পুদিনা (Mint) এক ধরনের সুগন্ধি গাছ যা সকলের পরিচিত। এই পাতা প্রাচীনকাল থেকেই বেশ জনপ্রিয় ওষুধ হিসেবে পরিচিত। এ দেশে পুদিনা চাষ হয় মূলত চাটনি, সালাদ আর বোরহানি বানানোর জন্য। এছাড়াও আরও বেশ কিছু কাজে পুদিনা পাতা ব্যবহৃত হয়। বহু রোগের আরোগ্যে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়াও এটি সাধারণত তরকারির সাথে সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাড়ির ছাদে, ব্যালকনি অথবা বারান্দাতে চাষ করতে পারেন এই পুদিনা পাতার গাছ।
আসুন জেনে নেই চাষের পদ্ধতি (Cultivation Method) -
পুদিনা পাতা চাষে টব/মাটি তৈরি:
বাড়িতে পুদিনা চাষের ক্ষেত্রে প্রথমে টবের মাটি তৈরি করতে হবে। পুদিনা পাতা দো-আঁশ মাটিতে সবচেয়ে ভাল হয়। এক্ষেত্রে মাটি তৈরির সময় গোবর ২ কেজি, দো-আঁশ মাটি ৪ কেজি হারে মেশাতে হবে। ওই মিশ্রণ থেকে প্রতিটি টব বা কন্টেইনারে ৩ থেকে ৪ কেজি মিশ্রণ স্থাপন করে পুদিনা পাতার গাছ লাগাতে হবে। গোবর বা চা-পাতা মিশ্রিত মাটি দিয়েও পুদিনা পাতার চাষ করা যায়।
পুদিনা পাতা চাষে টব/পাত্রের আকৃতি বাছাই:
ছোট টব বা পুরনো তেলের কন্টেইনার বা পুরোনো বোতল জাতীয় পাত্র এক্ষেত্রে আপনি বাছাই করতে পারেন। অথবা যেকোন ছোট পাত্র এটি লাগানোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন। বাড়ির বারান্দায় এক পাশে ঝুলিয়েও আপনি এই পুদিনা পাতার চাষ করতে পারেন।
পুদিনা পাতার জাত বাছাই করা -
পৃথিবীতে প্রায় ৬৫০ জাতের পুদিনা পাওয়া যায় যাদের অধিকাংশই প্যারিনিয়েল এবং কতিপয় একবর্ষজীবি। তবে জাপানিজ অরিজিন আর্বেনেসিস হল আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে সার্বজনীন। চাষাবাদের জন্য পুদিনার উন্নত মানের জাতসমূহ হচ্ছে পিপারমিন্ট, স্পিয়ার মিন্ট ও অ্যাপেল মিন্ট।
পুদিনা পাতা চাষ/রোপনের সঠিক সময়:
বছরের যে কোনো সময়ে পুদিনার চারা রোপন করা যায়। সাধারণত বর্ষার আগে ও পরে চারা রোপণের নিয়ম। সে অনুযায়ী জুন অথবা অক্টোবর-নভেম্বর মাসে পুদিনার চারা রোপণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
কিভাবে পুদিনা পাতার বীজ বপন ও সঠিক নিয়মে পানি সেচ দিবেন -
পুদিনা চাষের ক্ষেত্রে টবের মাটির সংগে কিছু জৈব সার অথবা গোবর ভালভাবে মিশিয়ে তাতে পানি দিয়ে ৬/৭ দিন রেখে দিতে হবে। মাটি কিছুটা শুকিয়ে এলে ঝুরঝুরা করে তাতে পুদিনা পাতার কাটিং লাগিয়ে দিতে হবে । পুদিনা গাছের তেমন কোন যত্নের দরকার হয় না, শুধু প্রয়োজন অনুসারে মাঝে মাঝে পানি দিতে হবে। এই গাছের একটি পুরানো ডাল শিকড়-সহ কেটে টবে বা কন্টেইনারে রোপন করলেই কিছুদিনের মধ্যে ওই পাত্র পুদিনা পাতার গাছে ভরে যায়।
সঠিক নিয়মে পুদিনা পাতার চাষাবাদ কৌশল:
কন্টেইনারে বা টবে লাগানো গাছগুলো প্রয়োজনে তার দিয়ে বেঁধে বারান্দায় ঝুলিয়ে রাখা যায় অথবা ছাদেও এর চাষ করা যায়। এই গাছে সূর্যের আলোর তেমন প্রয়োজন হয় না তাই ডেকোরেশন প্লান্ট হিসেবে ঘরের মধ্যেও টবে লাগানো যেতে পারে।
পুদিনা পাতার গাছে সারের পরিমাণ ও সার প্রয়োগ:
পুদিনা চাষের ক্ষেত্রে টবে বা পাত্রে পরিমাণ মত গোবর বা জৈবসার মিশিয়ে দিতে হয়। এছাড়া অন্যান্য উপাদান হিসেবে কিছু পরিমাণ হাড়ের গুঁড়া, টিএসপি সার, কাঠের ছাই অথবা এমওপি সার দিতে পারেন।
পুদিনা পাতার গাছের যত্ন ও পরিচর্যা :
পুদিনা গাছে সঠিকভাবে যত্ন নিতে হবে। মাঝে মাঝে টব গুলো বাইরে এনে সূর্যের আলো লাগাতে হবে। এবং গাছের গোড়ার মাটি গুলো আলগা করে দিতে হবে। যে পাত্রে পুদিনা লাগানো হবে সেই পাত্রের নীচে ২/৩টি ছোট ছিদ্র করে দিতে হবে যাতে করে বাড়তি পানি পড়ে যায় এবং অক্সিজেনের ঘাটতি পুরণ হয়।
পুদিনা পাতা সংগ্রহ ও ব্যবহার :
টবে চাষের ক্ষেত্রে পাতা সংগ্রহের সময় বেশ কিছু পরিমাণ পাতা সংগ্রহ করা যায়। পুদিনা পাতার গাছ থেকে পিপারমেন্ট তেল তৈরি হয়। এই তেল বেশ মূল্যবান।
পুদিনা পাতায় ৪০-৯০% মেনথল তেল পাওয়া যায়। যা বিভিন্ন পারফিউম, টুথ পেষ্ট, স্যম্পু, মিন্ট চকোলেট ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। সানট্যানের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পুদিনা পাতা বেটে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন - জানুন উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে 'মিষ্টি আলু' -র চাষাবাদের কৌশল (Sweet Potato Cultivation)
Share your comments