শিম জমিতে থাকা মানেই কৃষকদের পকেটে টাকার জোগান অব্যাহত থাকা। শিম খুবই পুষ্টিকর ও জনপ্রিয় সব্জি | গ্রামবাংলার লোকেরা এই সব্জিটি খুবই পছন্দ করে থাকেন | কারণ শিম প্রোটিন সমৃদ্ধ সবজি। এর বীজও সবজি হিসেবে খাওয়া হয়।
এটি জমি ছাড়াও রাস্তার ধারে, পথের আলে, ঘরের চালে, গাছেও ফলানো যায়। এ রাজ্যে মুর্শিদাবাদ জেলার চাষীরা সারাবছর শিম চাষ করছেন | প্রতি বছর জেলাজুড়ে প্রায় দেড় থেকে দু’হাজার হেক্টর জমিতে শিমের চাষ হয়। ডোমকল মহকুমায় প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়। বাজারে বিভিন্ন প্রকার শিমের চাহিদা থাকায় এই চাষে কৃষকেরা এখন খুবই আকৃষ্ট হচ্ছেন। তবে, দেখে নিন শিম চাষের (Bean Cultivation) সহজ পদ্ধতি;
চাষের সময় (Farming Time):
শ্রাবণ-ভাদ্র মাস থেকে এই সবজির বীজ পুঁততে শুরু করেন কৃষকেরা। তবে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত বীজ লাগানো যায়। এজন্য জমিতে চাষ দিয়ে তৈরি রাখতে হয়। কোনও কোনও চাষি আবার শিমের বীজ পোঁতার আগে ওই জমিতে আলুর বীজ বপন করে নেন। অর্থাৎ আলু চাষের সাথে সাথী ফসল হিসাবে শিম চাষ বেশ লাভজনক | আলু বেড়িয়ে গেলে দুই আলের ফাঁকে ফাঁকে গোল করে শিমের বীজ পুঁতে থাকেন। এ ক্ষেত্রে বীজ থেকে গাছ বের হয়ে একটু বড় হতেই আলু তোলার সময় হয়ে যায়। আবার অনেকে শুধু মাত্র শিম চাষের জন্যই জমি তৈরি করে নেন। তাতে আগাম শিম পাওয়া যায়। বাজারে ভাল দামও পাওয়া
জাত:
শিমের মরসুম ভিত্তিক দু’ধরনের জাত রয়েছে। সেগুলি আবার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন পুসা আর্লি প্রলিফিক, পুসা শিম-২, জেডিএল-৩৭ ইত্যাদি। এগুলি বাহান বা মাচান পদ্ধতিতে চাষ করা যায়। এছাড়া, কিছু জাত আছে যেমন আর্কা জয়, আর্কা বিজয়, ইত্যাদি। এগুলি বছরভরই চাষ করা যায়। এই সব জাতের শিমের গাছ ঝোপের আকারে হয়। তা থেকে ভাল ফলনও পাওয়া যায়।
বপন পদ্ধতি:
লতানো জাতের শিম বীজ বিঘা প্রতি তিন থেকে পাঁচ কিলোগ্রাম আর ঝোপালো জাতের জন্য ৫ থেকে ৭ কিলোগ্রাম পর্যন্ত বীজ লাগানো যেতে পারে। এগুলি নির্দিষ্ট দূরত্বে সারিবদ্ধভাবে লাগানো দরকার। লতানো জাতের গাছগুলি ৫ ফুট বাই ৩ ফুট দূরত্বে এবং ঝোপ বা বেঁটে জাতের জন্য কম দূরত্বে লাগানো দরকার। তার মাপ আড়াই ফুট বাই আড়াই ফুট দূরত্ব হলেই চলবে।
চাষ পদ্ধতি (Farming Process):
জমি তৈরির সময় প্রাথমিক সার হিসেবে বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ কুইন্টাল গোবর সার এবং ৪০ থেকে ৫০ কিলোগ্রাম নিম খোলের সঙ্গে ২ কিলোগ্রাম অ্যাজোফস জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। বীজ লাগানোর আগে ১০:২৬:২৬ অনুপাতে ১২ থেকে ১৫ কিলোগ্রাম সার হিসেবে মাটিতে মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। পরে গাছ বের হওয়ার পর ৩ সপ্তাহ বয়সে ও ৬ সপ্তাহ বয়সে চাপান সার হিসেবে ৫ কিলোগ্রাম ইউরিয়া, ৩ কিলোগ্রাম পটাশ সার জমিতে দিয়ে সেচ দিতে হবে। এর সঙ্গে অনুখাদ্য হিসেবে বোরোন, জিংক, মিক্সচার দেড় থেকে ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে গাছের পাতায় সরাসরি স্প্রে করে দেওযা যায়। প্রয়োজন মতো জল সেচ ও রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধও দেওয়া যেতে পারে। মাঝে মধ্যে প্রয়োজন বুঝে জমিতে হালকা জলসেচ দিতে হবে।
রোগবালাই দমন (Disease management system):
ছত্রাকঘটিত রোগ যেমন পাউডারি মাইল্ড, ফাইটোপথোরা পোড্রট-এর আক্রমণ বেশি দেখা যায়। এছাড়া, ছত্রাক জাতীয় হলদে দাগ লাগার আক্রমণের ফলে ফসলের ক্ষতি হয়। আর পোকার মধ্যে থাকে স্টেমফ্লাই, থ্রিপস এবং মাইটের আক্রমণ। যেগুলি সুসংহত প্রক্রিয়ায় রোগ পোকা দমনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এক্ষেত্রে ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ৩ গ্রাম অথবা সাফ পাউডার ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে সঙ্গে আঠা মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। আবার পোকা দমনের জন্য নিম তেল ৩ মিলিলিটার প্রতি লিটার জলে গুলিয়ে স্প্রে করা যায়।
আরও পড়ুন - Fish Farming: খাঁচায় মাছ চাষে বিপুল লক্ষীলাভ, নিবন্ধটি পুরো পড়ুন
ফসল সংগ্রহ:
বীজ বোনার ৪৫ থেকে ৫০ দিন বাদে ফসল তোলা শুরু করা যেতে পারে। গাছে ফুল আসার পর ৭ থেকে ১২ দিনের মাথায় শিম সবুজ ফসল হিসেবে তোলা যায়। লতানো জাতের শিম বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ কুইন্টাল আর হাইব্রিড দশ বা ঝোপ ধরনের গাছে ৪০ থেকে ৪৫ কুইন্টাল পর্যন্ত শিম পাওয়া যায়। সময় মতো বাজার ধরতে পারলে কৃষকেরা এক এক বিঘা জমির উৎপাদিত শিম থেকে সমস্ত খরচ খরচা বাদ দিয়ে বীজ বোনার ৩ মাসের মধ্যেই ১৮ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করতে পারেন।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Sweet Pumpkin Farming: মিষ্টি কুমড়োর সহজ চাষ পদ্ধতি ও রোগ-দমনের প্রতিকার
Share your comments