খুব সহজেই স্বল্প পরিশ্রমে সুগন্ধি জুঁই ফুলের চাষ (Jasmine Planting) সম্ভব | জুঁই একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ফুল | এই ফুলের অনেকগুলো প্রজাতি পাওয়া যায় ইউরোপ ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে | এই গাছগুলির উচ্চতা ১০-১৫ ফুট পর্যন্ত হয় | এর পাতা চিরসবুজ যা কিনা আড়াই ইঞ্চি লম্বা, সবুজ ও সরু কান্ডযুক্ত এবং এটি সাদা বর্ণের ফুল ধারণ করে। ফুলগুলি মূলত মার্চ থেকে জুন মাসে ফোটে। এটি মূলত মালা তৈরির জন্য, ফুল সজ্জায় এবং উপাসনার ডালা সাজানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এর দৃঢ় এবং সুগন্ধযুক্ত সুবাসের কারণে এটি আতর তৈরিতে এবং সাবান, ক্রিম, তেল, শ্যাম্পু এবং ওয়াশিং ডিটারজেন্টগুলিতে সুগন্ধ যোগ করতে ব্যবহৃত হয়। সারাবছর এই ফুলের চাহিদা থাকায় এই ফুল বেচে প্রচুর লক্ষ্মীলাভও হয় কৃষকদের৷
মাটি(Soil):
যেকোনও মাটিতে জুঁই গাছের চাষ করা সম্ভব৷ তবে কাঁকরযুক্ত মাটি না হওয়াই শ্রেয়৷ জল সুনিষ্কাশিত জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটি থেকে শুরু করে বেলে দোআঁশ মাটিতে ভালভাবে জন্মাতে পারে। তবে এটি ভাল ফলাফল দেয় যখন সমৃদ্ধ বেলে দোআঁশযুক্ত মাটিতে জল সুনিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকে। সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য মাটিতে গোবর সার পর্যাপ্ত পরিমাণে মিশ্রিত করে নিতে হবে। গাছ লাগানোর জন্য, মাটির পিএইচ 6.5 এর বেশি হওয়া উচিত নয়।
জমি তৈরী:
ভাল চাষ উপযোগী করার জন্য প্রথমে চারা রোপণের জমিটিকে আগাছামুক্ত করতে হবে। ক্ষেতের আগাছা মুক্ত করার জন্য এক-দু’টি প্রাথমিক চাষ প্রয়োজন। লাঙল করার পরে গর্তগুলি রোপণের এক মাস আগে ৩০ ঘনসেমি আকারে প্রস্তুত করা হয় এবং সূর্যের আলোর নিচে রেখে দিতে হবে। জমি তৈরির সময় ১০ কেজি গোবর সার মাটির সাথে মিশ্রিত করতে হয়।
বপণের সময়(Time of planting):
সাধারণত, জুন থেকে নভেম্বর মাসে বপণ করা হয় | বিভিন্ন ব্যবধানে বিভিন্ন জাতের গাছ লাগানো হয়। সাধারণত গড়ে ১.৮*১.৮ মিটার ব্যবধান প্রয়োজন।
আরও পড়ুন - Star Fruit Cultivation: জেনে নিন ছাদে কামরাঙার চাষ পদ্ধতি
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
জমি তৈরির সময়, নাইট্রোজেন ৬০ গ্রাম প্রতি উদ্ভিদ, পটাশিয়াম ১২০ গ্রাম প্রতি উদ্ভিদ এবং ফসফরাস ১২০ গ্রাম প্রতি উদ্ভিদ আকারে সারের মিশ্রণ প্রয়োগ করতে হবে । এই স্যারের মিশ্রণটি সাধারণত দুটি ভাগে ভাগ করতে হবে | প্রথম ভাগটি জানুয়ারী মাসে দিতে হবে এবং দ্বিতীয় ভাগটি জুলাই মাসে দিতে হবে। অতিরিক্ত জৈব সার হিসাবে, নিমের খোল, সরিষার খোল ইত্যাদি দেওয়া খুবই ভাল। এদেরকে ১০০ গ্রাম প্রতি উদ্ভিদে দেওয়া হয়। ফুলের ফলন বাড়াতে জিঙ্ক ০.২৫% এবং ম্যাগনেসিয়াম ০.৫% হরে স্প্রে করতে হবে । লৌহের ঘাটতি থেকে রক্ষা পেতে, মাসিক বিরতিতে ফেরাস সালফেটের বড়ি ৫ গ্রাম প্রতি লিটারে স্প্রে করতে হবে |
আগাছা দমন:
ফসলের ভাল বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য আগাছা দমন অতি প্রয়োজনীয়। রোপণের ৩-৪ সপ্তাহ পরে প্রথম আগাছা তোলা উচিত এবং তারপরে প্রতি ২-৩ মাসে একবার করে আগাছা পরিষ্কার করা উচিত।
সেচ:
ফুলের যথাযথ বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য সময়ের ব্যবধানে সেচ দেওয়া প্রয়োজন। গ্রীষ্ম কালে সেচ সপ্তাহে একবার করা হয়। ফুল আসার পরে, পরবর্তী সার দেওয়া এবং ছাঁটাই পর্যন্ত কোনও সেচের প্রয়োজন হয় না।
রোগবালাই ও দমন(Disease management system):
শিকড় পচা রোগ:
এই রোগের লক্ষণগুলি হল বাদামি বর্ণের ফুসকুড়ি পাতার নিচের পৃষ্ঠে দেখা যায় এবং কখনও কখনও কান্ড এবং ফুলেও দেখা যেতে পারে।
প্রতিকার:
শিকড়ের পচা রোগ থেকে নিরাময় পেতে কপার oxychloride ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটারে মিশিয়ে মাটিতে প্রয়োগ করতে হয় |
লাল মাকড়সা:
এর আক্রমণে পাতার উপরের পৃষ্ঠের বিচিত্র বর্ণালি প্রদর্শন করে। পাতাগুলি তাদের রঙ হারাতে শুরু করে এবং অবশেষে ঝরে যায়।
প্রতিকার
লাল মাকড়সার থেকে মুক্তি পেতে সালফার ৫০% WP ২ গ্রাম প্রতি লিটারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে |
ফুল সংগ্রহ:
উদ্ভিদ রোপণের ৬ মাসের মধ্যে ফুল পরিপক্ক হয় এবং হাত দিয়ে মুখ বন্ধ কুঁড়ি তুলে নেওয়া হয়। ফসল তোলার কাজ মূলত ভোরে করা হয়। বছরের পর বছর এর ফলন বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ প্রথম বছরে গড় ফলন হবে ৮০০ একক / একর, দ্বিতীয় বছরে গড় ফলন হয় ১৬০০ / একর, তৃতীয়তম বছরে গড় ফলন হয় ২৬০০ কেজি / একর, চতুর্থ বছরে গড় ফলন হযবে ৩,৬০০ কেজি / একর ইত্যাদি। অর্থাৎ জুঁই ফুল চাষে কৃষকবন্ধুদের পকেট ভরবে নিশ্চিত |
আরও পড়ুন -Shing Fish Farming: পুকুরে লাভজনক শিং মাছ চাষ করে দ্বিগুন উপার্জন করুন
Share your comments