সর্পগন্ধা একটি চিরহরিৎ গুন্ম জাতীয় উদ্ভিদ | সর্পগন্ধা আমাদের অনেকের পরিচিত একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এটি ঔষধি গুনের জন্য বিখ্যাত।অনেকেই একে চন্দ্রা নামে ডেকে থাকে ।এর বৈজ্ঞানিক নাম Rauwolfia serpentine । এই উদ্ভিদটি সব জায়গায় জন্মে না। আমাদের দেশের খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশ, তামাবিলের জঙ্গল এবং রাঙামাটি, বান্দরবান এলাকায় কিছু কিছু দেখা যায়।এই গাছটি সাধারণত ঝোপ আকারের হয়ে থাকে। গুল্মজাতীয় এই উদ্ভিদটির পাতা ছোট ছোত এবং লম্বা আকৃতির হয়ে থাকে। সাধারণত এর শিকড় ও পাতা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।অনেক প্রাচীন শাস্ত্রে এর গুণের কথা পাওয়া যায়।
রাসায়ানিক উপাদান
এই গাছে স্টেরল, অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড, অলিক এসিড, ফিউমারিক এসিড, গ্লুকোজ, রেজিন, খনিজ লবণ, স্টার্চ ইত্যাদি পাওয়া গেছে। যা চিকিৎসা ক্ষেত্রে উপকারী ভূমিকা রাখছে। সর্পগন্ধা মূলে ইনডোল এলকালয়েড রয়েছে যাতে রিসারপিন, ডিসারপিন, রেসিনামিন থাকে। এছাড়াও সর্পগন্ধা থেকে সতেরটি এ্যালকালয়েডস এর সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত এ্যালকালয়েডস হলো আজমলীন, আজমালিসিন, সাপেন্টাইন, অলিরোসিন ও আনস্যারচুরেটিড এলকোহল ইত্যাদি।
আরও পড়ুনঃ অতি সাধারন ফুল,ফোঁটে সকলের বাড়িতেই,কিন্তু বানিজ্যক সম্ভবনা কতটা দোপাটি ফুলের
উপকারিতাঃ
১) এটি অত্যন্ত উত্তেজনানাশক ও নিদ্রাকারক। উপযুক্ত মাত্রায় সেবন করলে সুনিদ্রা হয় ও উন্মত্ততা হ্রাস পায়। সে কারণে উন্মাদ চিকিৎসার ক্ষেত্রে সর্পগন্ধার মূল ব্যবহৃত হয়।
২) বিভিন্ন সরীসৃপ বা পোকামাকড় কামড়ালে ক্ষত ও জ্বালা পোড়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রতিষেধক হিসেবে সর্পগন্ধা ব্যবহার করা হয়।কথিত আছে যে, বেজি সাপের সাথে যুদ্ধ করার আগে সর্পগন্ধা গাছের মূল ও পাতা চিবিয়ে খেয়ে থাকে, যাতে বিষক্রিয়া থেকে রক্ষা পায়।
৩) এর শিকড় ও পাতার রসে আছে অ্যালকালয়েডস, যা আমাদের রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও মানসিক বিকারগ্রস্ততা, হিস্টেরিয়া রোগ উপশমে সর্পগন্ধার ব্যবহার হয়।দুধের সাথে এর শিকড় চূর্ণ মিশিয়ে দিনে তিনবার সেবন করলে হিস্টিরিয়া রোগী সুস্থ হয়ে যাবে।
৪) জ্বর, ঠাণ্ডা-কাশি প্রতিষেধক হিসেবে সর্পগন্ধা ব্যবহার করা হয়।দৈহিক দূবর্লতা ও মানসিক অবসাদ জনিত রোগেও এর মূলের চুর্ণ ব্যবহৃত হয়।এছাড়াও হাইপারটেনশন, ইনসমোনিয়া, বাতজ্বর এবং ব্যথা-বেদনায় সর্পগন্ধার মূলচূর্ণ অনেক কার্যকরী।
আরও পড়ুনঃ রামলালার জন্য বাড়ছে ফুলের চাহিদা,লক্ষী লাভের জন্য ফুল চাষীদের শিখতে হবে এই তিনটি ফুলের চাষ
৫) সর্পগন্ধা পাতার নির্যাস চোখের ছানি কাটাতে সাহায্য করে।এছাড়াও এটি পরীক্ষিত সত্য যে, কোন বিষাক্ত পদার্থ কিংবা যে কোন ধরনের বিষক্রিয়া থেকে রক্ষায় সর্পগন্ধা গাছের এ্যালকালয়েডসসমূহ এন্টিডোট হিসেবে কাজ করে।
৬) বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ নিরাময়েও এর ঔষধ কার্যকর। বার্ধক্যজনিত রোগও এটি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে তারা রাতে ঘুমানোর আগে ০.২৫ গ্রাম সর্পগন্ধার শিকড়ের গুঁড়া খেতে পারেন।আর যারা ঘুমের ক্ষেত্রে খুব সংবেদনশীল তারা সকালে ও রাতে দুবার খেতে পারেন।
৭) মূলের নির্যাস প্রসব ত্বরান্বিত করে ও তলপেটের ব্যথ্য, ডায়রিয়া, আমাশয় এবং জ্বরের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়।
৮) যে বাড়িতে সর্পগন্ধা থাকে সে বাড়িতে সাপ আসেনা। এটি একটি উপকারী উদ্ভিদ।
৯) বার্ধক্যজনিত রোগও এর পাতার নির্যাস দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।
১০) চোখের ছানি অপসারণের ক্ষেত্রে সর্পগন্ধার পাতার নির্যাস সেবন কার্যকরী।
Share your comments