ঢেঁড়স একটি অতি জনপ্রিয় সবজি | আমাদের দেশে বৃহৎ পরিসরে চাষ করা হয় এই সবজিটির। ঢেঁড়স মূলত শীতকালীন সবজী হলেও বর্তমানে এটি সারা বছরই চাষ করা যায়। ঢেঁড়শে প্রচুর পরিমাসে ভিটামিন এ, বি ও সি এবং এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমানে আয়োজিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও বিভিন্ন খনিজ পদার্থ রয়েছে। ঢেঁড়শ সারাবছর বাজারে বিক্রি হওয়ায়, চাষীরাও এই সবজি চাষে (Vindi farming) ভালো মুনাফা করতে পারেন |
চাষের সময় (Farming time):
খরিপ-১: মধ্য জানুয়ারী থেকে মধ্য মার্চ
খরিপ-২: মধ্য মার্চ থেকে মধ্য মে।
রবি: মধ্য আগষ্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর | সারা বছরই ঢেঁড়স চাষ করা যায়। তবে ফাল্গুন ,চৈত্র ও আশ্বিন-কার্তিক মাস বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।
মাটি ও জলবায়ু (Soil and Climate):
দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি ঢেঁড়শ চাষের জন্য উপযোগী। জল নিষ্কাশনের সুবিধা থাকলে এটেঁল মাটিতেও এর চাষ করা যায়। তবে উঞ্চ জলবায়ু তথা শুষ্ক এবং আর্দ্র অবস্থায় ভাল জন্মায় |
জমি তৈরী:
জমি ৫-৬ টি চাষ দিয়ে ভালোভাবে মই দিতে হবে। ঢেলা ভেঙ্গে এবং আগাছ পরিষ্কার করে ভালোভাবে জমি তৈরি করে নিতে হবে।
আরও পড়ুন - Wheat Farming: জেনে নিন গমের আধুনিক চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা
বীজের পরিমাণ:
শতক প্রতি ২০ গ্রাম এবং হেক্টর প্রতি ৪- ৫ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়।
রোপন পদ্ধতি:
বীজ বোনার আগে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে নিতে হয়। সারি করে বীজ বপণ করা হয়। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪৫ সে.মি. এবং সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৩০ সে.মি. রাখতে হয়। অর্থাৎ লাইনে ৩০ সেমি. দূরে দূরে ২ টি করে বীজ বুনতে হয়। বীজ মাটির ২-৩ সেমি গভীরে বুনতে হয়। জাত অনুযায়ী চারা থেকে চারা এবং সারি থেকে সারির দুরত্ব ১৫ সেমি. কমানো বা বাড়ানো যেতে পারে। শীতকালে গাছ ছোট হয় বলে দূরত্ব কমানো যেতে পারে। চারা গজানোর ৭ দিন পর প্রতি গর্তে একটি করে সুস্থ সবল চারা রেখে বাকি চারা গর্ত থেকে তুলে ফেলতে হবে।
সার প্রয়োগ (Fertilizer):
ভালো ফলন পেতে হলে এইভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে। হেক্টর প্রতি ১৪ টন গোবর, ১৫০ কেজি ইউরিয়া, ১০০ কেজি টিএসপি, ১৫০ কেজি এমওপি, ৭০ কেজি জিপসাম, ২ কেজি বোরণ এবং ০.৬ কেজি মলিবডেনাম প্রয়োগ করতে হবে |
পরিচর্যা:
গাছের প্রাথমিক বৃদ্ধির সময় নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং মাটির উপরিভাগ মাঝে মাঝে আলগা করে দিতে হবে। জল সেচ দেওয়ার পর জমিতে ‘জো’ আসলে কোদাল দিয়ে মাটির উপরের চটা ভেঙ্গে দিতে হয়। এত মাটির ভিতরে আলো-বাতাস ঢুকতে পারে এবং মাটি অনেক দিন রস ধরে রাখতে পারে। আগাম মৌসুমে ঢেঁড়স চাষ করলে জল সেচ দেওয়ার বিশেষ প্রয়োজন হতে পারে। মাটির প্রকারভেদ অনুসারে ১০-১২ দিন পর পর সেচ দেওয়া দরকের। বর্ষাকালে জল নিষ্কাশনের জন্য ২৫-৩০ সেমি. উঁচু করে বেড তৈরি করে নিতে হবে।
রোগবালাই ও দমন (Disease management system):
পাতা মোড়ানো পোকা:
এই পোকা ঢেঁড়সের কচি পাতা মোড়ায় এবং ভিতরে থেকে পাতার সবুজ অংশ খায়। আক্রমনের মাত্রা বেশি হলে সুমিথিয়ন/ফলিথিয়ন /নিক্সইয়ন ৫০ ইসি ২ মিলি/ লিটার জলে (হেক্টর প্রতি) মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ঢ়েঁড়সের পাতার দাগ রোগ:
অল্টারনারিয়া ছত্রাক দ্বারা আক্রমনের ফলে পাতার উপরে বিভিন্ন আকৃতির গোলাকার বাদামি রং পড়ে। রোগের মাত্রা বেশি হলে পাতা মুচড়িয়ে যায় এবং পরে ঝলসে ঝরে পরে। ব্যাভিস্টিন ১ গ্রাম/ রোভরাল ২ গ্রাম/ডাইথেন এম-৪৫ ২ গ্রাম/লিটার জলে পাতায় ২/১ টি দাগ দেখা দিলে স্প্রে করতে হবে।
ঢ়েঁড়সের শিকড়ের গিঁট রোগ:
আক্রান্ত গাছের শিকড়ে প্রচুর গিঁট দেখা যায়। গাছের পাতা ছোট ও খর্বাকৃতি হয় এবং ফল কম হয়। ফুরাডান/মিরাল ব্যবহার করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ:
বীজ বোনার প্রায় ১২০-১৩০ দিনের মধ্যে ঢেঁড়সগুলো শুকিয়ে লম্বালম্বিভাবে ফাটতে শুরু করে। ঢেঁড়স শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধারালো ছুরি দিয়ে পাকা ফলগুলো সংগ্রহ করে ও রোদে ভালো করে শুকিয়ে মাড়াই করার পর বীজ ঠান্ডা করে প্লাষ্টিক ব্যাগে ভরে রাখতে হবে। বীজ হিসাবে চাষাবাদে ফলন হয় ১০০-১৫০ কেজি/ হেক্টর।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন -Student Credit Card: বুধবার থেকে পড়ুয়াদের ক্রেডিট কার্ড দেবে রাজ্য
Share your comments