আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পেঁয়াজ (Onion Farming) একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজী। পেঁয়াজ -এর পাতায় ভিটামিন ‘এ’ বেশি থাকে। তাছাড়া পেঁয়াজের পাতা ও ডাটায় ভিটামিন ‘সি’ ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। পেঁয়াজ খাবার দ্রুত হজমকারক ও রুচিবর্ধক হিসেবেও এর জুড়ি নেই। বারি পেঁয়াজ চাষ করে এই খরিফ মরসুমে কৃষক আয় করতে পারেন অতিরিক্ত অর্থ।
আসুন প্রথমে জেনে নেই বীজ থেকে চারা উৎপাদন ও জন্যে কি কি করণীয় -
মাটি :
বেলে-দোআঁশ মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য ভালো, তবে পিএইচ মান ৫.৫ থেকে ৬.৫। এ ফসল চাষের জন্য বারবার চাষ দিয়ে মাটি বেশ ঝুরঝুরে করে নেয়া আবশ্যক। সুনিষ্কাশিত ও উত্তম জৈবপদার্থযুক্ত উর্বর মাটিতে পেঁয়াজ ভালো হয়।
পেঁয়াজের জাত বিন্যাস (Variety) -
তাহেরপুরী, বারি পেঁয়াজ-১ , বারি পেঁয়াজ-২ (রবি মৌসুম), বারি পেঁয়াজ-৩ (খরিপ মৌসুম) ।
বীজ বপন (Seed sowing) :
বীজতলায় বীজ বুনে চারা উৎপন্ন করে সে চারা জমিতে রোপণ করতে হয়। শল্ককন্দ রোপণ করা যায়। বীজ রোপণের জমিতে বীজ বপন করেও পেঁয়াজের চাষ করা হয়।
বীজ হার :
বীজ পদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি ২.৫-৪ কেজি বীজ, কন্দ পদ্ধতিতে প্রায় ৫৫০ কেজি শল্ককন্দ।
বীজ বপনের সময় :
অক্টোবর-নভেম্বর মাস বীজতলায় বা জমিতে বীজ বপনের সময়। সরাসরি বীজ সারি করে বোনা উচিত।
রোপণের পদ্ধতি (Plantation) :
আমাদের দেশে তিনটি পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষ করা হয়।
১. জমিতে সরাসরি বীজ ছিটিয়ে
২. বন্ধ বা বালপ রোপণ করে
৩. বীজ থেকে তৈরি চারা সংগ্রহ করে রোপণ।
রোপণ দূরত্ব :
সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেন্টিমিটার। প্রতি সারিতে ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্ব অন্তর ৫-৬টি চারা রাখা যায়। চারা রোপণের ক্ষেত্রে তা করা যায় বীজ বপনের প্রায় এক মাস পর। সারির দূরত্ব ৩০ সেন্টিমিটার এবং সারিতে ৪ দূরত্ব ৮-১৬ সেন্টিমিটার রাখতে হবে। শল্ককন্দ রোপণ দ্বারা আগাম শস্য উৎপন্ন করা যায়। বিদেশি বড় জাতের পেঁয়াজের বীজ থেকে যে চারা হয় তা থেকে প্রথম বছর বীজ উৎপন্ন করা যায় না। সাধারণত ১-২ সেন্টিমিটার ব্যাসবিশিষ্ট পেঁয়াজ ৩-৪০ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারিতে পেঁয়াজের জাত অনুসারে ৮-১৬ সেন্টিমিটার ব্যবধানে রোপণ করা যেতে পারে। পেঁয়াজের জমি চাষ দিয়ে মাটি ভেঙে দেয়া আগাছা দমন এবং পানি সেচের ব্যবস্থা করা উচিত।
সার প্রয়োগ:
গোবর, সার, খৈল ও টিএসপি সার জমি প্রস্তুতকালে এবং ইউরিয়া ও মিউরেট অব পটাশ সার চারা ১৫-১৮ সেন্টিমিটার উঁচু হওয়ার পর সারির ফাঁকে মালচিংয়ের আগে ছিটিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
পোকা দমন:
থ্রিপস পোকা পেঁয়াজের পাতার রস শোষণ করে। এগুলোকে ০.০৫ ভাগ শক্তির ডাইমেক্রন বা সেভিন ছিটিয়ে দমন করা যায়। টিইপিপি প্রয়োগেও উপকার পাওয়া যায়।
রোগ দমন:
গুদামে ও স্থানান্তর কালে ধূসর পচা রোগে পেঁয়াজের ঘাড়ের দিক পচে যায়। সেজন্য জমি থেকে সাবধানে পেঁয়াজ তুলতে হয় এবং গুদামজাত করার আগে পেঁয়াজ ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হয়।
ফলন:
দেশি পেঁয়াজের হেক্টরপ্রতি ফলন ৭-১৫ টন।
ফসল সংগ্রহ:
পেঁয়াজের গাছ নিজে নিজে শুকিয়ে যায়। তখন পেঁয়াজ ভালোভাবে পরিপক্ব হয় এবং ওঠানোর উপযোগী হয়।
আরও পড়ুন - Crab Farming – কাঁকড়া চাষ করে কীভাবে লাভবান হবেন? জেনে নিন আধুনিক উপায়ে কাঁকড়া চাষের পদ্ধতি
সংরক্ষণ:
পেঁয়াজ ভালো করে শুকানোর পরে গুদামজাত করতে হয়। গুদাম ঠান্ডা ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থাযুক্ত হওয়া উচিত। গুদামে পরীক্ষা করে পচা ও রোগাক্রান্ত পেঁয়াজ বেছে সরিয়ে ফেলতে হয়।
ঠান্ডা গুদামে ৩৪ ফা. তাপে এবং শতকরা ৬৪ ভাগ আর্দ্রতায় পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হয়।
গেঁড় এর বেলায় এদের শেষের কয়েক সপ্তাহ ৭ ডিগ্রি হতে ১২.৭ ডিগ্রি সিলসিয়াস তাপে রাখা উত্তম।
আরও পড়ুন - Tulip Farming - টিউলিপ ফুলের চাষ করে কৃষকবন্ধুরা হয়ে উঠুন লাভবান
Share your comments