নাশপাতি গাছ (Pear Fruit Farming) রোজাসিয়ে পরিবারের গণভূক্ত উদ্ভিদ ও তার ফলবিশেষ। প্রাচীন গ্রীসে নাশপাতি বমন বা বমি দূরীভূতজনিত চিকিৎসাকর্মে ব্যবহার করা হতো।ঠাণ্ডা অবস্থায় পাকা নাশপাতিতে চমৎকার সুগন্ধ রয়েছে। এগুলো রসালো তবে গাছে থাকা অবস্থায় ভালভাবে পাকে না। ফলের ৮৩ শতাংশই পানিতে পরিপূর্ণ। আবরণ অংশটি সবুজ অথবা লালচে প্রকৃতির হয়ে থাকে। ফলের কেন্দ্রস্থলটি বেশ নরম। জ্যাম, জেলি অথবা রসালো অবস্থায় বাজারজাতকরণ করা হয়ে থাকে। শক্ত ভূমিতে নাশপাতি গাছ ভাল জন্মে।
ইউরোপ, আফ্রিকা এবং এশিয়া মহাদেশ থেকে গাছটির উৎপত্তি ঘটেছে বলে ধারণা করা হয়।নাশপাতি ফলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে। নাশপাতি একটি সম্ভাবনাময় বিদেশি ও শীত অঞ্চলের ফল। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে নাশপাতি ফল চাষ করা হয়। আমাদের দেশে পাহাড়ি ঢালু স্থানে এবং বসতবাড়ির ঢালু স্থানে নাশপাতির চাষ করা যায়।
নিম্নে নাশপাতির চাষ সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
নাশপাতি চাষ পদ্ধতি (Cultivation Procedure) -
নাশপাতি চাষের জন্য উর্বর দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি উত্তম। আমাদের দেশে পার্বত্য পাহাড়ি অঞ্চলে অতি সীমিত আকারে নাশপাতির চাষ করা হচ্ছে। কুঁড়ি সংযোজনের দ্বারা নাশপাতির বংশ বৃদ্ধি করে থাকে।এছড়া গুটি কলমের মাধ্যেম নাশপাতি বংস বিস্তার করা যায়।
নাশপতির চারা রোপন (Plantation) -
নাশপাতির কলম বাঁধার সঠিক সময় এপ্রিল-মে মাস। এরপর কলম কেটে জুলাই-আগষ্ট মাস রোপন করার জন্য উপযোগী। নাশপাতি চাষের জন্য ৪-৬ মিটা্র দূরত্বে গাছ রোপন করতে হবে।
সার দেওয়ার পদ্ধতি -
জৈব সার নাশপাতি গাছের জন্য উত্তম। এছাড়াও অন্য যেসব সার দিতে হবে নিম্নে উল্লেখ করা হল:
গোবর-১৫ কেজি
খৈল-১ কেজি
টিএসপি-৫০০-৬০০ গ্রাম
এমপি-১৫০-২০০ গ্রাম
এই উপাদানগুলো একসাথে মিশিয়ে একটি গর্ত করে পচাতে হবে। তাই গাছ লাগানোর ৩০ থেকে ৪০ দিন পর গাছ প্রতি ১০০ গ্রাম হারে ইউরিয়া সার দিতে হবে। ১ থেকে ৫ বছর বয়সী গাছে ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া সার দিতে হবে। বয়স্ক ও ফলন্ত গাছে বর্ষা মৌসুমের আগে এবং পরে মধ্য জৈষ্ঠ্য এবং আশ্বিনের শেষে পচা গোবর ৩০ কেজি, খৈল ২ কেজি, ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম, এবং টিএসপি ৪০০ গ্রাম দিলে ভাল হবে।
নাশপতি চাষে সেচ ও নিষ্কাশন-
চারা রোপনের পর ঝরনা দিয়ে বেশ কিছু দিন পর্যন্ত সেচ দিতে হবে, সর্বোচ্চ ফলনের জন্য ফুল আসা ও ফলের বিকাশের সময় মাটিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকা আবশ্যক। এ জন্য খরা মৌসুমে সেচ দেওয়া প্রয়োজন। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে পানি জমতে না পারে সেজন্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
ডাল ছাটাইকরণ-
গাছের উচ্চতা ৪০-৫০ সে.মি. হলে ডগা ভেঙে দিতে হবে। পরের বছর পার্শ্ব শাখা ২০-২৫ সে.মি. রেখে কেটে দিতে হবে। গাছ্র গোড়ার দিকে পোষক শাখা বের হলে কেটে ফেলতে হবে। গাছ বড় হলে ডালগুলো ভূমির দিকে বাঁকা করে দিলে বেশী ফলন পাওয়া যায়।
ডাল নুইয়ে দেওয়া-
নাশপাতির খাড়া ডালে নতুন শাখা ও ফল কম হয়। এ জন্য খাড়া ডাল ওজন অথবা টানার সাহায্যে নুইয়ে দিলে প্রচুর সংখ্যক নতুন শাখা গজায়। এতে ফলন ও ফলের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়।
রোগবালাই ও পোকামাকড়-
নাশপাতিতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উপদ্রব দেখা গেলে উপযুক্ত কীটনাশক/ ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
নাশপতি সংগ্রহ -
কলমের গাছ রোপনের ২ থেকে ৩ বছর পর থেকেই ফল দেয়। মার্চ-এপ্রিলে ফুল আসে এবং জুলাই আগস্ট মাসে ফল পরিপক্ব হয়। বয়স্ক গাছে বার্ষিক গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ টির মতো ফল ধরে।
আরও পড়ুন - Palang Farming: জেনে নিন পুষ্টিকর পালং শাক চাষ পদ্ধতি
পাইরাস কমুনিস প্রজাতির চাষাবাদকৃত নাশপাতি গ্রীষ্মকাল এবং শরৎকালীন ফল। কিন্তু পরিপূর্ণভাবে পাকার পূর্বেই সবুজ অবস্থায় সংগ্রহ করা হয়। ফ্রান্সে দীর্ঘস্থায়ী সুগন্ধযুক্ত নাশপাতি সংগ্রহের জন্যে তিনটি পৃথক সময়কে প্রাচীনকাল থেকেই নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। ফল পাকার পনের দিন বা তারও পূর্বে প্রথমবার,এরপর এক সপ্তাহ কিংবা দশ দিন পর দ্বিতীয়বার এবং পূর্ণাঙ্গভাবে পাকার সময় শেষবার সংগৃহীত হয়।
আরও পড়ুন - Watermelon Farming: জেনে নিন তরমুজ চাষ পদ্ধতি ও সঠিক উপায়ে পরিচর্যা
Share your comments