ্যাকাশে হলুদ বর্ণের ডিম্বাকৃতির দাগ পড়ে। এসব দাগগুলোর মধ্যে ধূসর বর্ণ হয় এবং চারপাশে গাঢ় বাদামি আবরণ থাকে। রোগের প্রকোপ বেশি হলে দাগগুলো বড় হতে থাকে এবং একত্রিত হয়ে যায়।
প্রতিকার:
বীজ লাগানোর সময় রোগ ও পোকা মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে। প্রতি লিটার জলে ২.৫ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ মিশিয়ে ২-৩ বার ১৫ দিন পরপর স্প্রে করা যেতে পারে।
ডগা বা কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা:
কান্ড আক্রমণ করে বলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ফলে উৎপাদন কম হয়। এ পোকার মথ কমলা হলুদ রঙের এবং পাখার উপর কালো বর্ণের ফোটা থাকে। কীড়া হালকা বাদামি বর্ণের।
প্রতিকার:
পোকার আক্রমণ বেশি হলে, সুমিথিয়ন ৫০ ইসি ২০ মিলি হারে প্রতি ১০ লিটার জলে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। অথবা ডারসবান বা ডাইমেক্রণ প্রতি লিটার জলে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করা যাবে। অথবা নুভাক্রন ১০০ ইসি ১ মিলি/ লিটার জলে মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ:
আধুনিক ও উন্নত পদ্ধতিতে আদার চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টন ফলন পাওয়া যাবে। যা থেকে কৃষকবন্ধুরা বাজারজাত করে ভালো লাভ পেতে পারেন |
আরও পড়ুন -Seed Germination Process: বীজ অঙ্কুরোদগম পদ্ধতিগুলি কি কি?
Share your comments