Crab Farming – কাঁকড়া চাষ করে কীভাবে লাভবান হবেন? জেনে নিন আধুনিক উপায়ে কাঁকড়া চাষের পদ্ধতি

বর্তমানে উপকূলীয় অঞ্চলে কাঁকড়ার চাষ কর্মসংস্থান ও দারিদ্র বিমোচনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। অনেকে কাঁকড়ার চাষ করে তাদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ জেলে প্রাকৃতিক উৎস থেকে কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। কাঁকড়া রপ্তানি থেকে প্রতি বছর প্রায় ২৫ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে।

স্বপ্নম সেন
স্বপ্নম সেন
Crab farming process
Crab farming (Image Credit - Google)

বর্তমানে উপকূলীয় অঞ্চলে কাঁকড়ার চাষ (Crab farming) কর্মসংস্থান ও দারিদ্র বিমোচনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। অনেকে কাঁকড়ার চাষ করে তাদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ জেলে প্রাকৃতিক উৎস থেকে কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। কাঁকড়া রপ্তানি থেকে প্রতি বছর প্রায় ২৫ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। 

দেশে দুই ধরণের কাঁকড়া পাওয়া যায়। একটি লবণাক্ত জলের আর একটি মিষ্টি জলের। লোনা জলে লবণাক্ততার পরিমাণ যত বেশি হয়, কাঁকড়ার উৎপাদনও তত বৃদ্ধি পায়।

দক্ষিণাঞ্চলের নদী-নালা, খাল-বিল, বিস্তৃত চিংড়ি ঘের ও সুন্দরবনের গোটা বনাঞ্চলে প্রচুর লোনা জলের কাঁকড়া পাওয়া যায়। কাঁকড়ার গড় আয়ু এক থেকে দেড় বছর।  চিংড়ি ঘেরের  ৯০ শতাংশ কাঁকড়াই  সংগ্রহ করা হয়। প্রাকৃতিকভাবে বড় হওয়া কাঁকড়ার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আহরণ করা সম্ভব।

বেসরকারি  উন্নয়ন সংস্থা  কেয়ারের তথ্য মতে, কেবল সুন্দরবন এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার জেলে কাঁকড়া ধরে সংসার চালায়। কাঁকড়া চাষিরা জানান, বছরের ডিসেম্বর  থেকে ফেব্রুয়ারি এবং জুন থেকে জুলাই হচ্ছে কাঁকড়ার প্রজনন কাল। এ সময় গভীর সমুদ্রে ও সুন্দর বনের মধ্যে ডিম থেকে কাঁকড়ার জন্ম হয়। এসব পোনা জলে ভেসে ভেসে নদ-নদী, খাল-বিল ও মাছের ঘেরে আশ্রয় নিয়ে বড় হয়।  প্রজননের সময় উপকূলীয় অঞ্চল ও সুন্দর বনের  বিস্তৃত এলাকায় জলাশয় ও তীরে প্রচুর কাঁকড়ার পোনা চোখে পড়ে।

বিভিন্ন পদ্ধতি কাঁকড়া চাষ করা যেতে পারে যেমন -

প্রথম পদ্ধতিতে ছোট ছোট পুকুরে রেখে কাঁকড়া মোটাতাজা করা হয়। 

দ্বিতীয় পদ্ধতিতে বড়বড় ঘেরে বা চৌবাচ্চায় চিংড়ির সাথে কাঁকড়ার চাষ করা হয়।

তৃতীয় পদ্ধতিতে উন্মুক্ত জলাশয়ে খাঁচায় আটকে রেখে কাঁকড়া চাষ করা হয়। খামারে কাঁকড়ার খাবার হিসেবে ছোট মাছ, কুঁচে, শামুকের মাংস দেওয়া হয়। এসব খাবার চাষিরা ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি  দরে কিনে থাকেন। মংলা এলাকার একজন চাষি জানান, প্রায় সারা বছরই কাঁকড়ার চাষ করা হয়। রপ্তানি উপযোগী প্রতিটি কাঁকড়ার গড় ওজন হয় ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম।  এসব কাঁকড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। কোনো কোনো সময় এক কেজি কাঁকড়া ৮০০ থেকে ৯০০ টাকাতেও বিক্রি করা হয়। বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কয়েক হাজার কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে। দুই থেকে আড়াই মাস বয়সের কাঁকড়া ঘেরে ছাড়ার পর ২০ থেকে ২৫ দিনেই তা বিক্রির উপযোগি হয়।

বিদেশে কাঁকড়ার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে চীন, তাইওয়ান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ও  থাইল্যান্ডে। ২০০৫-২০০৫ অর্থ বছরে শুধু পাইকগাছা থেকে ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন কাঁকড়া রপ্তানি করা হয়, যার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। ২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরে এই রপ্তানি  বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টনে। গত বছর সারা দক্ষিণাঞ্চল থেকে ৭০ কোটি টাকার কাঁকড়া রপ্তানি করা হয়েছে।

প্রতিবছরই বাড়ছে কাঁকড়া রপ্তানির পরিমাণ ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন। দেশে মোট ১৫ প্রজাতির কাঁকড়া উৎপাদিত হয়।  এর মধ্যে ১১ প্রজাতির সামুদ্রিক কাঁকড়া রয়েছে। শীলা এবং সাঁতারো কাঁকড়া বিদেশে বেশি রপ্তানি হয়। জীবন্ত ও হিমায়িত দু’ভাবেই কাঁকড়া রপ্তানি হয়।  রপ্তানিকৃত কাঁকড়ার  মধ্যে ৯২ শতাংশই যায় চীনে।  

আরও পড়ুন - Tulip Farming - টিউলিপ ফুলের চাষ করে কৃষকবন্ধুরা হয়ে উঠুন লাভবান

কাঁকড়া চাষে সম্পৃক্ত হয়ে অনেক তরুণ যুবক  নতুন আয়ের পথ খুঁজে পাচ্ছে। এতে করে বেকারত্ব কমছে। বাড়ছে কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন। ভারত ছাড়াও থাইল্যান্ড, মায়ানমার বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাঁকড়ার চাষ হচ্ছে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে অনেক পতিত জায়গা আছে। এসব জায়গায় অনায়াসে কাঁকড়ার খামার গড়ে তোলা যায়। সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণ ও ঋণের ব্যবস্থা করা হলে কাঁকড়া উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। সেইসাথে রপ্তানি আয়ও বাড়ানো সম্ভব হবে। কাঁকড়া রপ্তানিকারকগণ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। কাঁকড়া রপ্তানিতে বন বিভাগের অনাপত্তিপত্র লাগে। এই অনাপত্তি পত্র পেতে রপ্তানিকারকদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ ছাড়া কাঁকড়া আহরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং পরিবহনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয় রপ্তানিকারকদের। এসব সমস্যার সমাধান হলে সম্ভাবনাময় এই শিল্প অনেক দূর এগিয়ে যাবে, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের অর্থনীতিতে সূচিত হবে নতুন অধ্যায়।

আরও পড়ুন - Pear Fruit Farming - বিদেশি নাশপাতি ফল চাষে অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ, জেনে নিন চাষের পদ্ধতি

Published On: 27 August 2021, 07:38 PM English Summary: How to benefit from crab farming? Learn how to cultivate crabs in a modern way

Like this article?

Hey! I am স্বপ্নম সেন . Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters