সুবাসের জন্য বেলি ফুলের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ উৎসব অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত ফুলের তোড়া, ফুলের মালায় সুগন্ধী ফুল হিসেবে বেলির বেশ কদর রয়েছে। শুধু সৌন্দর্য বর্ধনই নয়, এটি বর্তমানে একটি অর্থকরী ফুল হিসেবে বিবেচিত। এটি এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন নার্সারিতে। আমাদের দেশে তিন জাতের বেলি ফুল দেখা যায়। এগুলো হচ্ছে সিঙ্গেল ও অধিক গন্ধযুক্ত, মাঝারি আকার ও ডবল এবং বৃহদাকার ডবল ধরনের।
বংশবিস্তার:
বেলি ফুল গুটি কলম, দাবা কলম ও ডাল কলম পদ্ধতির মাধ্যমে বংশবিস্তার করা হয়। জমি চাষ ও সার প্রয়োগ বেলে মাটি ও ভারী এঁটেল মাটি ছাড়া সব ধরনের মাটিতে বেলি ফুল চাষ করা যায়। জমিতে পানি সেচ ও পানি নিকাশের ব্যবস্থা থাকা ভালো।
জমি তৈরী:
জমি চার-পাঁচবার চাষ ও মই দিয়ে ঝুরঝুরা সমান করতে হবে। জমি তৈরির সময় জৈব সার, ইউরিয়া, ফসফেট এবং এমপি প্রয়োগ করতে হবে। প্রায় ১ মিটার অন্তর চারা রোপণ করতে হবে। চারা লাগানোর পর ইউরিয়া প্রয়োগ করে পানি সেচ দিতে হবে।
চারা তৈরী:
গ্রীষ্মের শেষ হতে বর্ষার শেষ পর্যন্ত বেলি ফুলের কলম বা চারা তৈরি করা যায়। চারা থেকে চারা ও সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সেন্টিমিটার হতে হবে। চারা লাগানোর জন্য গর্ত খুঁড়ে গর্তের মাটির রোদ খাইয়ে, জৈব সার ও কাঠের ছাই গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। এরপর প্রতি গর্তে বেলির কলম বসাতে হবে। বর্ষায় বা বর্ষার শেষ দিকে কলম বসানোই ভালো। তবে সেচের ব্যবস্থা ভালো হলে বসন্তকালেও কলম তৈরি করা যায়।
আরও পড়ুন -Crop rotation in farming: জেনে নিন কৃষিকাজে চক্রকৃষির গুরুত্ব
সার প্রয়োগ:
জৈব পদার্থযুক্ত দো-আঁশ মাটিতে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমপি সার পরিমাণ মতো মিশিয়ে টবে বেলি ফুলের চাষ করা যায়। টব ঘরের বারান্দা বা ঘরের ছাদে রেখে দেওয়া যায়।
পরিচর্যা:
বেলি ফুলের চাষে জমিতে সব সময় রস থাকা দরকার। গ্রীষ্মকালে ১০-১২ দিন পরপর শীতকালে ১৫-২০ দিন পর পর ও বর্ষাকালে বৃষ্টি সময়মতো না হলে জমির অবস্থা বুঝে দু-একটি সেচ দেওয়া দরকার। বেলি ফুলের বাগানে আগাছা দমনের দিকেও নজর দিতে হবে। জমি বা টব থেকে নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। খড় কেটে কুচি করে জমিতে বিছিয়ে রাখলে সেচের প্রয়োজন কম হয় এবং আগাছাও বেশি জন্মাতে পারে না।
অন্যদিকে প্রতি বছরই বেলি ফুলের গাছের ডালপালা ছাঁটাই করা দরকার। শীতের মাঝামাঝি ডাল ছাঁটাই করতে হবে। মাটির উপরের স্তর থেকে ৩০ সেন্টিমিটার উপরে বেলি ফুলের গাছ ছাঁটাই করতে হবে। অঙ্গ ছাঁটাইয়ের কয়েক দিন পর জমিতে বা টবে সার প্রয়োগ করতে হবে।
রোগবালাই ও দমন:
বেলি ফুল গাছে ক্ষতিকারক কীট-পতঙ্গ তেমন দেখা যায় না। মাকড়ের আক্রমণ হতে পারে। এদের আক্রমণে পাতায় সাদা আস্তরণ পড়ে, আক্রান্ত পাতাগুলো কুঁকড়ে যায় ও গোল হয়ে পাঁকিয়ে যায়।
গন্ধক গুঁড়া বা গন্ধকঘটিত মাকড়নাশক ওষুধ যেমন- সালট্যাফ, কেলথেন পাতায় ছিটিয়ে মাকড় দমন করা যায়। বেলি ফুলের পাতায় হলদে বর্ণের ছিটে ছিটে দাগযুক্ত এক প্রকার ছত্রাক রোগ দেখা যায়। এগ্রোসান বা ট্রেসেল-২ প্রয়োগ করে এ রোগ দমন করা যায়। ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত গাছে ফুল ফোটে। সাধারণত ৫-৬ বছর পর গাছ কেটে ফেলে নতুন চারা লাগানো হয়।
আরও পড়ুন -Sheep rearing guide: স্বল্প পুঁজিতে গাড়ল পালনে হয়ে উঠুন লাভবান
Share your comments