বাতাবি লেবু Citrus maxima বা Citrus grandis (সাইট্রাস গ্র্যান্ডিস)। এ ফলের আকৃতি গোলাকার, মাঝারি ধরনের। ফলের শাঁস সাদা, রসালো, সুস্বাদু,হালকা টক হালকা মিষ্টি ।ফলের ওজন ৮৫০-১১০০ গ্রাম এবং পাকা ফলের রঙ হলদে ভাবাপন্ন।বাণিজ্যিকভাবে অনেকেই আবার লেবুর চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
আসুন জেনে নেই বাতাবি লেবুর চাষ সম্পর্কে-
উচ্চ ফলনশীল জাতটির প্রধান বৈশিষ্ট হলো-
গাছের আকৃতি ছাতার মতো। পাতা গাঢ় সবুজ, ডানাযুক্ত বৃত্তাকার।
গাছপ্রতি ফলের সংখ্যা ৫০-৫৫টি।
এ জাতের গাছে নিয়মিত ফল ধরে।
ফাল্গুন মাসে এ জাতের গাছে ফুল আসে এবং ভাদ্র-আশ্বিন (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসে ফল সংগ্রহ করা যায়।
মাটি ও জলবায়ু -
হালকা দো-আঁশ থেকে পলি দো-আঁশযুক্ত, সুনিষ্কাশিত ও জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটি বাতাবি লেবু চাষের জন্য উত্তম। তবে মধ্যম অমস্নীয় মাটিতে এটি ভালো জন্মে। বাংলাদেশের জলবায়ু বাতাবি লেবু চাষের জন্য বেশি উপযোগী।
জমি নির্বাচন ও তৈরি -
বাতাবি লেবুর চারা রোপণের জন্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে সমতল ও আগাছামুক্ত করে চারা রোপণের জন্য গর্ত তৈরি করতে হবে।
রোপণ পদ্ধতিঃ
সমতল জমিতে বর্গাকার অথবা আয়তাকার পদ্ধতি অথবা পাহাড়ি জমিতে কন্টুর পদ্ধতিতে বাতাবি লেবুর চারা/কলম রোপণ করা হয়।
রোপণের সময়ঃ
মধ্য জ্যৈষ্ঠ-আশ্বিন (জুন-সেপ্টেম্বর) মাস চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।
গর্তে সার প্রয়োগঃ
প্রতি গর্তে জৈব সার ১০-১৫ কেজি, টিএসপি-২৫০ গ্রাম এবং এমপি ২৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়। সারগুলো ভালো করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। সার একেবারে গাছের গোড়ায় না দিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
আগাছা দমন ও মাটির চটা ভেঙে দেওয়া -
গাছের গোড়ায় আগাছা জন্মালে তা তুলে ফেলতে হবে। কারণ এরা খাদ্য ও পানি গ্রহণে অংশীদার হয় এবং গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি অব্যাহত করে। চারা রোপণের পর প্রথম দিকে গাছের গোড়ার মাটি ঝুরঝুরে রাখলে নতুন চারা দ্রম্নত বাড়তে পারে। তাই সেচ দেয়ার পর জমিতে জো এলে হালকাভাবে কুপিয়ে জমির চটা ভেঙে দিতে হবে। এতে মাটির জলধারণ ক্ষমতা বেড়ে যাবে এবং গাছ সহজে খাদ্য সংগ্রহ করতে পারবে।
রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থা -
গামোসিসঃ
গামোসিস বাতাবি লেবু গাছের একটি মারাত্মক রোগ। আক্রানত্ম হওয়ার অল্প দিনের মধ্যেই এ রোগ গাছের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে গাছের অংশবিশেষ অথবা সমপূর্ণ গাছটি মরে যায়।
রোগের লক্ষণঃ
এ রোগের আক্রমণে আক্রানত্ম অংশের বাকল থেকে প্রচুর আঠা নির্গত হয়। রোগাক্রানত্ম কাণ্ড ও বাকল বাদামি রঙের হয়ে যায় ও আঠা ফোঁটা আকারে বের হতে থাকে। আক্রানত্ম অংশে ১-৩ মিলিমিটার চওড়া ফাটল দেখা যায়।
দমন ব্যবস্থাঃ
আক্রান্ত শাখা কেটে ফেলে অথবা আক্রান্ত অংশ চেঁছে ফেলে বর্দোপেস্ট বা ম্যাক্রপ্যাঙ পেস্টের মতো করে লাগাতে হবে। গাছকে সবসময় সবল ও সতেজ রাখতে হবে। স্যাঁতসেঁতে মাটি, অতিরিক্ত সেচ এবং জলাবদ্ধতা পরিহার করতে হবে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা ও সেচের পানি গাছের কাণ্ড স্পর্শ করা থেকে বিরত রাখা ভালো।
পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাঃ
পাতার ছোট সুড়ঙ্গ পোকাঃ
এ পোকার ক্ষুদ্র কীড়াগুলো পাতার উপত্বকের ঠিক নিচে আঁকাবাঁকা সুড়ঙ্গ করে সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। এতে পাতা কুঁকড়ে বিবর্ণ হয়ে শুকিয়ে ঝরে যায়।
দমন ব্যবস্থাঃ
গাছে নতুন পাতা গজানোর সময় রগর বা রঙিয়ন বা পারফেকথিয়ন ৪০ ইসি ২ মিলিলিটার হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর সেপ্র করতে হবে। নতুন পাতা গজানোর সময় ম্যালাথিয়ন বা সুমিথিয়ন ১ মিলিলিটার হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ২ বার সেপ্র করতে হয়।
আরও পড়ুন - Watermelon Disease Management - তরমুজের পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন কীভাবে করবেন, জেনে নিন সহজ পদ্ধতি
লেবুর প্রজাপতি -
এ পোকার কীড়া পাতা খেয়ে ফেলে। এ জন্য ফলনও গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
দমন ব্যবস্থাঃ
ডিম ও কীড়াযুক্ত পাতা সংগ্রহ করে মাটির নিচে পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। সুমিথিয়ন ৫০ ইসি বা লিবাসিড ৫০ ইসি ২ মিলিলিটার প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পরপর প্রয়োগ করে এ পোকা দমন করা যায়।
ফল সংগ্রহ ও ফলনঃ
ফলের উপরিভাগ খসখসে থেকে পরিবর্তিত হয়ে তেলতেলে ভাব এবং ফল কিছুটা হলুদে বর্ণ ধারণ করলে ফল সংগ্রহ করা যায়। গাছপ্রতি গড়ে ৫০-৫৫টি ফল পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন - Watermelon Farming - জানুন আধুনিক পদ্ধতিতে তরমুজ চাষের কৌশল
Share your comments